• সুপার নিউমেরারি: ব্রাত্যর তিরে পদ্ম-নেতা অভিজিৎ
    এই সময় | ১২ মার্চ ২০২৪
  • এই সময়: বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের সুপার নিউমেরারি পদে নিয়োগ নিয়ে রাজ্য সরকারের কাঠগড়ায় বিজেপি নেতা তথা প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।এসএলএসটি-র মেধাতালিকায় ২০১৮-১৯ সালে নাইন টু টুয়েলভের চাকরিপ্রার্থীদের একাংশের নাম থাকলেও দুর্নীতির কারণে তাঁদের নিয়োগ হয়নি বলে অভিযোগ। সমস্যা সমাধানে ২০২২-এর মে মাসে ৬,৮৬১টি সুপার নিউমেরারি পদ (এককালীন নিয়োগের জন্য) তৈরি করেছিল রাজ্য মন্ত্রিসভা। কিন্তু সেই পদে কোনও নিয়োগ হয়নি।

    এই পরিস্থিতিতে সোমবার তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের উদ্যোগে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে বৈঠকে বসেন চাকরিপ্রার্থীদের প্রতিনিধিরা। বৈঠক শেষে ব্রাত্যর বক্তব্য, বিচারপতি পদে ইস্তফার পর বিজেপি-তে যোগ দিয়ে সংবাদমাধ্যমে অভিজিৎ জানিয়েছেন, জাস্টিস থাকাকালীন তাঁর বিচারপতি-সত্তাই কাজ করেছে।

    রাজনৈতিক সত্তা নয়। কিন্তু এই কথা যে কতখানি অমূলক ও ভিত্তিহীন, তা সুপার নিউমেরারি সংক্রান্ত রায় দেখেই বোঝা যায়। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘২০২২-এর শেষাশেষি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে আবেদন জানিয়েছিল এসএসসি। এতে আদালতের কাছে কমিশন জানতে চেয়েছিল, সুপার নিউমেরারি পদ কি ভুল? তা না হলে নিয়োগ দেওয়া যায়।’

    বিচারপতি ওই পোস্টকে ‘ভ্রান্ত’ বললে তাতে নিয়োগ বাতিলে রাজি বলেও জানায় এসএসসি। র‍্যাঙ্কে গোলমালের ফলে যাঁরা বঞ্চিত হয়েছেন, যোগ্যতার নিরিখে তাঁদের নিয়োগের ব্যাপারে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দেবেন কি না, তা-ও জানতে চেয়েছিল এসএসসি।

    কিন্তু বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সেই আবেদন কার্যত ডাস্টবিনে ফেলে দেন বলে শিক্ষামন্ত্রীর অভিযোগ। ওই আবেদন এসএসসি-র নয়, অন্য কারও মস্তিষ্কপ্রসূত বলে মতপ্রকাশ করেন তৎকালীন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।

    এসএসসি-র চেয়ারম্যান আদালতে দাঁড়িয়ে অবশ্য জানান, ওই ক্যান কমিশনেরই তৈরি। আইনি পথে ও যোগ্যতার নিরিখে যোগ্যদের চাকরি দেওয়ার সদিচ্ছা নিয়েই যে তাঁরা আদালতে গিয়েছেন, সে কথাও জানায় কমিশন।

    এই প্রেক্ষাপটে ব্রাত্যর প্রশ্ন — ‘আদালতের কাছে জানতে চাই, ওই রায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল কি না!’ ব্রাত্যর পাশে বসা কুণালের বক্তব্য, ‘বাম জমানায় নিয়োগ প্যানেলে এমন ভূরি ভূরি অনিয়ম ছিল। দলদাস ছাড়া কেউ চাকরি পাননি। বিজেপি-র রাজ্যগুলোয় দুনিয়ার অনিয়ম হয়ে চলেছে। কোথাও কোনও ভুল থাকলে জট খোলার এই উদ্যোগ, ভুল হলেও সংশোধনের চেষ্টা কোথাও হয়নি। শিক্ষামন্ত্রী নিজে ছুটছেন এজির কাছে।’

    ব্রাত্যর অভিযোগ, রাজনৈতিক কেরিয়ার বানাতে অভিজিৎ বিজেপি-তে চলে গিয়েছেন। আর চাকরিপ্রার্থীরা জল-ঝড়ে রাস্তাঘাটে পড়ে আছেন। সামাজিক ভাবে তৃণমূলকে বদনাম করাই তাঁর লক্ষ্য বলে আক্রমণ শানান শিক্ষামন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘শেষ পর্যন্ত দেখা গেল, বিজেপি নেতা ওঁদের বলছেন, তোমরা আন্দোলনকারী নও। তোমরা দালাল।’

    এ পর্যন্ত বলে অভিজিতের দেওয়া রায়গুলির প্রসঙ্গ টেনে ব্রাত্যর প্রশ্ন, ‘জানতে চাইছি, এটা কী ধরনের আইন? কোন ধরনের রায়? কী ধরনের বিচার? আপনি সমাধান না করে মেয়াদ ফুরোনোর আগেই চলে গেলেন ভোটে লড়তে! গণতন্ত্রে সে অধিকার সবার আছে। কিন্তু ছেলেমেয়েগুলোর কী হবে?’

    এ দিন প্রতিক্রিয়া জানতে চেষ্টা করেও অভিজিতের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে সংবাদমাধ্যমে ক’দিন আগেই তিনি জানিয়েছেন, বিচারপতি হিসেবে তাঁর কাছে স্কুলশিক্ষার নিয়োগ মামলা ছিল না। আদালতের নিয়ম মেনে তাঁর ডিটারমিনেশন বদলে গিয়েছিল। তবে কিছু মামলা তিনি ‘পার্ট হার্ড’ করে রেখেছিলেন।
  • Link to this news (এই সময়)