CAA Rules: CAA সত্ত্বেও বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, পাকিস্তানের মুসলিমরা ভারতের নাগরিকত্ব পাবেন? জানুন আইন
এই সময় | ১২ মার্চ ২০২৪
সোমবার থেকে দেশে কার্যকর হয়েছে নাগরিকত্ব সংশোধিত আইন তথা সিএএ। এই আইনের আওতায় তিন প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, বাংলাদে ও আফগানিস্তানের অ-মুসলিম শরণার্থীদের (হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি, খ্রিস্টান) ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ পরিষ্কার হল এই আইন কার্যকর হওয়ায়। তবে মুসলিম সম্প্রদায়কে এর আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। অনেকই তাই এই আইনকে 'বৈষম্যমূলক' বলছেন। যদিও সরকারের যুক্তি এই তিন প্রতিবেশী দেশেই মুসলিম সম্প্রদায় সংখ্যাগরিষ্ঠ। সিএএ-এর আওতায় আনা ছয় অ-মুসলিম সম্প্রদায়কে সংখ্য়ালঘু বলে বিচার করেছে কেন্দ্র। কেন্দ্রের যুক্তি, ওই দেশগুলিতে সংখ্য়ালঘু অ-মুসলিমরা ধর্মীয় উৎপীড়নের শিকার হয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তবে এই আইনে প্রতিবেশী তিন দেশ থেকে আগত মুসলমানদের ভারতে নাগরিকত্ব দেওয়ার একেবারেই কোনও বিধান নেই তা কিন্তু নয়। এজন্য প্রয়োজনীয় শর্ত ও নিয়ম অনুসরণ করা প্রয়োজন। জেনে নেওয়া যায় ভারতী নাগরিকত্ব সংক্রান্ত নিয়ম কী বলছে?'যোগ্যতা পূরণের পর আপনি নাগরিকত্ব পাবেন'
যদিও তিনটি প্রতিবেশী দেশ থেকে আগত মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ CAA-এর অধীনে ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারেন না তবে তাঁরা পুরনো আইনে অধীনে সেই দাবি করতে পারেন। ভারতীয় নাগরিকত্ব পেতে পুরনো আইনের সাহায্য নিতে হবে বিদেশি নাগরিকদের। পুরনো আইনের সাহায্যে ২০১৬ সালে ভারতীয় নাগরিকত্ব পেয়েছিলেন গায়ক আদনান সামি। ২০১৯ সালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক জানিয়েছিল, পাকিস্তান আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশের প্রায় ৪০০০ মানুষকে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে। এর মধ্য়ে শতাধিক মুসলিমও রয়েছে। বলেছে যে এই ধরনের শরণার্থীরা যাঁরা যোগ্যতা পূরণ করবে তারা ভারতীয় নাগরিকত্ব পেতে পারেন। সিএএ বিদেশের কোনও ধর্মীয় সম্প্রদায়কে টার্গেট করে না।
বিদেশি মুসলিমরা কীভাবে ভারতীয় নাগরিকত্ব পেতে পারে?
ভারতীয় নাগরিকত্ব অর্জনের জন্য নাগরিকত্ব আইন ১৯৫৫-এ আইনি বিধান করা হয়েছে। এই অনুসারে, যে কোনও ব্যক্তি যিনি ১২ বছর ধরে ভারতে বসবাস করছেন এবং আবেদন করার আগে এক বছর ধরে টানা ভারতে বসবাস করেছেন, এর বাইরে তিনি মোট ১১ বছর ভারতে কাটিয়েছেন, তিনি ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার যোগ্য বলে দাবি করতে পারেন। এছাড়াও, তাকে নাগরিকত্ব আইনের তৃতীয় তফসিলে নির্ধারিত যোগ্যতা পূরণ করতে হবে। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সংসদে বলেছিলেন, পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তানের মুসলমানরাও আগের আইন অনুযায়ী ভারতীয় নাগরিকত্ব অর্জনের জন্য আবেদন করতে পারেন। শাহ বলেছিলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, প্রায় ৫৬৬ মুসলমানকে এই পদ্ধতিতে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে।
ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য অন্যান্য বিধান কী কী?
-যাঁরা ২৬ জানুয়ারি ১৯৫০ বা তারপর এবং ১ জুলাই ১৯৮৭-এর আগে ভারতে জন্মেছেন তাঁদের ভারতীয় নাগরিক বলা হবে। তাঁদের বাবা-বা কোথায় জন্মেছিলেন বা তাঁরা কোথাকার নাগরিক সেই বিষয়টি বিবেচনা করা হবে না।
-১ জুলাই ১৯৮৭ এবং ২ ডিসেম্বর ২০০৪ সালের মধ্যে ভারতে জন্মগ্রহণকারী একজন ব্যক্তি, যাঁর জন্মের সময় বাবা-মা ভারতীয় নাগরিক, তাকে ভারতীয় নাগরিক বলা হবে।
-২০০৪ সালের ৩ ডিসেম্বর-এর পরে ভারতে জন্মগ্রহণকারী যে কোনও ব্যক্তি, যার বাবা-মা উভয়ই ভারতীয় নাগরিক বা অন্তত একজন ভারতীয় নাগরিক এবং অন্যজন অবৈধ অনুপ্রবেশকারী নয়, তাকে ভারতীয় নাগরিক বলা হবে।
-রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমেও ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়া যাবে। ভারতীয় বংশোদ্ভূত একজন ব্যক্তি যিনি কমপক্ষে সাত বছর ধরে এখানে বসবাস করছেন তাঁরা নিবন্ধনের মাধ্যমে নাগরিকত্ব পেতে পারেন।
বিদেশি নাগরিকরা পর্যটক এবং ধর্মীয় ভিসায় ভারতে আসেন পাকিস্তান বা অন্য়ান্য দেশ থেকে বেশিরভাগ অ-মুসলিম নাগরিক ধর্মীয় বা পর্যটন ভিসায় ভারতে আসেন এবং এখানে থাকেন। তাঁরাও নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারেন তবে কোনও কারণে নাগরিকত্ব না মিললে তাঁরা আটকে পড়তে পারেন। ভিসা ও পাসপোর্টে মেয়াদ শেষ হলেও তাঁরা দেশে ফিরতে পারছেন না। এখানে ভারতীয় নাগরিকত্ব না থাকার কারণে তাঁরা এখানে পাওয়া সুযোগ-সুবিধাগুলির অধিকারও পান না।
এখন পর্যন্ত ৯টি রাজ্যের কালেক্টররা অধিকার পেয়েছিলেন
২০০৪ সালে, কেন্দ্রীয় সরকার ১৯৬৫ এবং ১৯৭১ সালের যুদ্ধে বাস্তুচ্যুত হিন্দু বা পাঁচ বছর আগে পাকিস্তান থেকে আসা সেই হিন্দু শরণার্থীদের বিষয়ে গুজরাট ও রাজস্থানের ছয় সংগ্রাহক এবং গুজরাট সরকারকে নাগরিকত্ব দেওয়ার ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিল। গত দুই বছরে, নয়টি রাজ্যের ৩০টিরও বেশি সংগ্রাহক এবং স্বরাষ্ট্র সচিবকে নাগরিকত্ব আইন ১৯৫৫-এর অধীনে তিনটি দেশ থেকে আসা ছয়টি অ-মুসলিম সম্প্রদায়কে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মতে, ১ এপ্রিল, ২০২১ থেকে ৩১ ডিসেম্বর, ২০২১ পর্যন্ত, তিনটি দেশের ১৪১৪ জন অমুসলিমকে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে।
সিএএ-এর অধীনে ভারতীয় নাগরিকত্ব কে পাবে? সরকার বলেছে যে তিনটি প্রতিবেশী দেশে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়। তাঁরা ভারতীয় নাগরিকত্ব অর্জন করতে পারবেন যদি তারা ইতিমধ্যেই নিবন্ধন বা স্বাভাবিকীকরণের জন্য আইনে প্রদত্ত যোগ্যতা শর্ত পূরণ করে। CAA অনুসারে, হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোক যারা ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৪-এর আগে পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান থেকে এসেছেন তাদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। এর আগে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশকারীদের নাগরিকত্ব দেওয়া হতো না। তাদের দেশে ফেরত পাঠানো বা হেফাজতে রাখার ব্যবস্থা ছিল।
'৪.৬১ লাখ তামিলকে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে'
ভারতের সংবিধানের ৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে একজন ব্যক্তি যিনি ১৯ জুলাই ১৯৪৮ সালের আগে পাকিস্তান থেকে ভারতে এসেছেন তিনি ভারতীয় নাগরিক হিসাবে বিবেচিত হবেন। দ্বিতীয়ত, এই তারিখে বা তারপরে তিনি ভারতে আসলেও, এখানে মাত্র ছয় মাস থাকার পর তিনি ভারতীয় নাগরিক হিসাবে নিবন্ধিত হন। ১৯৬৪ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ভারতীয় বংশোদ্ভূত ৪.৬১ লাখ তামিলকে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে প্রায় ৯৫,০০০ শ্রীলঙ্কার উদ্বাস্তু তামিলনাড়ুতে বসবাস করছে। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার তাদের রেশন, অনুদান এবং অন্যান্য সুবিধা দিচ্ছে।
মুসলমানদের বিরোধিতার কারণ
বিরোধীরা বলছেন, এতে মুসলিম সম্প্রদায়কে টার্গেট করা হচ্ছে। তাদের ইচ্ছাকৃতভাবে অবৈধ ঘোষণা করা হতে পারে। যেখানে বাকিরা বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই জায়গা পেতে পারে। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরোধিতার এই বিষয়টি সবচেয়ে বড় কারণ। বিরোধীরা এই আইনকে মুসলিমবিরোধী বলছেন। তাঁদের যুক্তি, নাগরিকত্ব যখন দিতে হবে, তাহলে ধর্মের ভিত্তিতে কেন দেওয়া হচ্ছে? কেন মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে না? এবিষয়ে সরকারের যুক্তি হচ্ছে, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান ইসলামিক দেশ এবং এখানে ধর্মের ভিত্তিতে অ-মুসলিমরা নির্যাতিত হয়। এ কারণে অমুসলিমরা এখান থেকে ভারতে পালিয়ে এসেছে। তাই শুধু অ-মুসলিমদেরই এই আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।