Ramadan 2024: সৌভাতৃত্বে জোর! মুসলিম না হয়েও রোজা রেখেছেন যাঁরা
এই সময় | ১৩ মার্চ ২০২৪
ইসলাম ধর্মের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম রোজা। রমজান মাসে সুবেহ সাদিকের পূর্ব থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত জলগ্রহণ না করা সহ ইসলামি বিধান মতে রোজা রাখা মুসলমানদের জন্য অবশ্য কর্তব্য। কিন্তু মুসলিম না হয়েও যখন কেউ রোজা রাখেন, তখন সেটা নিয়ে কৌতূহল তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। প্রশ্ন আসবে, যারা মুসলিম নন তাঁরা কেন রোজা রাখবেন? এ প্রশ্নের সঠিক উত্তর পাওয়া কঠিন। তবে অ-মুসলিম হয়েও যাঁরা মুসলমানদের মতোই রোজা রাখেন তাঁদের অভিজ্ঞতার বয়ান থেকেই কিছুটা উপলব্ধি আসতে পারে।কারা কারা মুসলিম না হয়েও রোজা রেখেছেন? কিছু উদাহরণ
রেহান জয়াবিকর্মে শ্রীলঙ্কার তরুণ রাজনীতিবিদ। তিনি বৌদ্ধ ধর্মাম্বলম্বী। ২০২১ সালে তিনি ঘোষণা করেছিলেন বৌদ্ধ ধর্মাম্বলম্বী হওয়া সত্ত্বেও তিনি প্রথমবার রোজা রাখার জন্য অপেক্ষা করছেন। ওই বছর প্রথমবার রোজা রেখেছিলেন রেহান। বৌদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও মুসলিমদের সঙ্গে পবিত্র রমজান মাসে রোজার রাখার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন তিনি। রেহানই যে অমুসলিম হিসেবে রমজান পালন যে তিনিই প্রথম করছেন তা মোটেও নয়।
শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বো থাকেন ম্যারিয়ান ডেভিড - যিনি পেশায় একজন সাংবাদিক। তিনি ক্যাথলিক খ্রিস্টান হওয়া সত্ত্বেও রমজানের রোজা রাখেন।
অন্যদিকে শ্রীলঙ্কার আর এক রাজনীতিক অনুরাধা কে হেরাথও অ-মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও একবার রোজা রেখিছিলেন বলে জানিয়েছিলেন।
অন্য়দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা নাদিন পার। তিনি অ-মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও রমজান পালন করে। পেশায় নাদিন লেখক, ব্যবসা প্রশিক্ষক ও স্কুল শিক্ষক। মিশিগান অঙ্গরাজ্যের গ্র্য়ান্ড র্যাপিডসে থাকেন তিনি।
শ্রীলঙ্কার জনগোষ্ঠীর ৭০ শতাংশই বৌদ্ধ। বাকিরা হিন্দু, মুসলিম ও ক্যাথলিক খ্রিস্টান।
রেহানের কথায়, শ্রীলঙ্কায় অ-মুসলিমরাই সংখ্যাগুরু। তাঁর রোজা রাখার উদ্দেশ্য হল সংখ্যাগরিষ্ঠ হিসেবে সংখ্যালঘুদের প্রতি তাঁদের মমত্ববোধ রয়েছে। অন্যদিকে সাংবাদিক ডেভিডের যুক্তি, এ সময়টাকে তিনি ব্যবহার করেন তার মনসংযোগ এবং সত্যিকারের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো নিয়ে ভাবার জন্য। তাঁর মতে, রোজা রাখা মনঃসংযোগকে বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। সারাক্ষণ 'খাই খাই' মনোভাব দূর হয়। নিজেকে অনেক বেশি 'ফিট'-ও মনে হয়। তাঁর মতে, উপবাসের পাশাপাশি গরিব-দুস্থদের দান করা, খাওয়ানো ও তাঁদেরও রোজা রাখতে সাহায্য় করা সমানভাবে প্রয়োজনীয়।
অন্য়দিকে নাদিনের মতে, বিভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতির বন্ধুদের সাথে সেতুবন্ধনের সামিল রোজা রাখা। নাদিনের মতে মানবতা সবক্ষেত্রেই সমান। তাঁর মতে, রোজা রাখা মুসলিম বন্ধুদের সাথে সংহতি প্রকাশের একটা উপায়। ইচ্ছাকৃত শারীরিক সংযমের ফলে একটা আধ্যাত্মিক সত্য উপলব্ধি হতে পারে - এই ভাবনা থেকেই বছরের এই নির্দিষ্ট সময় অ-মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও রোজা রাখেন তিনি।
এছাড়াও ২০১৮ সালের ২৮ মে দ্য সিয়াশাত ডেইলির প্রকাশিত একটি খবরের শিরোনাম ছিল, 'কারাগারে রোজা রাখছেন হিন্দু বন্দিরা'। খবরের বিবরণে বলা হয়, তিহার কারাগারে বন্দি মুসলিমদের সঙ্গে রোজা রাখছেন হিন্দু বন্দিরা। দিল্লির এই কারাগারে আটক ২ হাজার ৯৯৯ জন মুসলিম বন্দি রোজা পালন করেন। ৫৯ জন হিন্দু বন্দিও রোজা রাখেন। কারও বিশ্বাস ছিল রোজা পালনের মাধ্য়মে শীঘ্রই মুক্তি মিলবে কারাগার থেকে। কেউ আবার নিজের ছেলের কল্যাণে রোজা রেখেছিলেন বলে জানিয়েছিলেন। সৌদি আরবে বহু অ-মুসলিম রমজানে রোজা পালন করেন। এছাড়াও একাধিক উদাহরণ রয়েছে যাঁরা অ-মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও রোজা রেখেছেন বিভিন্ন বিশ্বাসে কখনও আবার ভাতৃত্বের বার্তা দেওয়ার জন্য।