এই সময়: সদ্য আলাপ হওয়া ছেলেটির থেকে একটা মেসেজ যে আসবে, সে বিষয়ে এক রকম নিশ্চিত ছিল ক্লাস টেনের মেয়েটি। কিন্তু ওই মেসেজের সঙ্গে যে একটা সারপ্রাইজ় এলিমেন্ট থাকবে, তা একেবারেই আশা করেনি সে। প্রথম মেসেজেই লেখা ছিল, ‘লুকিয়ে তোমার কয়েকটা ছবি তুলেছি। নীচের লিঙ্কে ক্লিক করলেই সেগুলো দেখতে পাবে।’এই কৌতূহল চেপে রাখা অসম্ভব। তাই লিঙ্কে ক্লিক করতে দেরি করেনি কিশোরী। প্রত্যাশা নিয়ে ক্লিক করলেও কোনও ছবিই দেখা যায়নি। ওপাশের ছেলেটিও গোল গোল একটা জবাব দিয়ে কাটিয়ে গিয়েছিল। তবে লিঙ্কে ক্লিক করার সঙ্গে সঙ্গেই নির্দিষ্ট কয়েকজনের কাছে পৌঁছে গিয়েছিল ওই কিশোরীর বাড়ির অনেক তথ্যই।
পুরোনো প্রবাদ অনুযায়ী, ঘরের ঢেঁকিও নাকি মাঝে মধ্যে কুমির হয়ে ওঠে। এরই বর্তমান উদাহরণ সম্ভবত মোবাইল ফোন। দিনের বেশির ভাগ সময়ে তাদের মুঠোয় বন্দি থাকা মোবাইল ফোনটা কী ভাবে বহু দূরে বসে থাকা হ্যাকারদের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হয়ে সর্বনাশ করতে পারে হাতে-কলমে সেটাই শিখল সুবর্ণা দাস, প্রিয়া চন্দ্র, স্বস্তিকা দত্ত, শ্রীপর্ণা সাহার মতো ৬৫ জন ছাত্রী।
সোম ও মঙ্গলবার দু’দিন ধরে আমেরিকান সেন্টারের উদ্যোগে বিশেষ এক কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছিল বাংলা মাধ্যমের ছাত্রীদের জন্য। অতীতে এখানে স্কুলপড়ুয়াদের নিয়ে বহু সেমিনারের আয়োজন করা হলেও এই প্রথম বাংলা মাধ্যমের পড়ুয়াদের কথা মনে করে এমন কর্মশালার ব্যবস্থা করা হয়। সেখানেই সাইবার ক্রাইমের অন্ধকার দুনিয়ার সঙ্গে পরিচয় হলো বালিয়া নফরচন্দ্র বালিকা বিদ্যালয় এবং কামরাবাদ গার্লস হাইস্কুল থেকে আসা ছাত্রীদের।
আমেরিকান সেন্টার এবং জনকল্যাণকর সংস্থা চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের মিলিত উদ্যোগের এই কর্মশালার মূল উদ্দেশ্য ছিল স্কুলের মেয়েদের বুঝিয়ে দেওয়া, কী ভাবে অতি সহজেই তাদের নিত্যদিনের জীবনচর্চা সম্পর্কে সব রকম তথ্য জেনে ফেলতে পারে হ্যাকাররা। যদি এমন ঘটনা নিতান্তই ঘটে যায়, তা হলে ঘাবড়ে না গিয়ে তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হওয়া উচিত, সেই বিষয়েও সবিস্তারে পরামর্শ দেওয়া হয়।
এই দু’দিনের কর্মশালা প্রসঙ্গে আমেরিকান সেন্টারের ডিরেক্টর এলিজ়াবেথ লি বলছেন, ‘সাইবার সিকিউরিটি এই মুহূর্তে সারা দুনিয়ায় আলোচনার বিষয়। এখানে যে কর্মশালার ব্যবস্থা করা হয়েছিল তাতে স্কুলের মেয়েরা সরাসরি বিশেষজ্ঞদের থেকেই গোটা বিষয়টা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেল।’
অন্য দিকে চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের পক্ষ থেকে ডিরেক্টর ঝুম্পা ঘোষ বলেন, ‘আমরা মেয়েদের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি ওরা সারা দিনে ৫-৬ ঘণ্টারও বেশি মোবাইল ব্যবহার করে। কেউ কেউ আবার জানিয়েছে দিনের ডেটা প্যাক শেষ না হওয়া পর্যন্ত অথবা মোবাইলের চার্জ নিঃশেষ হওয়া পর্যন্ত তারা ফোন ঘাঁটতে থাকে। সুতরাং ওরা যে কতটা বিপদের মুখে রয়েছে সেটা এখান থেকেই স্পষ্ট।’