• Plastic Pollution: সমুদ্রে প্লাস্টিকের প্লাবন, সতর্ক করছে কোস্ট গার্ড
    এই সময় | ১৩ মার্চ ২০২৪
  • সুপ্রকাশ মণ্ডলদেশের জলসীমার নিরাপত্তা সুরক্ষা থেকে শুরু করে চোরাচালান রোখা, এমনকী মৎস্যজীবীদের নিরাপত্তার দায়িত্বও তাদের। কিন্তু সেই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পদে পদে বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে ইন্ডিয়ান কোস্টগার্ড বা উপকূলরক্ষী বাহিনীকে। কারণ একটাই— প্লাস্টিক। নানা কাজের সঙ্গে কালেভদ্রে প্লাস্টিকও সাফ করতে হচ্ছে তাদের। বাহিনীর কর্তারা বলছেন, সমুদ্রে বিপদ তো পদে পদে, কিন্তু প্লাস্টিক যেভাবে বাড়ছে, তাতে অচিরে এটাই ভিলেন হয়ে উঠবে। ফলে তাদের ঝঞ্ঝাট যে বাড়বে তা ঠিক। কিন্তু তার থেকেও বেশি বিপদ বাড়বে পরিবেশের এবং জলজ প্রাণীদের।

    কোস্ট গার্ডের উত্তর-পূর্ব রিজিয়নের আইজি, কম্যান্ডার ইকবাল সিং চৌহান সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে জানান, দীর্ঘদিন ধরেই তাঁরা লক্ষ্য করছেন যে, সমুদ্রে প্লাস্টিক বাড়ছে। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে যে ভাবে টন টন প্লাস্টিক সমুদ্রে জমা হচ্ছে, তাকে আর কোনও ভাবেই খাটো করে দেখা যাচ্ছে না। এটা আমাদের কাজে বাধা তৈরি করছে, সমুদ্রের জীববৈচিত্রের বিপদও বাড়ছে।’ কোস্ট গার্ডের কর্তারা জানাচ্ছেন, অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে অন্য সব বাদ দিয়ে প্লাস্টিক সাফ করাকেই তাদের প্রাধান্য দিতে হবে কি না, সেই প্রশ্ন ওঠাও শুরু হয়েছে।

    তবে বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, সমুদ্রে কোনও পরিকল্পনা ছাড়া প্লাস্টিক সাফ সম্ভব নয়। কারণ হলো প্লাস্টিকের পরিমাণ। ফি বছর বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়ছে আনুমানিক ২৬ লাখ ৩৭ হাজার ১৭৯ টন প্লাস্টিক। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ‘এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন’ (এসডো)-এর ‘দ্য ট্র্যাজিক টেলস অব আওয়ার রিভারস: প্রসপেক্ট টু প্রবলেম’ শীর্ষক এক সাম্প্রতিক গবেষণা প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। এর জন্য পাকাপোক্ত ব্যবস্থা দরকার। ভারত-বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের নদীগুলি প্রতিদিন প্রায় ১৫ হাজার ৩৪৫ টন সিঙ্গল ইউজ়ড প্লাস্টিক বর্জ্য বহন করে সমুদ্রে ফেলছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৫১৯ টন ভারত ও ২৮৪ টন মিয়ানমার এবং বাকি পরিমাণ বাংলাদেশ থেকে যাচ্ছে।

    সিঙ্গল ইউজড প্লাস্টিকের পরিমাণ বের করতে পদ্মা, মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র, নাফ-সহ ১৭টি আন্ত-সীমান্ত নদী ও বঙ্গোপসাগরের ২৬টি পয়েন্ট থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়। ২০২২ সালের অগস্টে গবেষণাপত্রটি প্রকাশ করা হয়। তাতে বলা হয়, বাংলাদেশের আন্ত সীমান্ত নদীগুলো প্রতিদিন প্রায় ১৫ হাজার ৩৪৫ টন একবার ব্যবহৃত প্লাস্টিক বর্জ্য বহন করে। এর মধ্যে ২ হাজার ৮০২ টন ভারত ও মিয়ানমার থেকে আসে।

    তাঁদের অনুমান, ২৬ লাখ ৩৭ হাজার ১৭৯ টন প্লাস্টিক বর্জ্য প্রতি বছর বঙ্গোপসাগরে প্রবেশ করে। সিঙ্গল ইউজ়ড ছাড়াও কয়েক লক্ষ টন প্লাস্টিক প্রতি দিন বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়ছে। এর মধ্যে রয়েছে মোট ৩০০ ধরনের প্লাস্টিক। কোস্ট গার্ডের প্রস্তাব, যে সব নির্দিষ্ট জায়গা থেকে প্লাস্টিক নদীতে কিংবা সরাসরি সমুদ্রে মিশছে, সেই পয়েন্টগুলিতে বিশেষ ছাঁকনির ব্যবস্থা করা।

    উদাহরণ হিসেবে ইকবাল সিং চৌহান সাম্প্রতিক গঙ্গাসাগার মেলার উদাহরণ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এবার গঙ্গাসাগর মেলার জন্য সমুদ্রে বিশেষ ধরনের জাল ব্যবহার করা হয়েছিল। তাতে সব প্লাস্টিক আটকে গিয়েছিল। ফলে সহজেই সেগুলিকে তুলে ফেলা গিয়েছে। বাকি জায়গাগুলিতে তেমন কিছুই ভাবা হোক।’ উল্লেখ্য প্রশান্ত মহাসাগরের কিছু এলাকা এভাবেই জাল দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে। তার সুফলও মিলছে।
  • Link to this news (এই সময়)