নির্বাচনী বন্ড নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া নির্বাচন কমিশনের কাছে তথ্য জমা করেছে। প্রশ্ন হল এই নির্বাচনী বন্ড কী? রাজনৈতিক দলগুলির অর্থ তহবিলের অন্যতম উৎসব এই বন্ড। কিন্তু এই বন্ড নিয়ে এত বিতর্কের কারণ কী? আগে জানতে হবে নির্বাচনী বন্ড কী?নির্বাচনী বন্ড কী?
নির্বাচনী বন্ড নগদের মতো 'বিয়ারার' অর্থ। সেই কারণে বন্ডের মালিকানা বিষয়ক কোনও তথ্য রাখা হয় না। যার কাছে বন্ড থাকে মালিকা তার হয়। এক হাজার, দশ হাজার, এক লাখ, ১০- লাখ, ১ কোটি টাকার বন্ড কিতে পাওয়া যায়। স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার কিছু নির্দিষ্ট শাখায় বিক্রি হয় এই বন্ড।কোনও ব্যক্তি বা সংস্থা বা কর্পোরেট কোম্পানি বন্ড কিনে পছন্দ মতো কোনও রাজনৈতিক দলকে দান করতে পারে। ব্যাঙ্কে থাকা অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বন্ড ভাঙানো যায়। নিয়ম অনুযায়ী বন্ড কেনার পর থেকে ১৫ দিনের মধ্যে কোও রাজনৈতিক দলকে দান করতে পারে। এই বন্ড কেনার আগে কেওয়াইসি পূরণ করতে হত। ২০ হাজার টাকার বেশি নগদে কোনও দলকে দান করল তাঁর নাম প্রকাশ করা আবশ্যিক হলেও, পরিমাণে যাই হোক নির্বাচনী বন্ডের ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা নেই কোনও।২০১৮ সালের জানুয়রি মাসে অর্থমন্ত্রক নির্বাচনী বন্ড নিয়ে আসে। রাজনৈতিক তহবিলকে স্বচ্ছ করার লক্ষ্যেই আনা হয়েছিল নির্বাচনী বন্ড। রাজনীতিকে কালো টাকার প্রভাবমুক্ত করার উদ্দেশ্য ছিল এই বন্ডের। নির্বাচনী বন্ডে মেলে না কোনও সুদ। যে কোনও ভারতীয় নাগরিকই এই নির্বাচনী বন্ড কিতনতে পারেন। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে কেটে নেওয়া হয় টাকা। ফলে কে কিনেছেন তাঁর নাম থাকে না। নির্বাচনী বন্ড প্রতি বছর জানুয়ারি, এপ্রিল, জুলাই ও অক্টোবর মাসের ১০ দিনের জন্য ছাড়া হয়। তবে লোকসভা ভোটের বছরে এক মাসের জন্য কিনতে পাওয়া যায় নির্বাচনী বন্ড।
বিতর্ক কেন?
বন্ড নিয়ে বিতর্কের মূল কারণ হল ক্রেতার নাম গোপন থাকা। দাতার নাম-পরিচয় প্রকাশ্যে ও নির্বাচন কমিশনের সামনেও জানানো যায় না।প্রথমত, যদিও কোনও নাগরিক বা কর্পোরেট ইলেক্টোরাল বন্ড কিনতে পারে কিন্তু তথ্য অনুসারে এখনও পর্যন্ত যত ইলেক্টোরাল বন্ড বিক্রি হয়েছে তার মধ্য়ে ১ লাখ ১ কোটি মূল্যের ৯৯ শতাংশই কিনেছে কর্পোরেটরা।নির্বাচনী বন্ড বিক্রির একমাত্র অধিকারী স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। যেহেতু স্টেট ব্য়াঙ্ক অফ ইন্ডিয়া বর্তমানে শাসকদলের পরিধির মধ্যে, সেক্ষেত্রে কোনও সংস্থা বা ব্যক্তি নির্বাচনী বন্ড কিনেছে তা ক্ষমতাসীন শাসকরে পক্ষে জানা সহজ। এক্ষেত্রে বিরোধী রাজনৈতিক কোনও দলকে কেউ নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে অনুদান দিলে ক্ষমতাসীন সরকারের পক্ষে সেই ব্যক্তি বা সংস্থাকে প্রভাবিত করতে পারে।সংশোধনীর মাধ্যমে বিদেশি কর্পোরেটদের জন্য নির্বাচনী বন্ডের দরজা খুলে দেওয়া হয়েছিল। নির্বাচনী বন্ডের সমালোচকদের বক্তব্য অনুসারে, এর ফলে বিভিন্ন বিদেশি সংস্থা প্রভাব খাটাতে পারে দেশের সরকার পরিচালনায়।