সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে ব্যারাকপুরের বর্তমান সাংসদ অর্জুন সিংয়ের বিজেপিতে যোগ দেওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা। জোড়াফুলের পাট চুকিয়ে ফের গেরুয়া শিবিরে ফেরার তোড়জোড় শুরু করেছেন অর্জুন। মঙ্গলবার সকালেই নিজের দপ্তর থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি নামিয়ে নরেন্দ্র মোদীর ছবি টাঙিয়ে ফেলেছেন তিনি।কিন্তু ফুলবদলের প্লট তৈরি থাকলেও নিজের খাস তালুক ব্যারাকপুরে এবার গেরুয়া শিবিরের মধ্যেই চাপের মুখে পড়তে পারেন অর্জুন। তাঁকে দলে ফেরানোর বিষয়টিকে ভালো চোখে দেখছেন না স্থানীয় স্তরের বিজেপি নেতারা। অর্জুনকে বিজেপিতে নেওয়া হলে তাঁর পাশাপাশি দলের প্রতি মানুষের বিশ্বাসযোগ্যতা কমবে বলে আশঙ্কা স্থানীয় বিজেপি নেতাদের।
এ দিন আক্ষেপের সুরে অর্জুন বলেন, ‘ছেলে (ভাটপাড়ার বিজেপি বিধায়ক পবন সিং) আমাকে তৃণমূলে যেতে নিষেধ করেছিল। আমি শুনিনি। ও বলেছিল আমাকে টিকিট দেওয়া হবে না। সেটাই সত্যি হলো।’ বাবার মন্তব্যের প্রেক্ষিতে পবন বলেন, ‘দেরিতে হলেও তৃণমূল সম্পর্কে মোহভঙ্গ হয়েছে জেনে খুব ভাল লাগছে।’
এবার কি তবে ২০১৯-এর মার্চের পুনরাবৃত্তিই দেখতে চলেছে ব্যারাকপুর? অর্জুন বলেন, ‘বিজেপিতে আমার সবাই বন্ধুবান্ধব।’ তবে অর্জুনের এই বন্ধুত্বের বার্তায় মন গলছে না ব্যারাকপুরের বিজেপি নেতৃত্বের। বিজেপির ব্যারাকপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি মনোজ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘প্রার্থী নয়, পদ্মফুলের প্রতীক দেখেই ভোট হবে। তবে আমরা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে আমাদের সিদ্ধান্তের কথা দলের উপরতলার নেতৃত্ব কে জানিয়েছি।’
তবে কী সেই সিদ্ধান্ত তা তিনি পরিষ্কার করে না বললেও এক প্রকার বুঝিয়েই দিয়েছেন গোটা বিষয়টি তাঁরা খুব একটা ভালো চোখে দেখছেন না। প্রাক্তন সভাপতি সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘গতবারও উনি টিকিট না পেয়ে বিজেপিতে এসে প্রার্থী হয়ে জিতে আবার তৃণমূলে চলে গিয়েছিলেন। তবে সবটাই দলীয় নেতৃত্ব ঠিক করবে।’
বিজেপির রাজ্য মহিলা মোর্চার সভানেত্রী ফাল্গুনী পাত্র এক ধাপ এগিয়ে বলেন, ‘যারা নিজের সুবিধার জন্য একদল থেকে আর এক দলে যাওয়া আসার রাজনীতি করেন তাদের ফেরালে নিচুতলার কর্মীদের মনে আঘাত লাগে এবং সেটা যদি প্রকাশ্যে চলে আসে তাহলে মানুষও সেটা ভালোভাবে নেন না। তবে দলকে ভরসা করি।’
স্বাভাবিক ভাবেই অর্জুন যদি বিজেপিতে যোগ দেন সে ক্ষেত্রে স্থানীয় স্তরে দলের ক্ষোভ মেটাতে তিনি কতটা পারবেন সে দিকে নজর রয়েছে দুই শিবিরেই। এ দিন নৈহাটি বড়মার মন্দিরে পুজো দেন সেচমন্ত্রী তথা ব্যারাকপুরের তৃণমূল প্রার্থী পার্থ ভৌমিক। জয়ের ব্যাপারে ১০০ শতাংশ আশাবাদী তিনি।
মন্দির থেকে বেরিয়ে অর্জুন প্রসঙ্গে পার্থ বলেন, ‘ও বুদ্ধিমান ছেলে। আমার মনে হয় না বার বার দল বদল করে ও নিজেকে অবিশ্বাসের পাত্র করে তুলতে চাইবে। এটা নিম্নরুচির পরিচয়। তবে, গোটাটাই ওর বক্তিগত ব্যাপার। আমি যা বলার রাজনৈতিকভাবে বলব।’