ট্যাঙ্কের নীচে দেহ পুঁতে ইটের গাঁথনি, নিমতায় হাড়হিম করা হত্যাকাণ্ড
এই সময় | ১৩ মার্চ ২০২৪
খুন করে জলের ট্যাঙ্কের তলায় ইট দিয়ে গেঁথে রাখা হল দেহ, পরে উদ্ধার করল পুলিশ। ঘটনার জেরে চাঞ্চল্য ছড়াল নিমতা থানা এলাকায়। ঘটনায় অনির্বাণ গুপ্তা নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে কলকাতা পুলিশ। জানা গিয়েছে, উত্তর দমদম পুরসভার ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে ভাড়া থাকতেন অনির্বাণ। গতকাল রাতেই কলকাতা পুলিশ এসে অনির্বাণকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। আজ সকালে ফের এসে ওই বাড়িতে এবং জলের ট্যাঙ্কের নীচে ইট দিয়ে গেঁথে রাখা মৃত উদ্ধার করে নিয়ে যায় পুলিশ। ব্যক্তির নাম ভাব্য লাখানি।মৃতের ফ্ল্যাটের প্রতিবেশীদের দাবি, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ ছিলেন অনির্বাণ গুপ্তা। ভাব্য ছিলেন ওষুধের ডিস্ট্রিবিউটর। ভাব্য বেশ কিছুদিন আগে বড় রকমের ওষুধের বরাত দিয়েছিলেন অনির্বাণের মাধ্যমে। কিন্তু মাল আর এসে পৌঁছয়নি। ইতিমধ্যে অনির্বাণ যে কোম্পানিতে মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভের কাজ করত সেই কোম্পানি ছেড়ে দেয় বলে জানা যায়। তাই টাকা ফেরতের জন্য ভাব্য প্রতিনিয়ত অনির্বাণকে চাপ দিচ্ছিলেন বলে জানা যায়। গত পড়শুদিন টাকা দেওয়ার জন্য অনির্বাণ তার নিমতার বাড়িতে ডেকে পাঠান ভাব্য লাখানিকে। তারপর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন ভাব্য।
ভাব্য লাখানি নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পর বালিগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তাঁর স্ত্রী। তারপরেই তদন্তে নামে কলকাতা পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে অনির্বাণকে গ্রেফতারের পরেই খুনের কিনারা করতে সহজ হয় পুলিশের। নিমতা থানার পুলিশকে নিয়ে কলকাতা পুলিশ আজ ফের অনির্বাণ যেখানে থাকতেন, সেই বাড়িতে পৌঁছয়। জলের ট্যাঙ্কের নীচে থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। স্থানীয় সূত্রে খবর, অনির্বাণ ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা এলাকায় কারও সঙ্গে মিশতেন না। এমনকী ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শুক্লা চট্টোপাধ্যায়ও সেইভাবে চেনেন না অনির্বাণকে। কাউন্সিলরের দাবি, তিনি শুধু এতটুকু জানেন যে, অনির্বাণ ভাড়া থাকতেন ওই বাড়িতে। শুক্লা আরও জানান, যাঁরা এইভাবে কিছু না জেনে ভাড়া দিচ্ছেন, তাঁরা যেন ভাড়াটের পরিচয়পত্র জমা নিয়ে, খোঁজখবর নিয়ে আগামীদিনে বাড়িভাড়া দেন।
এই ঘটনার তদন্তে আরও একজন গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোনাগাছির দরজিপাড়ার বাসিন্দা সুমন দাসকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে কেন তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে, সেই বিষয়ে কোনও কিছু জানা যায়নি। সূত্রের খবর, গত ১০ তারিখ ভবানীপুরের বাসিন্দা ভাব্য লাখানি অনির্বাণ গুপ্তার সঙ্গে দেখা করতে নিমতার প্রমোদ মিত্র লেনে আসেন। অভিযোগ, টাকাপয়সা নিয়ে উভয়ের মধ্যে আলোচনার সময়, আচমকাই ভাব্যর উপর হামলা চালান অনির্বাণ। সেই হামলাতেই ভাব্যর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ। এরপরেই ভাব্য লাখানির দেহ লোপাঠ করতে বাড়ির জলের ট্যাঙ্কের নীচে লুকিয়ে ফেলে অনির্বাণ। তারপরেই সেখানে দেওয়াল তুলে তা প্লাস্টার করে দেয়।
এদিকে ভব্য লাখানি বাড়ি না ফেরায় তাঁর পরিবারের তরফ থেকে ভবানীপুর থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়। সেই ঘটনার তদন্ত নেমে অনির্বান গুপ্তা নামে ভাব্য লাখানিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই বেরিয়ে আসে আসল তথ্য। পাশাপাশি মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন ট্রেস করে নিমতার প্রমোদ মিত্র লেনের ঠিকানাই পাওয়া যায়। সেখানে হানা দিয়ে জলের ট্যাঙ্কের নীচ থেকে ভাব্য লাখানির দেহ উদ্ধার করে। পাশাপাশি খুনে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। এছাড়া বেলঘড়িয়া এক্সপ্রেসওয়ের পাশে ডাম্পিং গ্রাউন্ডের কাছ থেকে রক্ত মাখা জামা সহ বেশ কিছু সামগ্রীও উদ্ধার করেছে পুলিশ। সেগুলি সব ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠান হয়েছে। নিহতের দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠান হয়েছে কামারহাটির সাগর দত্ত হাসপাতালে।