Kohinoor: দেশবাসীর বহুদিনের দাবি মিটবে? কোহিনূর ফিরে পাবে ভারত?
এই সময় | ১৩ মার্চ ২০২৪
২০২৩ সালের অগাস্ট মাসে ব্রিটিশ মিউজিয়ামের তরফে জানানো হয়, জাদুঘর থেকে প্রাচ দুই হাজার প্রাচীন বস্তু চুরি হয়েছে। এই জিনিসগুলি গ্রীস এবং রোম বিভাগে রাখা হয়েছিল। প্রায় ছয় মাস পরে, স্টোর রুমে চুরির অভিযোগ এক ব্যক্তিকে পাকড়াও করে তদন্তদল। ৩৫৬টি চুরি হওয়া মূল্যবান জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয়েছে, তবে বাকিগুলি এখনও নিখোঁজ রয়েছে।উদ্ধারকৃত সামগ্রীর মধ্যে ১০টি প্রদর্শনীতে রাখা হয়েছে। ব্রিটিশ মিউজিয়ামে এই প্রদর্শনীর নাম 'রিডিসকভারিং জেমস'। চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয় এই প্রদর্শনী চলবে ২ জুন পর্যন্ত। জাদুঘর পরিচালনাকারী ট্রাস্টের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, কোনও বস্তুকে যে লুকিয়ে-চুরিয়ে রাখা হয় না, এই প্রদর্শনী তার প্রমাণ। ব্রিটিশ মিউজিয়াম তাদের নিদর্শন প্রদর্শনে উদার নয় কেউ আর অভিযোগ করতে পারবে না। একাধিক সময়ে অভিযো উঠেছে ব্রিটেনের মিউজিয়ামে রক্ষিত এমন অনেক বস্তু রয়েছে যেগুলি সঠিক পদ্ধতিতে সংগ্রহ করা হয়নি। কখনও আবার জোর করে কোনও বস্তু ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
৫২ হাজার আইটেম
জাদুঘরের অনলাইন ডাটাবেসের বিশ্লেষণে করে দেখা গিয়েছে, ২১২টি দেশের অন্তত ২২ লাখ দুর্মূল্য নির্দশ ছিল। শুধুমাত্র ভারত থেকে নেওয়া প্রত্নসামগ্রীর সংখ্যা ছিল ৫২,৫১৮টি। মনে রাখবেন এই চিত্রটি শুধুমাত্র ব্রিটিশ মিউজিয়ামের। ব্রিটেনের অন্যান্য জাদুঘরে মূল্যবান ভারতীয় জিনিসের হিসাব আলাদা।
প্রত্যাবর্তন চ্যালেঞ্জ
খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকের গোড়ার দিকে মেসোপটেমিয়ান 'ল অফ এশনুন্না' বলেছিল, যা চুরি হয়েছে তা ফেরত দিতে হবে। তবে তা অবশ্য বাস্তবে হয়নি। ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার জন্য আন্তর্জাতিক চুক্তি বাস্তবায়ন সবসময়ই চ্যালেঞ্জিংই রয়ে গিয়েছে। ১৯ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ পর্যন্ত, বিজয়ী সেনাবাহিনী তার শত্রু দেশের সম্পত্তি দখল করতে পারত এবং এটি একটি স্বীকৃত নিয়ম ছিল।
নিয়মানুযায়ী চেষ্টা
তবে পরের দিকে একাধিক চুক্তির মাধ্যমে এই সমস্যাটি মোকাবেলার চেষ্টা করা হয়েছে। এই ধরনের প্রথম প্রচেষ্টা ছিল ১৮৭৪ সালে ব্রাসেলস ঘোষণা। এর মাধ্যমে ব্যক্তিগত সম্পত্তি রক্ষার চেষ্টা করা হয়। তারপর ১৯০৭ সালে হেগ কনভেনশন। এতে ধর্ম, শিল্প ও বিজ্ঞান সম্পর্কিত ভবন সুরক্ষিত করার বিষয়ে কথা হয়। আগের দু'টি চুক্তিতে কোথাও সাংস্কৃতিক সম্পত্তির উল্লেখ ছিল না। সাংস্কৃতিক সম্পত্তির প্রথম উল্লেখ ১৯৫৪ সালের হেগ কনভেনশনেই হয়েছিল। এতে বলা হয়েছে যে সশস্ত্র সংঘাতের সময় সাংস্কৃতিক সম্পত্তি রক্ষা করতে হবে।
সাংস্কৃতিক সম্পত্তি নিয়ে উদ্বেগ
প্রথমবার, ১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত ইউনেসকো কনভেনশনের মাধ্যমে যুদ্ধের বাইরে চুরি হওয়া প্রত্নবস্তু নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল। এর উদ্দেশ্য হল সাংস্কৃতিক সম্পত্তির অবৈধ পাচার বন্ধ করা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় সেগুলিকে ফিরিয়ে আনা। ভারত সহ ১৪২টি দেশ এই কনভেনশন অনুমোদন করেছে। সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্যের সুরক্ষা, সংরক্ষণ এবং প্রদর্শনের জন্য ১৯৭২ ইউনেসকো কনভেনশন গ্রহণের মাধ্যমে অনুসরণ করা হয়েছিল। গ্রহণকারী দেশের সংখ্যা ছিল ১৯৪টি।
চুক্তির বাইরে ব্রিটেন
কনভেনশনগুলি তখনই কার্যকর হয় যখন একটি দেশের অভ্যন্তরীণ আইনও তাদের অনুমোদন করে। ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীর ঔপনিবেশিক আমলে বেশিরভাগ লুটপাট সংঘটিত হয়। এই কারণেই ব্রিটেনের মতো দেশ গ্রিসের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আলোচনা না করে গ্রীক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পূর্ব নির্ধারিত বৈঠক বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়। ঘটনাটি ঘটে গত বছরের নভেম্বরে।
কোহিনূরের ভবিষ্যত কী?
UNIDROIT সম্মেলন ১৯৯৫ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এটি চুরি করা বা অবৈধভাবে রপ্তানি করা সাংস্কৃতিক বস্তু ফেরত দেওয়ার উপর জোর দিয়েছে। ভারত ও ব্রিটেন এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি। রাষ্ট্র সংঘের রেজোলিউশন ২০২১-ও রয়েছে সাংস্কৃতিক সম্পত্তি আদি দেশগুলিতে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। কনভেনশনগুলি তখনই কার্যকর হয় যখন একটি দেশের অভ্যন্তরীণ আইন এটিকে অনুমোদন করে। এই বিধান অতীত ঘটনা প্রযোজ্য নয়। বেশিরভাগ লুটপাটের ঘটনা ঘটেছিল ১৯ এবং ২০ শতকে। তবে, ব্রিটেন যদি সেই দুর্মূল্য নির্দশনগুলি ফেরত নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত না হয়, তবে সেক্ষেত্রে কিছুই করা যাবে না। ভারতীয় আইনের লক্ষ্য হল পুরাকীর্তি বা শিল্পকে রক্ষা করা এবং এর অবৈধ রপ্তানি রোধ করা। ইউনেস্কো এবং তামিলনাড়ু সরকারের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ভারতে নিয়মিত প্রত্নবস্তু চুরি হয়। শুধু তাই নয়, আমরা দেশের ৫৮ লাখ প্রাচীন জিনিসপত্রের ডকুমেন্টেশন হয়নি। ২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্টে একটি পিআইএল দাখিল করা হয়। ব্রিটেন থেকে কোহিনূর ভারতে ফিরিয়ে আনার দাবিতে পিআইএল দাখিল হয়। কিন্তু, বিদ্যমান আইন অনুসারে, ভারতের পুরাতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণের (ASI) তা করার কোনও অধিকার নেই, ভারত সরকার বলেছে। তাই এই আবেদন খারিজ করা হয়।