হুডখোলা গাড়িতে শরীরের অর্ধেকাংশ বের করে ফুরফুরে হাওড়ার সঙ্গে মিতালি করা। দুরন্ত গতিতে গাড়ি ছুটিয়ে চলার উদ্দীপনা, সঙ্গে মদ্যপান। রাতের শহরে এহেন কার্যকলাপ আমাদের শহরে বেআইনি। বাড়িতে বসে দু'পাত্র পানের সুযোগ না থাকলে গভীর রাতে রাস্তায় বেরিয়ে প্রকাশ্যে এভাবে মদ্যপান করার সুযোগ খুঁজলে পুলিশের খপ্পরে পড়তেই হবে। তাহলে উপায়? সুরাপ্রেমী মানুষজন খুঁজেও নিয়েছেন উপায়।শিলিগুড়ি শহর জুড়ে গত কয়েকদিন ধরে এরকমই একটি প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যেখানে মত্তদের জন্য ‘চলন্ত পানশালা’ হয়ে উঠছে এলাকার টোটোগুলি। শিলিগুড়ি শহরের হিলকার্ট রোড, সেবক রোডের মধ্যে শহরের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় রাতবিরেতে টোটো ভাড়া নেওয়া হয়েছে মদ্যপান করার জন্য। চালকদের ট্যাঁকে কয়েকশো টাকা অতিরিক্ত গুঁজে দিলেই তাঁরাও খুশ।
জানা গিয়েছে, ১০০ বা ২০০ টাকায় এই টোটোগুলি ভাড়া নেওয়া হয়। মদের বোতল, জলের বোতল, খাবার নিয়ে নিয়ে উঠে পড়েন যাত্রীরা। টোটোর ভেতরেই চলে দেদার মদ্যপান। টোটো চালিয়ে ততক্ষণে চালক তাঁদের শহর পরিক্রমা করার মজাটাও জুগিয়ে দেন। এভাবেই রাতের পর রাত চলছে এই 'চলন্ত পানশালা'। শহরের বাসিন্দারা এবং বাইরে থাকা আসা পর্যটকরাও এই চলন্ত পানশালার যাত্রী হচ্ছে।
কেন এই উপায় অবলম্বন? টোটো চালকদের একাংশই জানাচ্ছে, পুলিশের গাড়ি সাধারণত বাইক আরোহী এবং চার চাকার আরোহীদের চেক করেন। ব্রেথ অ্যানালাইজার গিয়ে সওয়ারিদের চেক করা হয় তাঁরা মদ্যপান করে আছেন কিনা। মদ্যপান করা অবস্থায় গাড়ি চালানো কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। সেক্ষেত্রে শিলিগুড়ি শহর জুড়ে বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট কড়াকড়ি রয়েছে। তবে ফাঁক থেকে যাচ্ছে টোটো গাড়িগুলোর ক্ষেত্রে। সাধারণত, চালক নিজে মদ্যপান করছেন না। গাড়ির যাত্রীরা মদ্যপান করছেন। দ্বিতীয়ত, পুলিশ সাধারণত টোটো গাড়ি আটকে চেক করছে না। সেখানেই পোয়াবারো সুরাপ্রেমীদের।
সেবক রোডের এক টোটো চালক জানান, গোটা শহর জুড়ে প্রায় হাজার খানেক টোটো নিত্য যাতায়াত করে। বাইরে থেকে অনেক টোটো যাত্রীদের নামতে শহরে আসে। সেক্ষেত্রে কিছু টোটো চালক বেআইনিভাবে গাড়ির মধ্যে এভাবে মদ্যপানের ব্যবস্থা করছেন, এই অভিযোগ তাঁদের কাছেও এসেছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের আরও কড়া ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলেই জানাচ্ছেন টোটো চালকদের একাংশ। বিষয়টি নিয়ে ট্র্যাফিক ডিসিপি বিশ্ব চাঁদ ঠাকুর জানান, এমন কোনও অভিযোগ এলে খতিয়ে দেখা হবে।