• Virus Infection : ঋতু বদলের দাপটে বদলাচ্ছে কণ্ঠস্বর
    এই সময় | ১৪ মার্চ ২০২৪
  • অনির্বাণ ঘোষভয়েস চেঞ্জ! না, ইংরেজি ব্যাকরণের আলোচনা নয়। হচ্ছে, কণ্ঠস্বর বদলে যাওয়ার কথা। এই মরশুমে যা নতুন ‘মাথাব্যথা’ শহরে। শীত কিংবা ঋতু বদলের সময় ঠান্ডা লাগা মানে মূলত শ্বাসনালীতে ভাইরাল সংক্রমণ। তাতে অনেকের গলা বসে যায়, বদলে যায় কণ্ঠস্বরও। কিন্তু বড়জোর ৩-৭ দিন থাকে সেই সমস্যা। এর পর ফের সব স্বাভাবিক হয়ে যায়। কিন্তু এই বসন্তের মরশুমে দেখা যাচ্ছে, শীত শেষের সময়ে গলা বসে যাওয়ার সমস্যাটা সারতেই চাইছে না চট করে। বরং অন্তত ২৫-৩০% রোগীর ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, বদলে যাওয়া কর্কশ কিংবা ফ্যাসফ্যাসে কণ্ঠস্বর রয়ে যাচ্ছে মাস ঘোরার পরেও।

    অসংখ্য মানুষ এই মামুলি, অথচ বিরক্তিকর সমস্যায় জর্জরিত। ইএনটি বিশেষজ্ঞ দ্বৈপায়ন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘ভাইরাল সংক্রমণের জেরে ফুলে ওঠে ল্যারিংস। সেখানেই থাকে ভোকাল কর্ড বা স্বরযন্ত্র। সেগুলোও ফুলে ওঠে বলে কণ্ঠস্বর বদলে যায়। মুশকিল হচ্ছে, সেই ফোলা ভাবটা সেরেও সারছে না অনেকের।’ ফলে এক-দেড় মাস পেরিয়ে গিয়েছে, অথচ গলার বদলে যাওয়া আওয়াজ তখনও স্বাভাবিক হয়নি, এমন নজির প্রচুর। সঙ্গে থাকছে শুকনো কাশি, কারও আবার হাঁফ ধরে যাওয়ার মতো শ্বাসের অসুবিধাও।

    ফুসফুস রোগ বিশেষজ্ঞ রাজা ধরের অভিজ্ঞতা, ‘প্রতি চার জনের মধ্যে একজনেরই ভয়েসের সমস্যা দেখা যাচ্ছে। ব্যাপারটা হচ্ছে মূলত রাইনো ভাইরাস, প্যারা-ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, রেসপিরেটরি সিন্সিটিয়াল ভাইরাসের কারণে। এতটাই প্রদাহ সৃষ্টি করছে ল্যারিংসে (ল্যারিঞ্জাইটিস) যে এক মাসেও ভোকাল কর্ড স্বাভাবিক হচ্ছে না।’ ইএনটি বিশেষজ্ঞ শান্তনু পাঁজা মনে করেন, এত দিন ধরে গলা কর্কশ থাকা ভালো না। এতে আরও চাপ পড়ে ভোকাল কর্ডে। তাঁর বক্তব্য, ‘সাধারণত সপ্তাহখানেকের মধ্যে ঠিক হয়ে যায় ভয়েস। কিন্তু অ্যাকিউট ল্যারিঞ্জাইটিসের সময়ে যাঁরা গলার যত্ন নেন না, তাঁদেরই এই সমস্যাটা বেশি হয়।’

    একমত আর এক ইএনটি বিশেষজ্ঞ অর্জুন দাশগুপ্তও। তিনি জানাচ্ছেন, গলার যত্ন না নিলে প্রায়ই অ্যাকিউট থেকে ক্রনিক হয়ে যায় ল্যারিঞ্জাইটিস। ফলে ভয়েসও ঠিক হতে চায় না। তাঁর পরামর্শ, ‘গলা ভাঙলে জোরে কথা বলা ঠিক নয়। গলার সংক্রমণে গলাকে বিশ্রাম দিতে হয়। বিশেষ করে যাঁরা শিক্ষকতা, ওকালতি, ডাক্তারি, গান, নাটক, সেলস, অ্যাঙ্কারিং ইত্যাদি পেশার সঙ্গে যুক্ত। তাতেও না সারলে চা বা গরম পানীয় বার বার খেতে হবে, গলায় স্টিম ইনহেল করে ভাপ নিতে হবে।’

    চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, এতেই অধিকাশ ক্ষেত্রে সমস্যাটা সেরে যায়। কিন্তু এর পরেও যদি না সারে, তখন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতেই হবে। কারণ, নেপথ্যে অন্য কোনও জটিল কারণও থাকতে পারে। থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা থেকে শুরু করে গলার নানা অংশে ক্যান্সার বাসা বাঁধলেও গলার স্বর দীর্ঘমেয়াদে ঠিক হতে চায় না। তবে সেগুলো খুবই বিরল ঘটনা বলে জানাচ্ছেন দ্বৈপায়ন। তাঁর বক্তব্য, ‘ভোকাল কর্ডের প্রদাহ মূলত সারতে চায় না অত্যধিক কাশি, বেশি জোরে অনর্গল কথা বলা এবং আর্দ্রতা কমে যাওয়ার কারণে। তাই কথা কম বলে ভয়েস রেস্ট দিলে এবং ভাপ নিয়ে গলার আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনলেই সমস্যা মিটে যায়।’
  • Link to this news (এই সময়)