• Electoral Bonds Case: কোন সংস্থা কাকে কত টাকা দিয়েছে তা গোপনই
    এই সময় | ১৪ মার্চ ২০২৪
  • নয়াদিল্লি: সুপ্রিম কোর্টের ভর্ৎসনার পরে ও তার নির্দেশ অনুযায়ী মঙ্গলবার সন্ধেতেই ভারতের নির্বাচন কমিশনের হাতে ২০১৯ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যত নির্বাচনী বন্ড কেনা হয়েছে এবং যত বন্ড ভাঙানো হয়েছে, তার তথ্য স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (এসবিআই) তুলে দিয়েছিল। বুধবার এসবিআই-এর চেয়ারম্যান দীনেশকুমার খাড়া শীর্ষ আদালতের নির্দেশ মেনে এই সংক্রান্ত হলফনামা জমা দিয়েছেন।সেখানে তিনি জানিয়েছেন, নির্বাচনী বন্ড কে বা কোন সংস্থা কিনেছেন, কত টাকা মূল্যের কিনেছেন, বন্ড ভাঙিয়ে কবে কত টাকা তোলা হয়েছে, কোন দল কত টাকা চাঁদা পেয়েছে — সব তথ্য জমা দেওয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশনের কাছে। ওতে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলিকে অনুদান দিতে মোট ২২,২১৭টি নির্বাচনী বন্ড বিক্রি হয়। এর মধ্যে থেকে ২২০৩০টি বন্ড ভাঙানো হয়েছে এ বছর ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। বাকি ১৮৭টি বন্ডের মোট অর্থমূল্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে জমা পড়েছে।

    বস্তুত, ২০১৮ সালের গেজ়েট নোটিফিকেশনে বলাই ছিল যে রাজনৈতিক দলগুলি যদি বন্ড পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে সেগুলি না ভাঙায় তা হলে ওই অর্থ প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে চলে যাবে। বন্ডের যাবতীয় তথ্য পাওয়ার কথা স্বীকার করে এ দিন দেশের মুখ্য নির্বাচনী কমিশনার রাজীব কুমার এক সাংবাদিক বৈঠকে বলেছেন, ‘যথা সময়ে অর্থাৎ ১৫ মার্চের মধ্যে কমিশনের ওয়েবসাইটে দাতা ও গ্রহীতাদের তথ্য প্রকাশ করা হবে। আমরা ডিজিটাইজ়ড তথ্য এসবিআই-এর থেকে পেয়েছি। ফলে ডেডলাইন মানায় কোনও সমস্যা নেই। আমরা এখন তিনটি বিষয়কে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি — ডিসক্লোজ়ার, ডিসক্লোজ়ার অ্যান্ড ডিসক্লোজ়ার। আমরা সব সময়েই স্বচ্ছতার পক্ষে ও তা মাথায় রেখেই সব কাজ করা হবে।’

    মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের কাছে ডিজিটাল ফরম্যাটে নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত তথ্য জমা দেয় দেশের সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক। এসবিআই এ দিনের হলফনামায় জানিয়েছে, দু’টি পিডিএফ ফাইলে বন্ডের ক্রেতা ও কোন রাজনৈতিক দল ক’টি বন্ড পেয়েছে তা নম্বর ধরে ধরে তালিকা বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। দু’টি পিডিএফ ফাইলে এই সব তথ্য রয়েছে। ফাইল দু’টি পাসওয়ার্ড-প্রোটেক্টেড অর্থাৎ সঠিক পাসওয়ার্ড ছাড়া ফাইলগুলি খোলা যাবে না।

    কাল, শুক্রবার এই তথ্য কমিশনের ওয়েবসাইটে সন্ধের পরে পাওয়া যাবে। কোন ব্যক্তি বা সংস্থা কত টাকা মূল্যের ক’টি বন্ড কবে কবে কিনেছেন তা দেখতে পাওয়া যাবে। আবার কোন রাজনৈতিক দল কত টাকা মূল্যের বন্ড কবে ভাঙিয়েছে, তথ্য মিলবে তারও। তবে কোন সংস্থা কোন রাজনৈতিক দলকে কত টাকা দিয়েছে, সেটা জানা যাবে না। সেটার জন্য ইউনিক নম্বর ম্যাচ করাতে হবে। স্টেট ব্যাঙ্কের দাবি, সেটা তারা এখনও করে উঠতে পারেনি। দেশের শীর্ষ আদালত সোমবারই এসবিআইকে বলেছিল, ‘আমরা কোনও ম্যাচিং করতে বলিনি। বন্ডের ক্রেতা ও তা ভাঙানোর বিস্তারিত তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে।’

    কাজেই যে দিকে জনগণের সবথেকে বেশি আগ্রহ, কোন সংস্থা কত টাকা কোন রাজনৈতিক দলকে দিয়েছে, সেটা এখনই জানতে পারা যাবে না। ধরা যাক, সংস্থা Y ১ লক্ষ টাকার মূল্যের ইলেক্টোরাল বন্ড কিনেছেন। আবার দল Z বন্ড ভাঙিয়ে ১ লক্ষ টাকা পেয়েছে। সে ক্ষেত্রে এটা বলা যাবে না যে, Y-এর কেনা বন্ডই Z পেয়েছে। তবে এতে মামলাকারীরা খুব অস্তুষ্ট নয়। তাঁদের বক্তব্য, কে কোন দলকে কত টাকা অনুদান বন্ড কিনে দিয়েছে, তা জানা না গেলেও খানিকটা বোঝা যাবেই। সবচেয়ে বেশি লাভ কাদের হয়েছে তারও একটা আন্দাজ পাওয়া যাবে।

    গত ১৫ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় সরকারের নির্বাচনী বন্ড প্রকল্পকে ‘অসাংবিধানিক’ ঘোষণা করে শীর্ষ আদালত নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে তথ্য প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছিল এসবিআই-কে। রাজনৈতিক দলকে অনুদানের তথ্য গোপন রাখা দেশের সংবিধানের পরিপন্থী বলে জানায় সাংবিধানিক বেঞ্চ। এই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে আবার সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের (SCBA) প্রেসিডেন্ট অদিশ আগরওয়াল প্রেসিডেন্ট দ্রৌপদী মুর্মুর দ্বারস্থ হন। তিনি অল ইন্ডিয়া বার অ্যাসোসিয়েশনেরও চেয়ারম্যান।

    মঙ্গলবার তিনি দেশের রাষ্ট্রপতিকে ৭ পাতার একটি চিঠিতে অনুরোধ করেন তাঁর ক্ষমতা প্রয়োগ করে সুপ্রিম কোর্টের ইলেক্টোরাল বন্ড নিয়ে রায়কে স্থগিত করতে! এতে তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশেনর এগজ়িকিউটিভ কমিটি। তার সদস্যরা এ দিন SCBA-র লেটারহেডে স্পষ্ট জানান, ‘আগরওয়ালের চিঠির বক্তব্য সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতাকে খাটো করার চেষ্টা। এই প্রতিষ্ঠানকে ছাপিয়ে যাওয়ার চেষ্টা। আমরা এর তীব্র নিন্দা করছি ও স্পষ্ট জানাচ্ছি এই বিষয়ের সঙ্গে আমরা সহমত নই।’

    পাশাপাশি, কমিটি বিবৃতিতে এও জানিয়েছে, আগরওয়াল ৭ পাতার ওই চিঠির পুরোটা লিখেছেন অল ইন্ডিয়া বার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান হিসেবে। অথচ চিঠির নীচে সই করেছেন SCBA-র প্রেসিডেন্ট হিসেবে। এটা তিনি করতে পারেন না। এ বার অপেক্ষা ১৫ তারিখের। সব চোখ ইসিআই-এর ওয়েবসাইটে।
  • Link to this news (এই সময়)