এই সময়, বর্ধমান: জাতীয় সড়কে টোটো দুর্ঘটনায় সাত জনের মৃত্যুর পরে সরব হয়েছে শাসকদল তৃণমূল ও বিরোধী সিপিএম। তবে দুই দলের প্রতিনিধিদের বক্তব্য সম্পূর্ণ উল্টো। শাসকদলের নেতারা জাতীয় সড়কে টোটো বন্ধে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। উল্টো দিকে, সিপিএমের অভিযোগ, শাসকদলের শাসানিতেই জাতীয় সড়কে বন্ধ করা যাচ্ছে না টোটো।জেলাশাসক বিধান রায় বলেন, ‘প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি আমরা সিদ্ধান্ত জানাব।’ মঙ্গলবারই হুগলির গুড়াপে জাতীয় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গিয়েছে সাত জনের। তার পরেও কোনও বদল দেখা যায়নি। বুধবারও ১৯ জাতীয় সড়কে দেখা গিয়েছে, সাত জন যাত্রী নিয়ে বহাল তবিয়তে জাতীয় সড়কে যাতায়াত করছে টোটো।
গাংপুরের টোটোচালক সুমিত ঘোষ বলেন, ‘একদিন কাজ করলে মালিককে আড়াইশো টাকা ভাড়া দিতে হয়। বাজার ভালো থাকলে এর পরে ২০০-৩০০ টাকা থাকে। ২০-২২ দিনের বেশি কাজ হয় না। তাই প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে এভাবে যাতায়াত করতে বাধ্য হই আমরা।’ বামচাঁদাইয়ের বাসিন্দা অর্ধেন্দু সাহা বলেন, ‘গুরাপের দুর্ঘটনা দেখে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। কিন্তু জাতীয় সড়কে যেতে আমরা বাধ্য। তবে এবার অন্য কোনও রুটে টোটো চলবে বলে ভাবছি।’
২০২২-এ ২বি জাতীয় সড়কের ঝিঙুটি মোড় ও ২০২৩-এর জানুয়ারিতে উল্লাস মোড়ে ৪ জনের মৃত্যুর পরে জাতীয় সড়কে টোটো চলাচল বন্ধে উদ্যোগ নিয়েছিল জেলা পুলিশ। কিন্তু, রাজনৈতিক চাপে পিছু হটতে পুলিশ বাধ্য হয়।
এদিন বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারপার্সন কাকলি গুপ্ত তা বলেন, ‘জাতীয় সড়কে যেভাবে পর পর দুর্ঘটনায় মানুষের প্রাণ যাচ্ছে তাতে অবিলম্বে বন্ধ হোক জাতীয় সড়কে টোটো চলাচল। মানুষের প্রাণ বাঁচাতে কঠোর পদক্ষেপ করুক প্রশাসন। আমাদের কোনও সহযোগিতা লাগলে আমরা সেটা করতে রাজি। আগে প্রাণ বাঁচুক।’
বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাসের বক্তব্য, ‘এক সময় আসবে যখন দেখা যাবে লোকের থেকে টোটো বেশি। বর্ধমান শহরে টোটো বন্ধের চেষ্টা করেছি। তবে কিছু মানুষের স্বার্থে ঘা লাগায় তাদের অসহযোগিতায় সেটা করা যায়নি। জাতীয় সড়কেও এক অবস্থা।’ যোগ করেন, ‘আশপাশের গ্রামের বহু ছেলে জাতীয় সড়কে টোটো চালাচ্ছে। পুলিশের উচিত এদের প্রাণ বাঁচাতে টোটো চলাচল বন্ধ করা।’
টোটো বন্ধ করা না গেলে যে প্রাণহানি বন্ধ হবে না তা জানিয়েছে সিপিএমও। দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘কিন্তু সেটা হবে না। খোঁজ নিয়ে দেখুন, বর্ধমান শহর ও আশপাশের গ্রামে তৃণমূলের কত নেতার গাড়ি ভাড়া খাটছে। শাসকদলের এই দাদাদের ভয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে না। দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে নিরীহ মানুষ।’