CAA-র সুবিধা কেন পাবেন না মুসলিম শরণার্থীরা? খোলসা করলেন অমিত শাহ
এই সময় | ১৪ মার্চ ২০২৪
সম্প্রতি গোটা দেশে কার্যকর হয়েছে সিএএ বা নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন। ১১ মার্চ রাতে কেন্দ্রীয় সরকার এনিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানায় এদিন থেকেই দেশে কার্যকর হল নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন। ১২ মার্চ থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের পোর্টালে আবেদন করা যাচ্ছে নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য। ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের পর পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় কারণে বিতাড়িত হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, পার্সি এবং খ্রিস্টান শরণার্থীদের জন্য এই নাগরকিত্ব সংশোধনী আইন। তাঁরা ভারতের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে সংশোধনী আইনে মুসলিমদের উল্লেখ নেই। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশ্যে তোপ দাগছে বিরোধী দলগুলি। তাদের মতে এই আইন 'বৈষম্যমূলক'। তাদের অভিযোগ, 'এই আইনের মাধ্যমে বিজেপি আসলে মানুুষের মধ্য়ে ধর্মীয় ভেদাভেদ করতে চাইছে।'সিএএ-এর সুবিধা পাবেন না মুসলিমরা? মুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্ব পাওয়ার আবেদনের রাস্তা খোলা? খোলসা করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমতি শাহ।
সংবাদসংস্থা এএনআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অমিত শাহ বলেন, 'এই আইন মুসলিম বিরোধী নয়। এর একটি ইতিহাস রয়েছে। ১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্ট দেশ স্বাধীন হয়েছিল। ভারতীয় জনতা পার্টি বরাবরই বিভাজনের বিরোধিতা করেছে। দেশের বিভাজন ধর্মের ভিত্তিতে হওয়া উচিতই হয়নি। তবে সেই সময় ধর্মের ভিত্তিতেই দেশভাগ হয়েছিল। যখন ধর্মের উপর ভিত্তি করেই বিভাজন হল, ওই দেশগুলির সংখ্য়ালঘুদের ধর্ম পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছিল। মা-বোনদের উপর অত্যাচার হয়েছিল। ধর্মীয় উৎপীড়নের কারণেই ভারতের শরণার্থী হয়েছিলেন তাঁরা। তাঁদের কি নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার নেই? কংগ্রেস একাধিকবার প্রতিশ্রুতি দিলেও সেই প্রতিশ্রুতি রাখেনি কখনও। সেই প্রতিশ্রুতি মোদী পূরণ করছেন।'
শাহ বলেন, 'মুসলিম অধ্যুষিত এলাকার ভিত্তিতে জমি ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। তাহলে তো প্রত্যেক দেশের নাগরিক যারাই অবৈধ ভাবে ভারতে প্রবেশ করতে চায় তাদের নাগরিকত্ব দিয়ে দেওয়া উচিত। অখণ্ড ভারতের অংশ যাঁরা ছিলেন, যাঁদের সঙ্গে ধার্মিক প্রতারণা হয়েছে তাঁদেরকে নাগরিকত্ব দেওয়া আমি মনে আমাদের নীতিগত কর্তব্য ও সাংবিধানিক কর্তব্য।' শাহের সংযোজন, 'যখন পাকিস্তান বিভাজন হল তখন সেখানে ২৩ শতাংশ হিন্দু ছিল। বর্তমানে সেখানে মাত্র ৩.৭ শতাংশ হিন্দু। কোথায় গেলেন বাকি হিন্দুরা? এত মানুষ ভারতে আসেননি। তাদের ধর্ম পরিবর্তন করানো হয়, অপমান করা হয়। কোথায় যাবেন সেই সমস্ত নাগরিকরা? দেশ কি তাঁদের বিচার করবে না? ১৯৯১ সালে বাংলাদেশে হিন্দু ছিল ২২ শতাংশ। ২০১১-এর জনগণনায় তা হয়ে গেল ১০ শতাংশ। আফগানিস্তানে ১৯৯২ সালের আগে প্রায় ২ লাখ শিখ ও হিন্দু ছিলেন, আজ সেখানে সেই সংখ্যা মোটামুটি ৫০০। এই সমস্ত মানুষগুলোর কি নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার নেই? অখণ্ড ভারত যখন ছিল তখন এই মানুষগুলো আমাদের সঙ্গেই ছিল।'
মুসলিমরা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারেন? এই বিষয়ে অমিত শাহ বলেন, 'মুসলিমদেরও অধিকার রয়েছে ভারতের নাগরিকত্বের আবেদন করার। সংবিধানে সেই নিয়ম রয়েছে। ভারত সরকার তাদের সবরকম সুযোগ-সুবিধা দেবে। কারও জন্য় রাস্তা বন্ধ নয়। এই সংশোধনী আইনটি এই কারণে তৈরি হয়েছে- সেই সমস্ত অ-মুসলিমদের জন্য যাঁরা বৈধ নথি ছাড়াই ভারতে এসেছিলেন। তবে সংবিধানের নিয়ম অনুযায়ী মুসলিম নাগরিকরাও নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারেন। এই আইন আনা হয়েছে পড়শি তিন দেশ থেকে উৎখাত হওয়া সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার। এই আইন সংবিধানের ১৪ অনুচ্ছেদকে উলঙ্ঘন করে না। এর মধ্যে স্পষ্ট তফাত রয়েছে। এই আইন আনা হয়েছে তাদের জন্য যারা দেশভাগের কারণে বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে রয়ে গিয়েছিলেন এবং ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হয়ে ভারতে চলে এসেছিলেন, তাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য।'