এই সময়: রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ভিসি নিয়োগের মামলা সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। এই পরিস্থিতিতে দিল্লি থেকে কলকাতায় উড়ে এসেছেন দেশের অ্যাটর্নি জেনারেল আর বেঙ্কটরামানি। আচার্য-রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন এই সংক্রান্ত সমস্যার কথা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পক্ষের কাছ থেকে শুনতে।কিন্তু রাজ্যের শাসকদলের ঘনিষ্ঠ শিক্ষাবিদদের অভিযোগ, এদিন ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেট হলে অ্যাটর্নি জেনারেলেকে সংবর্ধনা, উপহার, স্তুতির মাধ্যমে প্রভাবিত করার চেষ্টা হয়েছে। যদিও বেঙ্কটরামানি সুপ্রিম কোর্টে মামলার বিষয়ে এদিন তেমন কোনও মন্তব্যই করেননি।
মঙ্গলবার কলকাতায় এসে বেঙ্কটরামানি প্রথমে বোসের সঙ্গে বৈঠক করেন। বুধবার রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্তকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু রাজভবনে গিয়ে তাঁর সঙ্গে বৈঠক করেন। বৃহস্পতিবার তিনি আচার্য-রাজ্যপালের সঙ্গেই আসেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে বোস ও বেঙ্কটরামানির ছবি দিয়ে তাঁদের স্বাগত জানিয়ে বড় বড় পোস্টার মারা হয়।
রাজ্যের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজ্যপাল নিযুক্ত ভিসিরা উপস্থিত ছিলেন সেখানে। ছিলেন কিছু ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষকও। আচার্যের নির্দেশেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেট হলে বেঙ্কটরামানিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ডোকরার কাজের দুর্গামূর্তি এবং উত্তরীয় দিয়ে স্বাগত জানান। তারপর রাজ্যপাল গভর্নর্স অ্যাওয়ার্ড অফ এক্সেলেন্স তুলে দেন বেঙ্কটরামানির হাতে। দেওয়া হয় এক লক্ষ টাকার চেকও।
স্বাগত ভাষণে বেঙ্কটরামানির প্রশংসা করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত ভিসি শান্তা দত্ত। এই সব দেখে এডুকেশনিস্ট ফোরামের সদস্য ও যাদবপুরের অধ্যাপক মনোজিৎ মণ্ডলের প্রশ্ন, ‘পরাধীন ভারতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে লর্ড কার্জনের স্তুতি-পুজো হতো। এখন অ্যাটর্নি জেনারেলের পুজো হচ্ছে। এক্সেলেন্স অ্যাওয়ার্ড, বোস নিযুক্ত ভিসিদের মন্ত্র দিয়ে। অথচ এই পদটি সাংবিধানিক। তিনি এই মামলায় উকিল। এ তো সরাসরি ওঁকে সন্তুষ্ট ও প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা।’
এই বৈঠকে বেঙ্কটরামানির সামনে কথা বলতে পেরেছেন দু’-তিন জন নির্বাচিত ব্যক্তিই। তার মধ্যে রয়েছেন রবীন্দ্রভারতীর ভারপ্রাপ্ত ভিসি শুভ্রকমল চট্টোপাধ্যায় ও আলিপুরদুয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত ভিসি রথীন বন্দ্যোপাধ্যায়। শুভ্রকমল বলেন, ‘আমাদের কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। কোনও রকম সহযোগিতা করা হচ্ছে না। সুপ্রিম কোর্টকে বলুন দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করতে। এ ভাবে চালানো যায় না।’ রথীনের বক্তব্য, ‘কিছু গুন্ডা ভিসিদের ভয় দেখাচ্ছে, তাঁর অফিসে-বাড়িতে হামলা চালাচ্ছে। এ ভাবে কি কাজ করা যায়?’
এ বিষয়ে অবশ্য সরাসরি উত্তর না দিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘সব কিছুই অত্যন্ত কেয়ারফুলি দেখা হচ্ছে। আবেগ তাড়িত হয়ে কিছু করা যায় না। আমি মনে করি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হবে।’ বোস জানান, তাঁর সঙ্গে কোনও মুখ্যমন্ত্রীর কোনও সংঘাত নেই।
আচার্যের কথায়, ‘বিশ্ববিদ্যালয় সংঘাতের জায়গা নয়। আমাদের এক মাত্র ভাবনা শুধুই ছাত্রছাত্রীরা। সুপ্রিম কোর্ট এর আগে পরিষ্কার করে দিয়েছে, আচার্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের সব। সরকারের তাতে কিছু করার নেই। আপনি কলকাতায় শুধুই সাইট সিইং করতে আসেননি। আশা করব, শ্রীকৃষ্ণ যেমন কাউকে দুঃখিত না করে সমস্যার সমাধান করতেন, তেমনই আপনি সবাইকে বোঝাতে সক্ষম হবেন।’
স্বল্প সময়ের বক্তৃতায় অবশ্য মামলা সংক্রান্ত কোনও মন্তব্য না করে বেঙ্কটরামানি বলেন, ‘স্বাধীনতা ও সাম্য—দেশের এই দুই মৌলিক বিষয়ের উপরে আপনারা ভরসা রাখুন। এতজন ভিসির সঙ্গে দেখা হওয়ায় আমি গর্বিত।’ বৈঠকে উপস্থিত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায়ের মন্তব্য, ‘এই বৈঠকের পরও মূল সমস্যার সমাধান কীভাবে হবে, তার কোনও দিশা পেলাম না।’