ভাবছেন শুধু মানুষের, মেনোপজ় হয় পাঁচ প্রজাতির তিমিরও
এই সময় | ১৫ মার্চ ২০২৪
ওয়াশিংটন: শুধু মানুষের নয়, তিমিদেরও হয়—মেনোপজ়ের অভিজ্ঞতা। কেন? জবাব পেতে রীতমতো গবেষণা শুরু করেছেন জীববিজ্ঞানীরা।নিজের জিন যত বেশি করে সম্ভব পৃথিবীতে রেখে যাওয়াই যদি প্রাণীর লক্ষ্য হয়, তা হলে এমন ঘটনা ঘটে কেন? বহু বছর ধরে গবেষণা চালিয়েও মেনোপজ় সংক্রান্ত একাধিক বিষয়ের যথাযথ জবাব খুঁজে পাননি বিবর্তনবিদ ও জীববিজ্ঞানীরা। মেনোপজ় অর্থাৎ নারীর শরীরের ‘সিগন্যাল’—দেহ আর সন্তান ধারণের উপযুক্ত নয়।
আর নতুন করে নিজের শরীরের কোনও অংশকেই পরবর্তী প্রজন্ম হিসেবে পৃথিবীতে রেখে যাওয়া যাবে না। নির্দিষ্ট বয়সে পৌঁছনোর পর প্রত্যেক মহিলাকেই এই শারীরিক পরিবর্তনের মুখোমুখি হতে হয়। তবে শুধু মানুষ নয়, এমন অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় তিমির অন্তত পাঁচটি প্রজাতিকে।
যতদিন জীবন, ততদিনই বজায় থাকে সন্তানধারণের ক্ষমতা। জীবজগতের বেশির ভাগ প্রাণীর ক্ষেত্রে এটাই প্রাকৃতিক নিয়ম। বিবর্তনবাদ অনুযায়ী এমনটাই হওয়া উচিত। যদি নিজের জিনের অংশ আর পৃথিবীতে রেখে যাওয়ার উপায়ই না থাকে, তাহলে বেঁচে থাকার অর্থ কী?
তাই যদি হবে, তা হলে মানুষ হোক বা তিমির অন্তত পাঁচটি প্রজাতির ক্ষেত্রে নারীরা মেনোপজ়ের পরেও বহু বছর কর্মক্ষম থাকে কেন? এই সংক্রান্ত বিষয়েই একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ হয়েছে বিজ্ঞানপত্রিকা ‘নেচার’-এ। জীববিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, স্তন্যপায়ীদের প্রায় পাঁচ হাজার প্রজাতির মধ্যে মানুষকে বাদ দিলে তিমির এই পাঁচটি প্রজাতির মেনোপজ় হয়। এরা সবাই দাঁতওয়ালা তিমি।
এই তালিকায় রয়েছে কিলার হোয়েল, বেলুগা হোয়েলরা। এই প্রজাতির তিমিরা সন্তানধারণের ক্ষমতা লোপ পাওয়ার পরেও বহু বছর শুধু যে বেঁচে থাকে তা-ই নয়, কর্মক্ষমও থাকে। অন্য দিকে দাঁতওয়ালা তিমির অন্য প্রজাতি এবং ডলফিনদের জীবনে কখনও মেনোপজ়ের পর্যায়টি আসেই না।
তিমির মেনোপজ় এবং তার বহু বছর পর পর্যন্ত তাদের বেঁচে থাকার ঘটনার সঙ্গে মানুষের মিল খুঁজে পেয়ে বিবর্তনবাদের এই রহস্যময় অধ্যায় নিয়ে গবেষণা শুরু করেছেন একদল গবেষক। এই দলের সদস্য স্যামুয়েল এলিস বলছেন, ‘আমরা দেখছি যাদের মেনোপজ় হয়, তিমির ওই প্রজাতিগুলো অন্য প্রজাতির তুলনায় অন্তত ৪০ বছর বেশি বাঁচে। শুধু তাই নয়, এই প্রজাতির মাদি তিমিগুলো পুরুষদের চেয়েও অনেকটাই বেশি বাঁচে।’
গবেষকরা জানাচ্ছেন, মাদি কিলার হোয়েল ৬০-৭০ বছর বেঁচেছে এমন নজির প্রচুর। কিন্তু ওই প্রজাতির পুরুষগুলো ৪০ বছরের বেশি বাঁচে না। সন্তানধারণের ক্ষমতা লোপ পাওয়ার পরেও এত বছর তাহলে ওরা বাঁচে কেন? আপাতত বিজ্ঞানীরা যে সিদ্ধান্তে এসেছেন সেটা একেবারে মানুষের মতোই। তিমিরাও বুড়ি হয়ে গেলে ঠাকুমা-দিদিমার মতোই নাতি-নাতনিদের দেখাশোনা করে।
শুধু তা-ই নয়, মানুষের ক্ষেত্রে যেমন পরিবারের কঠিন সময়ে ঠাকুমা-দিদিমারা নিজেদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে গোটা পরিবারকে কঠিন সময় পার করিয়ে দেন, সেই একই কাজ করে তিমিরাও। বিজ্ঞানীরা এমনটাও দেখেছেন যে মা তিমি এবং মেয়ে তিমি একই সময়ে সন্তানধারণ করেছে, এমন হলে মায়ের সন্তানরা শারীরিক ভাবে কিছুটা দুর্বল থাকে, তাদের আয়ুও কম হয়।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ‘প্রাথমিক ভাবে আমাদের মনে হচ্ছে, তিমিরা সন্তানধারণের সময়সীমা কমিয়ে জীবনকাল কিছুটা বাড়িয়ে নিয়েছে।’