এই সময়, সিউড়ি: বীরভূমের দু’টি আসনেই প্রার্থী বদল করেনি তৃণমূল। কিন্তু ভোট করাবে কে? কেষ্টদা যে নেই। তাই দাদার দাওয়াইও নেই। এ বার ভোট পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন পাঁচ জনের কোর কমিটি। কেষ্ট বিনে এ বারের লোকসভা ভোটের লড়াই যে কঠিন, মানছেন দলের প্রার্থী থেকে কর্মীরা।লোকসভা বা বিধানসভা, ভোট এলে দাওয়াই দিতেন কেষ্ট ওরফে অনুব্রত মণ্ডল। কখনও ‘গুড় বাতাসা’, কখনও ‘পাঁচনের ঘায়ে উর্বর জমি চাষ’। আবার ‘ভয়ঙ্কর খেলা হবে’ বা ‘রাস্তায় উন্নয়ন দাঁড়িয়ে আছে’র মতো ভোকাল টনিকে চনমনে থাকতেন কর্মীরা। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে খাইয়ে দাইয়ে ঘরে ভরে রাখা হোক কিংবা বেলা গড়ালে হাত চালাতে হবে, এমন ‘কোড’ এর মানে বুঝতেন কর্মীরা।
তাঁর কৌশলের কোনও তুলনা হবে না বলে একবাক্যে স্বীকার করেছেন বীরভূম লোকসভা আসনের প্রার্থী শতাব্দী রায় এবং বোলপুরের প্রার্থী অসিত মাল। তাঁদের বক্তব্য, ‘ভোটযুদ্ধে কেষ্টদার ভোকাল টনিকের কোনও তুলনা নেই।’ কালীঘাটের বাড়িতে বীরভূমের নেতাদের ডেকে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই জানিয়েছিলেন, কেষ্ট যে ভাবে বীরভূমে সংগঠন পরিচালনা করত, সে ভাবেই সবটা চালাতে হবে।
কেষ্ট নেই ঠিকই, তবে একদিন বেরিয়ে আসবে। তত দিন ওর মতো করেই সংগঠন পরিচালনা করতে হবে। ভোট পরিচালনার দায়িত্বে থাকা পাঁচ সদস্যের কোর কমিটির সকলেই কেষ্টর ‘কলাকৌশল’ খুব কাছ থেকে দেখেছেন। তবুও কি তাঁর বিকল্প হওয়া সম্ভব? প্রার্থীদের নাম ঘোষণার পরেই দেওয়াল লিখন শুরু হয়েছে জেলায়। হলে কী হবে, কর্মীদের মুখেচোখে অনুব্রতের অভাব স্পষ্ট।
বোলপুর কেন্দ্রের প্রার্থী অসিত মাল তো বলেই ফেললেন, ‘একটু হলেও টাফ লড়াই। কেষ্টদা সমস্ত চাপ নিজের ঘাড়ে নিতেন। আমরা ফ্রি-মাইন্ডে থাকতে পারতাম। এ বার তা পারছি না। তবুও জয় আমাদের নিশ্চিত।’ বীরভূম লোকসভা আসনের প্রার্থী শতাব্দী রায়ের বক্তব্য, ‘অনুব্রত মণ্ডলের যে স্টাইল, সেই স্টাইলেই ভোট করার চেষ্টা হচ্ছে।’
এ বার অবশ্য কোনও টনিকে কাজ হবে না বলে মনে করেন বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ধ্রুব সাহা। তিনি বলেন, ‘কোন দাওয়াই এ বার চলবে না। অনুব্রতের অবর্তমানে লড়াই এবার কঠিন হবে।’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলেন, ‘আমার ধারণা তৃণমূলের ক্ষয় হবে।’
কেষ্ট বিনে অবশ্য হতাশ নন বীরভূম জেলা কোর কমিটির সদস্য বিকাশ রায়চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘কেষ্টদার সঙ্গে থেকে আমাদের ভোট পরিচালনার অভিজ্ঞতা হয়েছে। সব নির্বাচনই আমাদের কাছে সিরিয়াস। কেষ্টদার পথ ধরেই সবটা করছি।’