এই সময়: সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) তীব্র বিরোধিতা করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবারই রাজ্যের সাধারণ মানুষকে সতর্ক করে তিনি বলেন, 'এখন যাঁদের দরখাস্ত (সিএএ পোর্টালে) করতে বলা হচ্ছে, দরখাস্ত করা মাত্র তাঁরা নাগরিক থাকা সত্ত্বেও বেআইনি অনুপ্রবেশকারী হয়ে যাবেন।'বৃহস্পতিবার সংবাদসংস্থা এএনআইকে সিএএ-র বিভিন্ন দিক ব্যাখ্যা করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সিএএ-র পক্ষে সওয়াল করতে গিয়ে শাহ অভিযোগ করেন, পশ্চিমবঙ্গে অনুপ্রবেশ হচ্ছে। বিজেপি বাংলায় ক্ষমতায় এলে এই অনুপ্রবেশ বন্ধ হবে বলেও দাবি করেছেন তিনি। এর পাল্টা তৃণমূলের দাবি, পশ্চিমবঙ্গে অনুপ্রবেশ হচ্ছে বলে অভিযোগ করে অমিত শাহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আসলে নিজের ব্যর্থতাই তুলে ধরলেন।
একই সঙ্গে লোকসভা ভোটের মুখে সিএএ-র বিধি তৈরি করে তা নিয়ে শাহদের সওয়ালকে আদতে ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি বলে মনে করছে জোড়াফুল। তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বৃহস্পতিবার বলেন, 'অনুপ্রবেশের কথা বলে অমিত শাহ তো সেম-সাইড গোল করেছেন। অনুপ্রবেশ রোখার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। কারণ, সীমান্তে তো রয়েছে বিএসএফ। কলকাতা পুলিশ অথবা রাজ্য পুলিশ সীমান্ত দেখে না। বিএসএফ অনুপ্রবেশ রুখতে পারছে না মানে অমিত শাহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ব্যর্থ। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ওঁর পদত্যাগ করা উচিত।'
কেন্দ্র সাম্প্রতিক অতীতে রাজ্যে বিএসএফের এক্তিয়ারভুক্ত এলাকার পরিধি বাড়িয়েছে। বিএসএফের ক্ষমতা বাড়ানোর পরেও কী ভাবে অনুপ্রবেশ হয়, সেই প্রশ্নও তুলেছে তৃণমূল। কুণালের কথায়, 'আপনারা তো বিএসএফের ক্ষমতা বাড়িয়ে ৫০ কিলোমিটার করেছেন। তা হলে রাজ্যের ভূমিকা কোথায়? রাজ্যে কোন দল ক্ষমতায় রয়েছে, এর সঙ্গে সীমান্ত সুরক্ষার কী সম্পর্ক?'
সিএএ-র সঙ্গে ডিটেনশন ক্যাম্পের কোনও সম্পর্ক নেই বলে শাহ দাবি করেছেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই যুক্তি মানতে নারাজ তৃণমূল। রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজার বক্তব্য, 'অমিত শাহ প্রকাশ্যে বলেছিলেন সিএএ হলে এনআরসি হবে। এখন ঘুরে গিয়ে অন্য কথা বলছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম থেকে বলেছেন, সিএএ লাগু হবে না। যাঁরা নাগরিক তাঁদের নতুন করে নাগরিক করবে কে?'
কুণালের কথায়, 'অসমের মানুষের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা রয়েছে। সেখানকার মানুষকে ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখা হয়েছিল। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন।' বিরোধীপক্ষ সিএএ নিয়ে রাজনীতি করছে বলেও শাহ অভিযোগ করেছেন। সেখানে তৃণমূলের বক্তব্য, লোকসভা নির্বাচনের মুখে বিধি তৈরি করে আসলে বিজেপিই রাজনীতি করছে।
শশীর কথায়, 'এই লোকসভার মেয়াদে ২৪০টি বিল পাশ হয়েছে। তার মধ্যে ২৩৯টি আইনের রুল তৈরি হয়েছে। কিন্তু সিএএ-র ক্ষেত্রে কেন রুল তৈরি হতে ৫১ মাস সময় লাগল? আপনি (অমিত শাহ) বলছেন, এটা ২০১৯ সালের আপনাদের ইস্তাহারে ছিল। তা হলে ৫১ মাস পরে ভোটের মুখে কেন রুল তৈরি হলো?' ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলিতে হিন্দু ধর্মের মানুষ নির্যাতিত হয়েছেন বলে এই সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন শাহ।
কুণালের প্রশ্ন, 'নির্যাতিত মানুষকে শুধু মানুষ হিসেবে দেখুন। নির্যাতিত মানুষকে ধর্ম দেখে ভাগ করা ভয়ঙ্কর ব্যাপার। এটা ধর্মের ভিত্তিতে ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি করা হচ্ছে।' বিজেপির কোনও বিধায়ক অথবা জনপ্রতিনিধি যদি সিএএ-র ফর্ম পূরণ করেন, তা হলে সেই জনপ্রতিনিধির পদত্যাগ তৃণমূল দাবি করবে বলে কুণাল জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, 'সিএএ-র ফর্ম পূরণ করার অর্থ সেই ব্যক্তি ভারতের নাগরিক নন। তাই বিজেপির কোনও নেতা ফর্ম পূরণ করলে তিনি যদি কোনও নির্বাচিত পদে থাকেন, সেই পদ ছাড়তে হবে।'