ভেজিস! রুফটপ কিচেন গার্ডেন থেকে বছরভর জোগান আবাসনে
এই সময় | ১৫ মার্চ ২০২৪
প্রশান্ত ঘোষ
ঝুলন্ত বাগান বা শূন্য উদ্যান হয়তো বলা যেতে পারে একে। তবে ব্যাবিলনে নয়, নিউ টাউনে। ব্যাবিলনের সেই ঝুলন্ত বাগানের উচ্চতা ছিল মাটি থেকে ৮০ ফুট। নিউ টাউনের বাগান প্রায় ৪০ ফুট উঁচুতে। ব্যাবিলনেরটা ফুলের বাগান। নিউ টাউনের বাগানে ফলে আনাজপাতি, ফলও। কপি, লঙ্কা, টোম্যাটো, ক্যাপসিকাম, ধনেপাতা, পুঁইশাক, লাউ, কুমড়ো— এমনকী, সজনে ডাঁটা, নিমপাতাও আছে।তা ছাড়া, আছে বাতাবি লেবু, কাগজি লেবু, পাতি লেবুও। তিন তলায় আবাসনের কমিউনিটি হল লাগোয়া টের্যাসে বিশাল বাগান। রুফটপ কিচেন গার্ডেন। ছাদ বাগান। যেখানকার ফলন থেকে স্বাদ বদল করছে নিউ টাউনের একটি আবাসনের ২০০-র বেশি পরিবার। সপাক খাওয়ার আনন্দ ও তৃপ্তি আলাদা রকম, এমনটা বলা হয়।
আর এখানে নিজেদের হাতে ফলানো তরিতরকারির স্বাদ নিচ্ছেন আবাসিকরা। যাঁরা আগে কখনও কোনও দিন কোদাল হাতে ধরেননি, তাঁরাও এখানে মাটি খুঁড়ে, জল দিয়ে, গাছ পুঁতছেন টাটকা আনাজ পেতে। নিউ টাউনের সংকল্প-২ আবাসন। যেখানে আবাসিকদের দৌলতেই তৈরি হয়েছে এমন রুফটপ কিচেন গার্ডেন।
ওই আবাসন নিউ টাউনের বিশ্ববাংলা গেট সংলগ্ন এনকেডিএ-মেলা মাঠের পাশে। যেখানে ১৫তলার দু’টি টাওয়ার এবং অন্য চারটি টাওয়ারের প্রতিটি ২০তলা। অ্যাকশন এরিয়া ১বি-র ওই আবাসনে ২০১৪ সাল থেকে ২২৮টি পরিবারের বসবাস। উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারী থেকে তাবড় ব্যবসায়ী— বিভিন্ন মানুষ এখানে থাকেন।
তাঁদের মধ্যেই আছেন কিছু গাছপাগল মানুষ। তাঁদের উদ্যোগেই ওই কিচেন গার্ডেন। যাঁরা ওই চাষবাসে নেই, তাঁদের হাতেও তুলে দেওয়া হয় ওই কিচেন গার্ডেনের তরিতরকারি। ওই আনাজ বাগানের এক ‘চাষি’, গৃহবধূ মালা ফৌজদার বলছেন, ‘বেশির ভাগ বাজারে সাধারণত মরশুমি আনাজই মেলে। তবে আমাদের এই ছাদ বাগানে আমরা সব রকম আনাজ ফলাই সারা বছর। এখানে বারোমেসে সজনে ডাঁটা, কপি, পালং শাক, বেগুনের মতো আনাজের চাষ হয়। আমরা চাষ করি মনের আনন্দে।’
আবাসন সমিতির সভাপতি কৌশিক সরকার জানাচ্ছেন, ফেলে দেওয়া কাঠ, ফার্নিচার দিয়ে বড় বড় টব বানানো হয়েছে। তার মধ্যেই বসেছে বিভিন্ন গাছের চারা। উৎসাহী আবাসিকরা নিয়োগ করেছেন এক জন নার্সারি বিশারদকে। যিনি বীজ থেকে চারা তৈরি করেন। আর গাছ লাগানো, মাটি খোঁড়া, জল ও সার দেওয়া সবই করেন আবাসিকরা।
কৌশিকের কথায়, ‘রোজই দু’-তিন জন করে বাগানে কাজ করেন। ছুটির দিনে স্বেচ্ছাশ্রম দেওয়ার লোকের সংখ্যা বাড়ে।’ ওই আবাসনের বাসিন্দা, কর্ণেল পৃথ্বীরঞ্জন দাসের বক্তব্য, ‘আমরা ৫ জুন ছোটদের নিয়ে পরিবেশ দিবস পালন করি, গাছ লাগাতে উৎসাহ দিই।’
‘সংকল্প-২’ আবাসনের এমন উদ্যোগকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন আশপাশের অনেকেই। নিউ টাউনের আবাসিকদের একটি সংগঠনের কর্তা সমীর গুপ্তার কথায়, ‘এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। ওই আবাসনের বাসিন্দাদের দেখে অন্যেরাও যদি এমন ছাদ বাগান করতে উৎসাহ পান, তা হলে সেটা অবশ্যই ইতিবাচক দিক।’
এনকেডিএ-র এক কর্তা বলেন, ‘আবাসনে সবুজায়নের জন্য এমনিতে আমরা নার্সারি থেকে চারাগাছ দিই। এর সঙ্গে কোনও কোনও আবাসন যদি কিচেন গার্ডেনে উৎসাহ দেখায়, তা হলে তো খুবই ভালো।’