এই সময়, দাদপুর: পৌষের ধান ও ফাল্গুনের আলু মাঠ থেকে তুলে নেওয়ার পর খানিকটা হালকা থাকে কৃষিজীবী পরিবারগুলি। সেই সঙ্গে মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষও হয়ে যায়। বসন্তের আবহে পরম্পরা মেনেই চলছে রান্না উৎসব। বৃহস্পতিবার সংক্রান্তি তিথিতে দাদপুর থানার সিনেট গ্রামে জোড়বাংলা বিশালাক্ষী মন্দিরে এই রান্না উৎসব শুরু হয়।সারা ফাল্গুন মাস ধরে চলবে রান্না উৎসব। তাতেই এ দিন সকাল থেকেই মন্দিরে ভিড় জমিয়েছেন ভক্তরা। মন্দির চত্বরে মাটি দিয়ে উনুন তৈরি করে মহিলা ভক্তরা নানাবিধ রান্না তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। হুগলির আশেপাশের গ্রাম ছাড়াও বর্ধমান থেকেও প্রচুর ভক্তরা মন্দিরে এসেছিলেন।
গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বর্ধমানের রাজা তেজচন্দ্র রায় ১২০২ বঙ্গাব্দে বিশালাক্ষী মায়ের মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। মন্দির প্রাঙ্গণে ১৯৯২ সালে গোপাল সাউ নির্মাণ করে দিয়েছেন প্রবেশ দ্বারের নাটমন্দির। ফাল্গুন মাসে বিভিন্ন দিনে এলাকার মানুষজন একত্রিত হয় রান্না উৎসবে। তবে সংক্রান্তির দিনে ভক্তরা একসঙ্গে মন্দিরে এসে রান্নার উৎসবে যোগ দেওয়ায় মেলার রূপ ধারণ করে।
এ দিন রান্না উৎসবকে ঘিরে জোড়বাংলা মন্দির প্রাঙ্গণে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। ঐতিহ্য মেনে মন্দিরের চারপাশ সনাতনী মেলার চেহারা নিয়েছে। কথিত আছে, মন্দিরের পাশের পুকুর থেকে দেবী বিশালাক্ষী আবির্ভূত হয়েছিলেন। এলাকা ছাড়া বাইরের মানুষজনকে খাওয়ানোর সঙ্গে নিজেরাও রান্না খাবার একসঙ্গে খেয়ে ভক্তরা পুণ্য অর্জন করার রেওয়াজ রয়েছে।
এ দিন রান্না উৎসবে যোগ দেওয়া ভক্ত পায়েল ঘোষ বলেন, ‘প্রচার ছাড়া বাংলা তিথি মেনে প্রতিবার আমি এখানে আসি। বেশ মজা হয়।’ অন্য দিকে, মন্দিরের এক কর্তা তপন হালদার বলেন, ‘পরম্পরা ও ধর্মীয় বিশ্বাস মেনে শতাধিক বছরের বেশি সময় ধরে রান্না পুজো মেলা হয়। গোটা ফাল্গুন মাস ধরে কাঠের উনুনে রান্না করা হবে। তবে শনি ও রবিবার ভক্তদের সমাগমে মন্দির মেলার চেহারা নেয়। এ বারেও মানুষের ঢল নেমেছে।’