নমাজ পাঠকে কেন্দ্র করে গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলকালাম কাণ্ড। জানা গিয়েছে, হাতাহাতির জেরে কয়েকজন বিদেশি ছাত্র গুরুতর জখম হয়েছে। শনিবার মধ্যরাতে কী এমন ঘটল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে?আহমেদাবাদের পুলিশ কমিশনার জি এস মালিক বলেন, 'গতকাল রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ একদল ছাত্র নমাজ পাঠ করছিল। সে সময় ২০-২৫ জন এসে তাদের প্রশ্ন করে, বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে কেন নমাজ পাঠ করছে তারা। বদলে মসজিদে চলে যাওয়ার কথা বলে। সেই থেকেই দুই পক্ষের মধ্যে বচসা বেধে যায়। যা ক্রমে হাতাহাতিতে গড়ায়। একে অপরকে লক্ষ্য করে ইট ছুড়তে শুরু করে তারা। হস্টেলের ঘরের জানলার কাচ ভেঙে দেওয়া হয়। বহিরাগতদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ গন্ডোগোল পাকানোর।'
ঘটনায় কড় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে পুলিশ। ২০-২৫ জন বহিরাগতের বিরুদ্ধে FIR দায়ের করা হয়েছে। একজনকে ইতিমধ্যেই চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে বলে খবর। আপাতত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনা গিয়েছে বলে জানাচ্ছে পুলিশ। এই সংঘর্ষের ঘটনায় শ্রীলঙ্কা এবং তাজাকিস্তানের দুই পড়ুয়া গুরুতর আহত হয়েছে। তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৩০০-র বেশি বিদেশি পড়ুয়া রয়েছে। তাঁদের মধ্যে অনেকেই মুসলিম।
গুজরাটের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্ষ সাংভি এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ইতিমধ্যেই আহমেদাবাদের পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতার করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। পক্ষপাতহীন তদন্তের কথাও জানিয়েছেন।
জানা গিয়েছে, উজবেকিস্তান, আফগানিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং শ্রীলঙ্কার পড়ুয়ারা শনিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মধ্যে হস্টেলে নিজেদের ঘরে নমাজ পাঠ করছিল। সে সময়ই মুসলিম বিরোধী স্লোগান দিতে দিতে তাদের ঘরে ঢুকে ঝামেলা সৃষ্টি করার অভিযোগ ওঠে একদল বহিরাগতের বিরুদ্ধে। উস্কানিমূলক মন্তব্য এবং কার্যকলাপের জেরে দুই পক্ষের মধ্যে বচসা বেধে যায়। যা ক্রমশ হাতাহাতিতে গড়ায়।
পড়ুয়াদের অভিযোগ, রমজান মাসে রাতের নমাজ অর্থাৎ তারাউইয়ার জন্য একজোট হয়েছিল তারা। হস্টেলের মধ্যেই নমাজ পাঠ করছিল। যেহেতু গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস চত্বরে কোনও মসজিদ নেই তাই হস্টেলেই এই তারাউইয়ার আয়োজন করেছিল বিদেশি মুসলিম ছাত্ররা। সে সময় একদল বহিরাগত ছুরি, লাঠি, বাঁশ নিয়ে তেড়ে আসে। হস্টেলেক নিরাপত্তারক্ষী উত্তেজিত দুই পক্ষকে থামানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু, পরিস্থিতি হাতের বাইরে বেরিয়ে যায়।
আফগানিস্তানের এক মুসলিম পড়ুয়া ঘটনার সময় হস্টেলে উপস্থিত ছিল। সেও তারাউইয়ার নমাজ পাঠ করছিল। তাঁর কথায়,
'একদল ছেলে এসে আমাদের বলল, কোনওভাবেই হস্টেলের মধ্যে নমাজ পাঠ করা যাবে না। জয় শ্রীরাম স্লোগান দিচ্ছিল ওরা। নিরাপত্তারক্ষীরা তাদের থামানোর চেষ্টা করলে তাঁদেরকেও ধাক্কা দেয় ওরা। নমাজ পাঠরত অবস্থায় আমাদের উপর হামলা করে। অ-মুসলিম অন্য বিদেশি পড়ুয়ারাও সে সময় হস্টেলের অন্দরে ছিল। তারাও আমাদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। তাদের উপরও আক্রমণ করা হয়।'
AIMIM প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়াইসি এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ করেছেন। তিনি ভারতীয় জনতা পার্টির দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। এক্স হ্যান্ডেলে করা একটি পোস্টে AIMIM প্রধানের কথায়, 'লজ্জাজনক ঘটনা। মুসলিমরা যখন শান্তিপূর্ণভাবে নমাজ পাঠ করছিলেন তখন অন্য ধর্মের স্লোগান তুলে আক্রমণ করা হল। কোনও কারণ ছাড়াই মুসলিমদের উপর আক্রোশ দেখানো হচ্ছে। হচ্ছেটা কী এটা? গণ প্রতিরোধ গড়ে তোলা উচিত এই ধরণের ঘটনার বিরুদ্ধে।'