বিশ্বকাপ খেলতে নামার আগে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর বিস্ফোরক সাক্ষাৎকার যে তাঁর ক্লাব ছাড়ার প্রথম ধাপ ছিল, মঙ্গলবার রাতের পর এ নিয়ে আর কোনও সন্দেহ রইল না।
পুরনো ক্লাবের সঙ্গে রসায়ন একেবারেই জমল না পাঁচবারের ব্যালন ডি’ওর জয়ীর। বরং শেষটা হল কাদা ছোড়াছুড়িতেই। বিতর্কের সময়টা বড় ভুল বেছেছেন। বিশ্বকাপের ঠিক আগে এমন একটা কাণ্ড ঘটালেন, যার আঁচ পর্তুগাল শিবিরে পড়া অবধারিতই ছিল। পর্তুগিজ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তির প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা জানতে পেরেই এজেন্ট হোর্হে মেন্ডেজকে দিয়ে খবর পাঠান রোনাল্ডো। যাতে বিচ্ছেদ পর্তুগালের প্রথম ম্যাচের আগে সম্পন্ন হয়। নিজের ক্লাবের প্রতি সোজাসাপটা বার্তা ছিল সিআর সেভেনের, যত দ্রুত সম্ভব দ্বিপাক্ষিকভাবে বিচ্ছেদ সম্পন্ন করো।
এ সব নিয়ে রোনাল্ডোর কোনও মাথা যন্ত্রণা রয়েছে বলে আপাতভাবে মনে হচ্ছে না। ক্লাব ফুটবলে একদা রিয়েল মাদ্রিদ এবং জাতীয় দলের দীর্ঘদিনের সতীর্থ পেপেকে নিয়ে হাসিঠাট্টায় মজে তিনি। বন্ধুর একটি ছবি আঁকার চেষ্টা করলেন রোনাল্ডো। তাতে পেপেকে চেনা দায়। ছবি আঁকা শেষ করে হাসিতে ফেটে পড়লেন খোদ শিল্পীই। পেপেও আঁকলেন রোনাল্ডোকে। রোনাল্ডোরা বাইরের দুনিয়া থেকে নিজেদের এভাবেই বিচ্ছিন্ন রাখলেন।
রোনাল্ডো অধ্যায় পরিণতি দেখেছে। তাতেও এ নিয়ে আলোচনার অন্ত নেই। স্টেডিয়াম ৯৭৪–এ ঘানার বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগের দিনও সাংবাদিক সম্মেলন করতে আসা পর্তুগাল কোচ ফার্নান্দো স্যান্টোস ও তারকা ফুটবলার ব্রুনো ফার্নান্ডেজেরও অব্যাহতি ছিল না ক্রিশ্চিয়ানো সম্পর্কিত প্রশ্ন থেকে। পর্তুগিজ সংবাদ মাধ্যম অনেকাংশেই বিশ্বকাপের চেয়ে রোনাল্ডোর ম্যাঞ্চেস্টার অধ্যায় নিয়ে প্রশ্নে বেশি আগ্রহী মনে হল। স্যান্টোস কিছুটা বিরক্তির সঙ্গেই জানালেন, ‘রোনাল্ডোর বিষয়টায় পর্তুগালের ওপর কোনও প্রভাব নেই। এই তো দেখে এলাম, ছেলেরা ক্রোয়েশিয়া–মরক্কো ম্যাচ দেখছে।’ ব্যঙ্গও করলেন খানিকটা, ‘এবার ওরা যদি ফোনে কথা বলার সময় আলাদা করে রোনাল্ডোকে নিয়ে আলোচনা করে থাকে, আমার জানা নেই।’
কাতার জুড়ে এখন আতঙ্কের দ্বিতীয় নাম হয়েছে আর্জেন্টিনা। সৌদি আরবের কাছে অপ্রত্যাশিত হারের পর লিওনেল মেসিদের নকআউটে যাওয়া কঠিন হয়েছে। মেসিদের হারকে পর্তুগালও একটা বড় শিক্ষা হিসেবে দেখতে চাইছে। রোনাল্ডোদের কোচ স্যান্টোসের গলায় সতর্কতার সুর, ‘এখন সেয়ানে সেয়ানে লড়াই হয়। অঘটনও আকছার হয়। বিশ্বকাপে আজকাল দুর্বল দল বলে কিছু আর হয় না। ফুটবলাররা সব বড় বড় লিগে খেলে। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।’
পর্তুগালের গ্রুপে ঘানা ছাড়া আর যে দুটি দেশ রয়েছে, কোনওভাবেই সহজ হবে না ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোদের যাত্রাপথ। দক্ষিণ কোরিয়া এবং উরুগুয়েও রাতের ঘুম কাড়তে পারে। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে জয় বাকি দুটি ম্যাচের আত্মবিশ্বাস জোগাবে ২০১৬ ইউরো চ্যাম্পিয়নদের।
ঘানাও পুরোদস্তুর তৈরি পর্তুগালে বিরুদ্ধে সৌদি বা জাপান হয়ে উঠতে। কোচ ওটো আদো সতর্ক করলেন, ‘আমরা সবরকম ভাবে তৈরি আছি। ছেলেদের সাহসী ফুটবল উপহার দিতে বলেছি। আমাদের রক্ষণকে পুরো সময়টা ধরে জমাট থাকতে হবে।’ ঘানায় পরিচিত নাম কম নেই। আন্দ্রে আইয়ু, জর্ডান আইয়ুর পাশাপাশি আর্সেনাল তারকা টমাস পার্টি, আয়াক্সের মহম্মদ কুদুসরা রয়েছেন। ২০১৪–তে পর্তুগালের কাছে ১–২ হেরেই বিদায় হয়েছিল ঘানার। ওই দলের আইয়ু ভ্রাতৃদ্বয় ছাড়া কেউ নেই। আন্দ্রে বলছিলেন, ‘২০১৪–র ম্যাচে আমাদের নকআউটে যেতে হলে পর্তুগালকে দু’গোলে হারাতে হত। এখন কিন্তু পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। ওদের কঠিন ম্যাচ উপহার দেব।’