• রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সভার মূল আকর্ষণ, গোপাল ভাঁড় কি আদৌ ছিলেন?
    এই সময় | ২৫ নভেম্বর ২০২২
  • মেয়েবেলা থেকে মাঝবয়স, প্রবীণদের ঠোঁটে আজও হাসি ফোটায় গোপাল ভাঁড়। কে বলেন তিনি নেই? হাসিতে, গল্পের বইয়ের পাতায়, কার্টুনে, স্মৃতিতে-ভালোলাগায় তাঁর অবাধ বিচরণ। প্রচলিত কথায় জানা যায়, নদিয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের রাজসভায় গোপাল ভাঁড় ছিলেন বিশেষ সমাদৃত। তবে কার্টুনে তাঁর যে ছবি উঠে আসে তার সঙ্গে গোপাল ভাঁড়ের শারীরিক মিল কতটা ছিল? এই নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। প্রাবন্ধিক স্বদেশ রায়ের অবশ্য দাবি, “বাস্তবে গোপাল ভাঁড় ছিলেন না। কৃষ্ণনগরের রাজদরবার নিয়ে পড়াশোনা করতে গিয়ে কোথাও গোপাল ভাঁড়ের উল্লেখ আমি পাইনি। গোপাল ভাঁড় একটি কাল্পনিক চরিত্র। আগে রাজা মহারাজারা নিজেদের মহত্ত্ব প্রচার করার জন্য পারিষদদের দিয়ে এই সমস্ত প্রচার করাতেন। ভারতচন্দ্র রায়গুণাকরের 'অন্নদামঙ্গল' কাব্যে কোথাও গোপাল ভাঁড়ের কোনও উল্লেখ পাইনি।”

    কৃষ্ণনগরের ঘূর্ণির বিশ্বাস বাড়িতে জন্ম র, স্থানীয়ভাবে জানা যায় এমনটাই। তাঁর প্রসঙ্গে বর্ণনা দিতে গিয়ে একান্ত সাক্ষাৎকারে ঘূর্ণির বাসিন্দা তথা স্থানীয় কাউন্সিলর অসিত সাহা বলেন, "আজ বিভিন্ন ছবি থেকে শুরু করে টিভি শোয়ে গোপাল ভাঁড়ের নির্দিষ্ট একটি কার্টুন ব্যবহার করা হয়। কিন্তু, সেই কার্টুনের সঙ্গে তাঁর শারীরিক কোনও মিল ছিল না। সেই সময় ব্রাহ্মণরা অনেকেই গোপালকে 'শত্রু' হিসেবে বিবেচনা করতেন। ইতিহাস উলটে দেখতে সেই সময় ঘূর্ণি অঞ্চলে ২০০ মানুষের বসবাস ছিল। গোপালের পদবি ছিল 'না' অর্থাৎ নাপিত। গোপালের বাবার নাম ছিল দুলাল না। আর জাত নিয়ে ভেদাভেদের কারণেই তাঁকে সেই সময় ব্রাহ্মণরা ছলে বলে কৌশলে বিভিন্ন সমস্যায় ফেলেছিলেন। গোপাল কিন্তু ব্রাহ্মণদের কাছে মাথা নীচু করেননি। বুদ্ধি দিয়ে 'কুস্তি লড়ে' কিস্তিমাত করেছিলেন তিনি।"

    অসিত সাহা আরও বলেন, "র রাজসভার পরামর্শদাতা গোপালকে রাজা ছাড়া অন্যরা সেভাবে পছন্দ করতেন না। গোপাল নাপিত রাজার কাছের মানুষ হয়ে উঠছেন তা মেনে নিতে পারেননি ব্রাহ্মণরা। কিন্তু, গোপাল লড়ে গিয়েছিলেন। বুদ্ধি, হাসি, মজায় গোপাল জয়ী হয়েছেন বিভিন্ন পরীক্ষায়।" গোপালের জীবন কাহিনী নিয়ে বই লিখেছেন লেখক সুজিত রায় এবং অসিত সাহা। ঘুর্ণির বাসিন্দা শিব হরি সান্যাল বলে গিয়েছিলেন, গোপাল ভাঁড়ে জগৎজোড়া নাম হবে। পদবী না হলেও সেই সময় ব্রাহ্মণরাই তাঁকে গোপাল ভাঁড় বলে ডাকতেন।

    স্মৃতির উদ্দেশ্যে প্রতি বছর কৃষ্ণনগর কারবালা ময়দানে মেলার আয়োজন করা হয় । ২০০৩ সালের ১৯ অক্টোবর ঘূর্ণিতে প্রবেশের মুখেই তাঁর একটি মূর্তি স্থাপন করা হয়েছিল। জানা যায়, রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের মৃত্যুর পর মন্ত্রিসভায় ঠাঁই হয়নি তাঁর। খানাকুলে চলে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানেই শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন গোপাল ভাঁড়, জানা যায় এমনটাই।
  • Link to this news (এই সময়)