• ক্যালেন্ডারের বাজার নেই, ভরা মরশুমেও মুখ ভার বড়বাজারের
    বর্তমান | ১২ এপ্রিল ২০২৪
  • সুকান্ত বসু, কলকাতা: গত কয়েক বছর ধরে নববর্ষে ক্যালেন্ডারের পরিবর্তে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলি মিষ্টির প্যাকেট ও নানাধরনের উপহার দেয়। এরকম রেওয়াজ শুরু হয়েছে। এর ফলে ক্যা঩লেন্ডারের বাজার পড়েছে মুখ থুবড়ে। নতুন প্রজন্ম ক্যালেন্ডার একদমই দেখেন না। একেবারেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। সাজানো ফ্ল্যাট বা বাড়ির দেওয়ালে ঢাউস আকারের ক্যালেন্ডার হাওয়ায় দোল খেতে থাকুক, তা তাঁরা একেবারেই দেখতে চান না। তারিখ দেখতে হলে এখন মোবাইলই ভরসা সবার। ফলে বাংলার তারিখ দেখার জন্য ক্যালেন্ডার রাখার দরকার এখন কারও পড়ে না। রবিবার বাংলা নববর্ষ। এই বিশেষ দিনে বাঙালি রীতি মেনে বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে হালখাতা হয়। ব্যবসায়ীরা সরবত, মিষ্টির বাক্স ও ক্যালেন্ডার দেন। কিন্তু গত কয়েক বছরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ক্যালেন্ডার দেওয়া ছেড়েছে। তাঁরা মিষ্টির প্যাকেটের সঙ্গে দিচ্ছেন অন্য কোনও উপহার। 

    কয়েক বছর আগেও বড়বাজারে চীনা বাজার স্ট্রিটে ক্যা঩লেন্ডার পট্টিতে নববর্ষ থেকে অক্ষয় তৃতীয়া পর্যন্ত তিল ধারণের জায়গা থাকত না। রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা খুচরো ব্যবসায়ীদের ভিড়ে গমগম করত এলাকা। দেখা যেত বড়বাজারের বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে মোটবাহকদের মাধ্যমে বান্ডিল বান্ডিল ক্যালেন্ডার গাড়িতে বোঝাই হচ্ছে। সেই ছবিটা গত কয়েক বছর ধরে ফিকে। বৃহস্পতিবার বড়বাজারে ক্যালেন্ডার পট্টিতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, কোনও ব্যস্ততা নেই। ব্যবসায়ীরা গল্পগুজব করছেন। গদিতে বসে হাই তুলছেন। মনও খারাপ তাঁদের। 

    ক্যালেন্ডার ব্যবসায়ী রাজেশ সাউ বলেন, ‘গত বছর প্রায় ৪০টি সংস্থা থেকে ক্যা঩লেন্ডারের বরাত পেয়েছিলাম। এবার বাংলা নববর্ষে মাত্র ৩০টির মতো প্রতিষ্ঠান থেকে বরাত পেয়েছি।’ ব্যবসায়ী গণেশ সিং বলেন, ‘আগের বার ২০টি পেয়েছিলাম। এবার ২৬টি।’ 

    গড়িয়ার শাড়ি ব্যবসায়ী সমর পবন বলেন, ‘ডিজিটাল মাধ্যম আসার পর এখন আমরা সব কিছুই পেয়ে যাই সেখানে। ফলে ক্যালেন্ডারের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে অনেকে। তাই আমরাও অল্প স্বল্প বরাত দিচ্ছি। আগে সবাইকেই মিষ্টির প্যাকেটের সঙ্গে ক্যালেন্ডার দিতাম। এখন অনেক খদ্দেরই তা নিতে চান না।’ হাওড়ার শিবপুরের রেডিমেড পোশাকের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আগের মতো ব্যবসার সেই রমরমা নেই। ফলে আগে ৪০০ ক্যালেন্ডার করতাম। এবার ২০০টি করেছি।’ বেলঘরিয়ার বই-খাতা ব্যবসায়ী তপন মালাকার বলেন, ‘যেভাবে দাম বাড়ছে তাতে আর কুলোতে পারছি না। এখন যাঁরা নিয়মিত জিনিসপত্র কিনে থাকেন, তাঁদেরকেই ক্যালেন্ডার দিচ্ছি। গত বছর ৫০০ টি অর্ডার দিয়েছিলাম। এবার দাম বেড়ে যাওয়ায় ৩০০টি বরাত দিয়েছি।’  ক্যালেন্ডারের দোকানে খদ্দেরের অপেক্ষায় বিক্রেতারা।-নিজস্ব চিত্র                  
  • Link to this news (বর্তমান)