• অনুব্রতর আরও ১০ কোটি? সিবিআই নজরে ব্যাঙ্ক ম্যানেজার
    বর্তমান | ২৫ নভেম্বর ২০২২
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: গোরুপাচার কাণ্ডে তদন্তের ফাঁস আরও শক্ত করছে সিবিআই ও ইডি। খোঁজ চলছে তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল ও তাঁর পরিবারের লুকিয়ে রাখা টাকার। বীরভূম ও লাগোয়া জেলাগুলির একাধিক ব্যাঙ্ক এখন তদন্তকারী অফিসারদের ‘স্ক্যানারে’। তাতেই কেষ্টর বেনামে গচ্ছিত আরও ১০ কোটি টাকার হদিশ মিলেছে বলে কেন্দ্রীয় এজেন্সি সূত্রে খবর। একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে রয়েছে ওই অ্যাকাউন্ট। সম্প্রতি সেটির লেনদেনের তথ্য সিবিআই ও ইডি আধিকারিকদের নজরে আসে। তদন্তে জানা গিয়েছে, অ্যাকাউন্টের মালিকের নাম অন্য হলেও ওই টাকার আসল মালিক তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি। আধিকারিকদের দাবি, গোরুপাচার করেই এসেছে ওই বিপুল পরিমাণ এই অর্থ। তাই পুরোপুরি নগদে তা জমা করা হয়েছিল। এব্যাপারে বিশদে জানতে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের ম্যানেজারকে ডেকে একদফা জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তদন্তকারীরা। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়াকেও জানানো হয়েছে যাবতীয় তথ্য। রিপোর্ট যাচ্ছে অর্থমন্ত্রকের কাছেও।

    লটারি ছাড়া আর কীভাবে গোরুপাচারের কালো টাকা সাদা করেছেন অনুব্রত? হন্যে হয়ে সেব্যাপারে সূত্র খুঁজছেন তদন্তকারী অফিসাররা। তা করতে গিয়ে আধিকারিকদের হাতে এসেছে বিভিন্ন ব্যাঙ্কে বেনামে খোলা কেষ্টর একাধিক অ্যাকাউন্টের তথ্য। জানা গিয়েছে, ভুয়ো কোম্পানির সঙ্গে আর্থিক লেনদেন দেখিয়ে ঘুরপথে টাকা ঢোকানো হয়েছে সেখানে। এবিষয়ে কেষ্টর দেহরক্ষী সায়গলের বয়ানই এখন হাতিয়ার আধিকারিকদের। তাঁরা জেনেছেন, বীরভূমে সমস্ত সরকারি- বেসরকারি ব্যাঙ্ক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সিংহভাগ চলত অনুব্রতর অঙ্গুলিহেলনে। অভিযোগ, সেখানকার ম্যানেজারদের ফোনে নির্দেশ দিতেন তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি। সেই ‘কল ডিটেইলস’ হাতে এসেছে সিবিআইয়ের। আধিকারিকদের দাবি, ব্যাঙ্ক আধিকারিকদের উপর প্রভাব খাটিয়েই নিজের এবং পরিবারের বিভিন্ন সদস্যদের নামে একাধিক অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন কেষ্ট। শুধু তাই নয়, অন্যের নথি জোগাড় করে তাঁদের নামেও আমানত জমা করা হয়।

    সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কগুলির সদর দপ্তরে চিঠি পাঠিয়ে এব্যাপারে যাবতীয় নথি সংগ্রহ করেছে সিবিআই। সেগুলি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে ওই বেসরকারি ব্যাঙ্কের একটি অ্যাকাউন্টের লেনদেন তদন্তকারীদের নজরে আসে। দেখা যায়, সেখানে ধাপে ধাপে ১০ কোটি টাকা জমা পড়েছে। আর পুরো টাকাটাই এসেছে নগদে। কিন্তু তা সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের নজরে এল না কেন? এর উত্তর জানতেই ডেকে পাঠানো হয় ব্যাঙ্ক ম্যানেজারকে। বিপুল পরিমাণ টাকার উৎস নিয়ে কোনও ‘এনকোয়ারি’ কিংবা রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে জানানোর মতো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল কি না, সেই প্রশ্নও করা হয় তাঁকে। জবাবে ব্যাঙ্ক ম্যানেজার জানান, কিছুই করেননি। এপ্রসঙ্গে অনুব্রতর চাপের কথা কার্যত স্বীকার করেছেন তিনি। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাঙ্কে কেষ্টর নামে বেনামে গচ্ছিত প্রায় ২৫ কোটি টাকার বিষয়ে তথ্য এসেছে সিবিআইয়ের হাতে। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, ওই টাকা যে গোরু, বালিপাচার সহ বিভিন্ন অবৈধ উপায়ে রোজগারের, তা সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক ম্যানেজাররা জানতেন। তাঁদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সূত্রের খবর, সরকারি নিয়ম না মানায় ম্যানেজারদের বিরুদ্ধে আরবিআই সহ সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কগুলির সদর দপ্তরে রিপোর্ট পাঠিয়েছে সিবিআই। প্রয়োজনে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
  • Link to this news (বর্তমান)