• ফুটবল অন্ত প্রাণ, ঋণ নিয়ে দোহার পথে পঙ্কজ
    বর্তমান | ২৫ নভেম্বর ২০২২
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, চুঁচুড়া: শাস্ত্রে ঋণ করে ঘি খাওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু বিষয়টি যদি হয় বাঙালি আর ফুটবল, তাহলে শাস্ত্রের বিধান বদলে যেতেই পারে। যেতে পারে নয়, যাচ্ছেই। তাই ঋণ করেই কাতারে রওনা হচ্ছেন বৈদ্যবাটির প্রৌঢ়। তাঁর লক্ষ্য, দু’টি সেমিফাইনাল আর ফাইনাল ম্যাচ দেখে ঘরে ফেরার। ব্রাজিল হবে এবারের বিশ্বকাপের হকদার, এই স্বপ্ন নিয়েই পাড়ি দেবেন তিনি। ৯ ডিসেম্বর দোহার পথে শুভযাত্রা। হুজুগ ভাবার কোনও অবকাশ নেই। কারণ, গত ২৪ বছর ধরে ফুটবল বিশ্বকাপের অন্তিম পর্বের কোনও ম্যাচ ছাড়েননি বৈদ্যবাটির পঙ্কজ ঘোষ। সশরীরে মাঠে হাজির থাকেন ফুটবল পাগল এই মানুষ। এবারও  সেই ধারায় ছেদ পড়ছে না। পাঁচ লক্ষ টাকা ঋণের বোঝা কাঁধে নিয়েই ‘মাঠে’ নামছেন এই প্রৌঢ়।

    পঙ্কজবাবুর কথায়, ১৯৯৮ সাল থেকে সমস্ত বিশ্বকাপের আসরে হাজির থেকেছি। এবার যখন নিজের জমানো টাকায় কুলিয়ে উঠতে পারলাম না, তখন ঋণ করলাম। আসলে বিশ্বকাপ খেলা মাঠে বসে দেখতে পারব না, ভাবতে কষ্ট হয়। চোখের সামনে যখন দেখি স্বপ্নের খেলোয়াড়দের, তখন চিমটি কেটে দেখি— স্বপ্ন দেখছি না তো! পুরনো ধাঁচের বাড়ির চাতালে বসা মানুষটি যখন কথা বলছিলেন, তখন চশমার ফাঁক দিয়ে চকচক করছিল চোখ দু’টি। 

    ফুটবলের নেশা সেই ছেলেবেলা থেকেই। শয়নে, স্বপনে এবং বিস্মরণেও তাঁর সঙ্গী ফুটবল। বেসরকারি বিমা সংস্থায় কাজ করার পাশাপাশি ফুটবলের কোচিংয়েও নিজেকে মগ্ন রেখেছেন পঙ্কজবাবু। বৈদ্যবাটির একটি ক্লাবের মাঠে ছোটদের ফুটবলের পাঠ দেওয়ার দায়িত্ব তাঁর কাঁধে। একটি বিশ্বকাপ কাটলেই পরেরটার জন্য অপেক্ষা করে থাকেন তিনি। জীবনের সব দায়িত্ব যেমন অক্লেশে পার করেছেন, তেমনই নিজের ‘প্রেমে’র প্রতি দায়বদ্ধতা অটুট। তাই অর্থকষ্ট থেকে পথশ্রম, ভিন দেশের শহরে শহরে ছুটে বেড়ানোর কষ্ট, কিছুই তাঁকে ধরে রাখতে পারেনি। বিশ্বকাপের বাঁশি যেন শ্যামের বাঁশরি। এ এক অমোঘ হাতছানি!

    চোখে চশমা আছে। প্রৌঢ়ত্বের ভার আছে শরীরে। কিন্তু নিজেকে তারুণ্যের তেজে ধরে রেখেছেন পঙ্কজবাবু। তাই সয়ে নেন যাবতীয় ঝক্কি। শুধু ফুটবলের টানে জাপান বিশ্বকাপে গিয়ে দিনের পর দিন শুয়ে থেকেছেন স্টেশনে। হ্যাঁ, ঘর জোটেনি। কিন্তু তাতে কী? বিশ্বকাপ তো আর প্রতিদিন আসে না। এমনই উন্মাদনা সওয়ার হয় পঙ্কজবাবুর শরীরে। দেশ-বিদেশে খেলা দেখতে যাওয়ার সুবাদে এনেছেন অনেক স্মারক। প্রাণপ্রিয় সেসব আগলে রাখেন পরম মমতায়। ছুটে যান ইউরো কাপ, কোপা আমেরিকা দেখতেও। ফুটবল শুনলেই খসে পড়ে যাবতীয় বন্ধন। তখন শুধু জেগে থাকে বিশ্বমঞ্চের পায়ের জাদু আর তাতে বুঁদ হয়ে থাকা পঙ্কজ ঘোষ।
  • Link to this news (বর্তমান)