পাকিস্তানের পরবর্তী সেনাপ্রধান হিসাবে লেফটেন্যান্ট জেনারেল আসিম মুনিরের নাম বৃহস্পতিবারেই ঘোষণা করেছিল পাকিস্তান। তবে এই ঘোষণার মধ্যে নতুন কোনও চমক ছিল না। কারণ বিদায়ী সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়ার ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসাবে পরিচিত মুনিরের নাম নিয়ে সে দেশের প্রচারমাধ্যমে গত কয়েক দিন ধরেই চর্চা চলছিল। পাক রাজনীতির নেপথ্য নিয়ন্ত্রক হিসাবে খ্যাত সেনাবাহিনীর প্রধান হিসাবে মুনিরের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে ইতিমধ্যেই জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে পাকিস্তানের অন্দরের খবর, সীমান্তে এখনই আগ্রাসী হতে পারবেন না মুনির। বরং আপাতত ঘরের ঝামেলাই সামলাতে হবে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর প্রাক্তন এই ডিজিকে।
পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বারবার অভিযোগ করেছেন যে, বিরোধী দলগুলি সেনাবাহিনীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে তাঁকে পদ থেকে অপসারিত করেছে। এ বিষয়ে আমেরিকার মদত আছে বলেও দাবি করেছিলেন তিনি। সে দেশের পরবর্তী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত ইমরান এই বিষয়টিকে জিইয়ে রাখতে চাইবেন বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ। ইতিমধ্যেই ইমরানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) রাওয়ালপিন্ডিতে সেনার সদর দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখানোর কর্মসূচি নিয়েছে। সেনার প্রতি জনসাধারণের বড় একটা অংশের আস্থা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা ফেরাতে কঠোর পদক্ষেপ করতে হতে পারে মুনিরকে।
তালিবানশাসিত আফগানিস্তান আবার পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের মধ্যে থাকা ডুরান্ড লাইনকে সীমান্ত হিসাবে মানতে অস্বীকার করেছে। তালিবদের দাবি, পশতুভাষীদের বিচ্ছিন্ন করার এই সীমান্ত তুলে দিতে হবে। এই সঙ্কটেরও মোকাবিলা করতে হবে নয়া সেনাপ্রধানকে। আবার বালুচিস্তান লিবারেশেন আর্মির মতো যে ছোট-বড় সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলি পাকিস্তানের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে আছে, তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে ইসলামাবাদের মাথাব্যথা বাড়তে পারে। এই প্রতিকূলতাকে জয় করেই এগোতে হবে মুনিরকে।
মুনির যে সময় আইএসআইয়ের ডিজি ছিলেন, সে সময়ই এই পাক গুপ্তচর সংস্থাটি পুলওয়ামার সিআরপিএফ কনভয়ে আত্মঘাতী জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা করেছিল। ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারির ওই গাড়িবোমা হামলায় নিহত হয়েছিলেন ৪০ জন সিআরপিএফ জওয়ান। তবে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের একটি সূত্রে জানা যাচ্ছে, মুনিরের অতীত নিয়ে ভাবতে চাইছে না নয়াদিল্লি। তবে দেশের অভ্যন্তরের অস্থিরতা থেকে নজর ঘোরাতে তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন পাক সেনা নতুন করে সীমান্তে সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করে কি না, সে বিষয়ে সজাগ নজর রাখতে চাইছে ভারত।