• London: নভেম্বরে অকাল বসন্ত লন্ডনে
    আজকাল | ২৭ নভেম্বর ২০২২
  • তমালিকা বসু, লন্ডন: বাগানের ধনেপাতা গাছ থেকে পাতা ছেঁড়ার সময় প্রথম লক্ষ্য করেছিলাম ব্যাপারটা।

    নভেম্বরের শনিবারে মাছের ঝোলে দেওয়ার জন্যে ধনেপাতা এখনও বাজার থেকে কিনতে হচ্ছে না দেখে অবাক হয়েছিলাম। সবুজ বাহারি গাছ এখনও সতেজ রয়েছে। পাশের গোলাপও টানটান। লালচে গোলাপি ফুল বেশ থোকার মতো হয়েছে। কয়েকটা কুঁড়িও মাথা তুলে রয়েছে দিব্যি। 

    সাধারণত নভেম্বরে বাগান কালচে বাদামি হয়ে যায়। অক্টোবরের শেষে এবং নভেম্বরের শুরুতে পাতা সব ঝরে যায়। কনকনে হিমেল হাওয়া প্রাকৃতিক সবুজ রং শুষে কঙ্কালসার কালো গাছে পরিণত করে। কিন্তু এ বছর ব্রিটেনে সব উলট পুরান। আবহাওয়ার ভেলকি গত ৩০ বছরের সব নিয়ম পাল্টে দিয়েছে। বিশ্ব উষ্ণায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের দাপটে নভেম্বরে এখন অকাল বসন্ত দেখা দিয়েছে ইংল্যান্ডের মাঠেঘাটে। বাগানে ও ঝোপ ঝাড়ে গুল্ম লতা, জংলি ফুল ইত্যাদি উপচে পড়ছে যেগুলো সাধারণত অক্টোবরের পর আর দেখা যায় না। 

    ডেভন, ওকিং বা সারির মতো লন্ডনের আশপাশের বিভিন্ন রয়্যাল হর্টিকালচারাল সোসাইটির গার্ডেন্সগুলো তাই নভেম্বরে 'দ্বিতীয় বসন্ত'র আগমনে ভাসছে। 

    আবহাওয়া অফিস বলছে, নভেম্বরে গড়ে আড়াই ডিগ্রি বেশি গরম পড়েছে ব্রিটেনে। অক্টোবরে শেষের সপ্তাহে যখন তাপমাত্রা নিম্নমুখী থাকার কথা, তখন ব্রিটেন ও পশ্চিম ইউরোপে ২০ ডিগ্রির উপর তাপমাত্রা ছিল। যা ৩০ বছরের রেকর্ডে নজিরবিহীন ঘটনা। এরপর নভেম্বরে শুরু হয় বৃষ্টি। এখনও পর্যন্ত লন্ডনে গড়ে তাপমাত্রা রয়েছে ১০-১২ ডিগ্রি। সকালের দিকে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকছে ৬-৭ ডিগ্রি। এমতাবস্থায় বোটানিস্ট বা উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, গাছের জীবন চক্রে বিশেষ প্রভাব ফেলেছে এই আবহাওয়ার পরিবর্তন। মনে রাখতে হবে, জুলাই, আগস্টে তুমুল গরম পড়ার পাশাপাশি ব্রিটেনে দাবদাহ ও খরা চলছিল। অনেক গাছই তখন শুকিয়ে গিয়েছিল। এখন তারা মনোরম আবহাওয়া ও জল পেয়ে প্রস্ফুটিত হচ্ছে। 

    রয়্যাল হর্টি কালচারাল সোসাইটির অন্তর্গত ১০টি বাগানে এখন দর্শনার্থীদের চাহিদা অনুযায়ী গেট খোলা রাখতে বাধ্য হয়েছেন কর্তারা। পাতা ঝরার এই মরসুমে ব্রিটেনের কান্ট্রি-সাইড বা গ্রামাঞ্চলের বিশাল বিস্তৃত বাগান দেখতে কেউ যায় না। কিন্তু হালকা শীত ও রং বাহারি ফুসিয়া, স্যালভিয়ার ফুলের ঝার এবার ভিড় টানছে। কর্তাদের মতে, উৎসাহী মানুষ ফুলের সারি দেখতে এই মাসে পা বাড়াচ্ছেন, এটা অবশ্যই অর্থনৈতিক রূপে ভাল। কিন্তু মনে রাখতে হবে এই অনাগত বসন্তের খেসারত আমাদের পরবর্তী মরসুমে দিতে হবে। উদ্ভিদের জীবন চক্রের সঙ্গে প্রাণীজগতের সংযোগ রয়েছে। আবহাওয়া সেই ভারসাম্য আঘাত করছে। 
  • Link to this news (আজকাল)