• Neymar: আমি কখনও কারও ক্ষতি করিনি, বরং পাশে থেকেছি, তাই বিশ্বাস করি এই বিশ্বকাপেই মাঠে ফিরব:‌ নেইমার
    আজকাল | ২৭ নভেম্বর ২০২২
  • মুনাল চট্টোপাধ্যায়, দোহা

    চোট যেন ব্রাজিল তারকা নেইমারের পিছন ছাড়তেই চায় না।

    ২০১৪য় ঘরের মাঠের বিশ্বকাপে জুনিগোর হাঁটুর গুঁতোয় নেইমারের মেরুদন্ডের গুরুতর আঘাতে বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন চুরমার হয়েছিল ব্রাজিলের। ২০১৮য় রাশিয়ায় খেলতে এসেছিলেন নেইমার পায়ের নতুন চোট সারিয়ে। আর সে কারণেই পুরো ছন্দে নেইমারকে সেবার পাওয়া যায়নি। এবার কাতারে কিন্তু পুরো ফিট হয়েই কাতার বিশ্বকাপে এসেছিলেন তিনি। ব্রাজিলের প্রচারমাধ্যমের বন্ধুরাই সার্বিয়া ম্যাচের আগে জানিয়েছিলেন, পুরো ফিট বলেই নেইমারের মধ্যে একটা বাড়তি চনমনে ভাব রয়েছে। একসঙ্গে অনেকদিন চেনা ফুটবলারদের সঙ্গে কাটানোয় নেইমারের আত্মবিশ্বাসও তুঙ্গে। ব্রাজিল সমর্থকরা নেইমারের হাতে কাপ দেখছেন। কিন্তু এখানে সার্বিয়া ম্যাচে নেইমার চোট পাওয়ার পর পুরো ছবিটাই বদলে গেছে। ব্রাজিল সমর্থকরা ভীষণভাবে মুষড়ে পড়েছেন নেইমার গ্রুপ পর্যায়ের বাকি দু’‌ম্যাচে খেলতে পারবেন না জেনে। 

    এদিন মেন মিডিয়া সেন্টার আসার জন্য অলবিদা মেট্রো স্টেশনে দাঁড়িয়েছিলাম। কাতার ন্যাশানাল লাইব্রেরি স্টেশনে নেমে অনেকটা হেঁটে মিডিয়া সেন্টারে যেতে হয়। তখনই দেখা হল ব্রাজিলের জার্সি গায়ে দুই সমর্থকের সঙ্গে। পাবলো ও ম্যানুয়েল। সুদূর সাও পাওলো থেকে কাতারে এসেছেন কোরেন্থিয়ান্স ক্লাবের দুই সমর্থক নেইমারের বিশ্বকাপ জয় দেখবেন বলে। নেইমারের চোট পাওয়ার খবর পাওয়ার পর থেকে প্রচন্ড মন খারাপ। আমার কাছে জানতে চাইছিলেন, নেইমারের চোট নিয়ে নতুন কোনও খবর আছে কিনা?‌ আমি ওঁদের আশ্বস্ত করার ভঙ্গিতে শুধু এটুকুই বলছি, গ্রুপ পর্যায়ে বাধা টপকে নক আউট পর্বে ব্রাজিল গেলে নেইমারকে পাওয়া যেতে পারে। নেইমার যাতে দ্রুত ফিট হয়ে যান, তার জন্য রিওর ক্রাইস্ট দ্য রিডিমারের কাছে দিনরাত প্রার্থনা শুরু করেছেন পাবলো ও ম্যানুয়েলের মতো অসংখ্য ব্রাজিল সমর্থক।

    এমনটা বললাম ঠিকই, তবে ব্রাজিল দলের ডাক্তার নেইমারের চোট নিয়ে যেন নতুন তথ্য দিয়েছেন, তাতে নেইমারকে আর বিশ্বকাপে খেলতে দেখতে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। ডানপায়ের গোড়ালির লিগামেন্ট প্রবলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি হাড়ের একটা অংশ ফুলেছে। এটা না কমলে মাঠে নামার প্রশ্ন নেই। 

    তবে ব্রাজিল কোচ টিটের মতো নেইমারও চোট সারিয়ে বিশ্বকাপের মঞ্চে ফিরতে আগ্রহী শুধু নন, আত্মবিশ্বাসী। নেইমার নিজেই টুইট করেছেন, ‘‌ব্রাজিল জার্সি গায়ে চাপিয়ে যে গর্ববোধ করি ও আনন্দ পাই, তা এককথায় অসাধারণ। এনিয়ে কোনও কথা হবে না। আমাকে যদি ভগবান বিশ্বের কোনও দেশে জন্মগ্রহনের প্রস্তাব দেন, তাহলে আমি ব্রাজিলকেই বাছব। কোনকিছুই আমার জীবনে সহজ ভাবে আসেনি। স্বপপূরণের লক্ষ্যে আমাকে সবসময় ছুটতে হয়েছে নির্দিষ্ট ভাবনা নিয়ে। কখনও জীবনে কারও ক্ষতি করা দূরে থাক, চাইনি। বরং সবসময় সকলের পাশে থাকতে চেষ্টা করি। এটা আমার জীবনের অন্যতম কঠিন সময়। আর সেটা আবার বিশ্বকাপেই। হ্যাঁ, আমি চোট পেয়েছি। এটা বোরিং। অসহ্য। আমাকে খুব কষ্ট দিচ্ছে। কিন্তু আমি নিশ্চিত চোট সারিয়ে আমি এই বিশ্বকাপেই আবার ফিরব। দেশের জার্সিতে সেরা দিয়ে সতীর্থ ও দলকে সাহায্য করব। এইভাবে আমাকে আঘাত করে সরিয়ে দিতে কি শত্রুদের অনেকদিন অপেক্ষা করতে হয়েছে?‌ মনে হয় না সেটা পারবে। আমি ঈশ্বরের বরপুত্র, তাঁর ওপর আমার অগাধ বিশ্বাস।’‌ নেইমারের এই বিশ্বাসটাই এখন মস্ত বড় ভরসা ব্রাজিল শিবিরে। 
    চোটের কঠিন মুহূর্তে তাঁর পাশেই আছেন দলের বাকি ফুটবলাররা। বরং সতীর্থ হাফিনিয়া একহাত নিয়েছেন ব্রাজিল ভক্তদেরই। সার্বিয়া ম্যাচে চোট পেয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময়র গ্যালারিতে একদল সমর্থকের মুখে বিদ্রুপের আওয়াজ শুনেছিলেন তিনি। তাতেই ক্ষুব্ধ হাফিনিয়ার বক্তব্য, ‘‌আর্জেনটিনার সমর্থকরা মেসিকে ভগবান মানে। পর্তুগালে রোনাল্ডোর একইরকম সম্মান। সেখানে একদল ব্রাজিল সমর্থক নেইমারের পা ভাঙার জন্য বসে থাকে। নেইমারের মতো প্রতিভার কদর হয় না। এটাই দুর্ভাগ্য। আমরা অবশ্য সকলে নেইমারের সঙ্গেই আছি। নিশ্চিত ও এই বিশ্বকাপেই দলে ফিরবে।’‌ 
    ব্রাজিল গোলকিপার অ্যালিসন আর একটু গলা চড়িয়ে বলেছেন, ‘‌নেইমার খেলতে না পারলেও দলের সঙ্গে ওর থাকাটাই প্রেরণা। আর এমন পরিস্থিতিতে আমাদের চোয়ালটা আরও শক্ত হয়। কঠিন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায়। চাই নেইমার দ্রুত দলে ফিরুক। এখন ওকে ছাড়া গ্রুপের লিগের বাকি দু’‌ম্যাচ জিতে নকআউটে জায়গা পাকা করাই লক্ষ্য। শেষ ষোলোয় নেইমারের থাকাটা খুব দরকার। দেখা যাক, আমরা সকলে প্রার্থনা করছি ওর ফিট হওয়ার আশায়। ২০ বছরের ট্রফি খরা মিটিয়ে নেইমারের হাতে বিশ্বকাপ তুলে দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের সকলের।’‌ 

    ব্রাজিল কোচ টিটের কথায় ইঙ্গিত মিলেছে, নেইমারের অভাব মেটাতে তিনি সুইজরাল্যান্ড ম্যাচে রডড্রিগো, গ্যাব্রিয়েল জেসুসদের তৈরি রাখছেন। এর আগে ২০১৯য়ে নেইমার নির্ভরতা কাটিয়ে টিটের ব্রাজিল কোপা আমেরিকা জিতেছিল। চোটের জন্য ওই টুর্নামেন্টে খেলেননি নেইমার। ব্রাজিল কোচ টিটে কাতারে তাঁর ফুটবলারদের সেকথা মন করিয়ে উজ্জীবিত করছেন সুইজারল্যান্ড ম্যাচের আগে।
  • Link to this news (আজকাল)