• Argentina-Mexico: মেসি ম্যাজিকে নকআউটের দৌড়ে প্রবলভাবে ভেসে রইল আর্জেন্টিনা 
    আজকাল | ২৭ নভেম্বর ২০২২
  • আর্জেন্টিনা - ২ (মেসি, ফার্নান্দেজ) 

    মেক্সিকো - ০

    আজকাল ওয়েবডেস্ক: অ্যাসিড টেস্টে স্টার মার্কসে উত্তীর্ণ লিওনেল মেসি। ঘোঁচালেন বিশ্বকাপে পারফর্ম না করতে পারার বদনাম। আগের দিন পর্যন্ত স্টার ফুটবলারের চোট নিয়ে জল্পনা চলছিল। এদিন এলেন, দেখলেন, জয় করলেন। চোখ ধাঁধানো গোল লিওনেল মেসির। বিশ্বমানের গোল এঞ্জো ফার্নান্দেজের। চারদিন আগে যেই মাঠ থেকে মাথা নত করে বেরতে হয়েছিল, আজ সেই স্টেডিয়ামই রূপকথার প্রত্যাবর্তন দেখল। শনিবার লুসেইল স্টেডিয়ামে মেক্সিকোকে ২-০ গোলে হারিয়ে নকআউটের দৌড়ে প্রবলভাবে রইল আর্জেন্টিনা। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে পোল্যান্ডকে হারালে গ্রুপের একনম্বর দল হিসেবে শেষ ষোলোয় চলে যাবে অ্যালবিসিলেস্তেরা। ড্র করলেও রাস্তা খোলা থাকছে। তবে সেক্ষেত্রে গোল পার্থক্যের ওপর নির্ভর করতে হবে। চলে আসবে অনেক অঙ্ক।

    এদিন ৬৪ মিনিটে আসে সেই বহু আকাঙ্খিত মেসি মোমেন্ট। বক্সের বাইরে থেকে বাঁ পায়ের গড়ানো শট ওচোয়াকে পরাস্ত করে বল গোলে ঢুকে গেল। বাঁধনহারা উচ্ছ্বাসে মাতল মেসি অ্যান্ড কোম্পানি। সাধারণত শান্ত‌ স্বভাবের। আবেগের বহির্প্রকাশ নেই। রোনাল্ডোর মতো কোনও ট্রেডমার্ক সেলিব্রেশনও নেই। বাহ্যিক দেখনদারী একেবারেই নাপসন্দ। কিন্তু এদিন গোলের পর লুসেইল স্টেডিয়ামে ডানা মেলে উড়লেন মেসি। এক ছুটে চলে যান গ্যালারির সামনে। সতীর্থদের সঙ্গে গোল উজ্জাপনের পর সমর্থকদের অভিবাদন গ্রহণ করলেন। দু'হাত শূন্যে তুলে তাতালেনও। গর্জে উঠল স্টেডিয়াম। মেসির ঠোঁটের মুভমেন্ট দেখে বোঝা গেল বললেন, 'ওয়ান্স মোর।' শেষ কবে মেসিকে এইভাবে দেখা গিয়েছে জানা নেই। তবে অভিব্যক্তি দেখে আঁচ পাওয়া গেল কতটা চাপে ছিলেন আর্জেন্টিনার অধিনায়ক। আজ যেন কিছুটা হাফ ছেড়ে বাঁচলেন। কিছুক্ষণ আগেই বিশ্বকাপে সপ্তম গোল করে মেসিকে ছুঁয়েছিলেন এমবাপে। আরও একধাপ এগিয়ে গেলেন আধুনিক ফুটবলের রাজপুত্র। ছুঁয়ে ফেললেন দিয়েগো মারাদোনাকে। বিশ্বকাপে ২১ ম্যাচে ৮ গোল ছিল কিংবদন্তির। সমসংখ্যক ম্যাচেই মারাদোনাকে ছুঁলেন মেসি। বিশ্বকাপের ম্যাচের সংখ্যায় এদিন দিয়েগো মারাদোনাকে ছোঁয়ার নজির গড়েন।

    এটা আর্জেন্টিনার অধিনায়কের ২১তম ম্যাচ। গতকালই গিয়েছে বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলারের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। মেক্সিকোকে হারিয়েই মারাদোনাকে শ্রদ্ধা জানাতে চেয়েছিলেন স্কালোনি। আর্জেন্টিনা কোচের আশা পূরণ করলেন মেসি। ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে দলকে নক আউটের দৌড়ে টিকিয়ে রাখলেন। 

    বিশ্বকাপের মঞ্চে মেক্সিকোর কাছে হারেনি আর্জেন্টিনা। শেষ ১০টি ম্যাচ জেতে অ্যালবিসিলেস্তেরা। সেই ট্রেন্ড বজায় থাকল। সৌদি আরব ম্যাচের দলে পাঁচটি পরিবর্তন করেন লিওনেল স্কালোনি। ৪-৪-২ ফরমেশনে দল সাজান। প্রথমার্ধ একেবারে ম্যাড়ম্যাড়ে। মেসি, ডি মারিয়াদের খেলা দেখা বোঝা দায় এটা তাঁদের কাছে কার্যত নক আউট ম্যাচ। কারোর মধ্যে কোনও বাড়তি তাগিদ চোখে পড়ল না। আধুনিক ফুটবলে উইং প্লে বড় ভূমিকা নেয়। কিন্তু মিডল করিডোর দিয়ে আক্রমণের চেষ্টা করে আর্জেন্টাইনরা।‌ যার ফলে মেক্সিকোর পায়ের জঙ্গলে আটকে যায়। প্রথমার্ধে কোনও পজিটিভ সুযোগ নেই। পরীক্ষার মুখেই পড়তে হয়নি ওচোয়াকে‌। দুই দলই যথেষ্ট ফিজিক্যাল ফুটবল খেলে। কোনও দলই সেইভাবে ডি বক্সে ঢুকতে পারেনি। ম্যাচের  ৩২ মিনিটে প্রথম কর্নার পায় আর্জেন্টিনা। এর থেকে ম্যাচের গতি প্রকৃতির আভাস পাওয়া যাচ্ছে। টিপিক্যাল সাউথ আমেরিকান ফুটবল। একমাত্র আক্রমণ বিরতির ঠিক আগে। নিজেদের মধ্যে বেশ কয়েকটা পাস খেলে মেক্সিকোর বক্সে ঢুকে পড়লেও ফলপ্রসূ হয়নি।

    মেক্সিকোর কোচ টাটা মার্টিনো দীর্ঘদিন আর্জেন্টিনার কোচ ছিলেন। মেসিদের দুর্বলতা জানেন। প্রথমার্ধে সেটাই কাজে লাগানোর চেষ্টা করেন। বিরতির আগে মেক্সিকোর পজিটিভ সুযোগ মাত্র একটা। ম্যাচের ৪৫ মিনিটে ভেগার ফ্রিকিক ডানদিকে ঝাঁপিয়ে তালুবন্দি করেন আর্জেন্টিনার গোলকিপার মার্টিনেজ। বিরতির ঠিক পরই সুবিধাজনক জায়গায় ফ্রিকিক পায় আর্জেন্টিনা। কিন্তু বল ক্রসপিসের ওপর দিয়ে ভাসিয়ে দেন মেসি। তবে দ্বিতীয়ার্ধে এক অন্য আর্জেন্টিনাকে পাওয়া গেল। যারা অনেক বেশি আগ্রাসী। ফলও মিলল। মেসির পাশাপাশি প্রশংসা করতে হবে ফার্নান্দেজের। দলকে এগিয়ে দিয়েছিলেন ফুটবলের রাজপুত্র। কিন্তু জয় নিশ্চিত করলেন তিনি। ম্যাচের ৮৭ মিনিটে বক্সের বাঁ দিকে দু'জন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ইনসাইড আউট ডজ করে দূরপাল্লার কোনাকুনি শটে দর্শনীয় গোল ফার্নান্দেজের। বুধবার রাতে পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে নামবে মেসিরা।‌
  • Link to this news (আজকাল)