দিব্যেন্দু বিশ্বাস, নয়াদিল্লি: ফেরেনি ট্রেনের টিকিটে কনসেশন। রেল যাত্রায় তাই কি মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন প্রবীণ নাগরিকরা? কারণ, ২০১৮-১৯ আর্থিক বছর থেকে ২০২১-২২ অর্থবর্ষ, এই চার বছরে রেলের প্রবীণ নাগরিক যাত্রীর সংখ্যা কমেছে দেড় কোটিরও বেশি। যার জেরে প্রবীণ নাগরিকদের টিকিট বিক্রি থেকে উল্লিখিত সময়ের মধ্যে রেলের আয় কমে গিয়েছে প্রায় ৩২১ কোটি টাকা। আরটিআইয়ের জবাবে যে আয়ের পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে, তা ‘ভাউচার’ এবং ‘কনসেশন’ অ্যামাউন্টকে বাদ রেখে বলা হয়েছে। রেল অবশ্য সাফাই দিয়ে বলেছে, করোনা মহামারীর কারণে ট্রেন চলাচলে প্রভাব পড়েছিল। তাই যাত্রী সংখ্যা কমেছে। কিন্তু ২০২১-২২ অর্থবর্ষে মোটের উপর রেল চলাচল স্বাভাবিক হয়ে যায়। তাই ওই সময় প্রবীণ যাত্রীর সংখ্যা কমে যাওয়ার পিছনে করোনা মহামারীর যুক্তি মোটেও খাটে না।
প্রসঙ্গত, শর্তসাপেক্ষে হাতেগোনা কয়েকটি ক্যাটিগরি চালু রেখে ২০২০ সালের মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে ট্রেনের টিকিটে কনসেশন ব্যবস্থা বন্ধ করে দিয়েছে রেল। তা আদৌ ফের চালু করা হবে কি না, সেই ব্যাপারে সংশয় রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই ছাড়ের বন্দোবস্ত বন্ধ করে দেওয়ায় বর্তমানে অনেক বেশি টাকা দিয়ে ট্রেনের টিকিট কাটতে বাধ্য হচ্ছেন প্রবীণ রেল যাত্রীরা। ফলে তৈরি হয়েছে তীব্র অসন্তোষ। সিনিয়র সিটিজেন যাত্রীর সংখ্যা কমে যাওয়ার পিছনে এই ক্ষোভের প্রভাব কাজ করছে বলে মনে করা হচ্ছে। আরটিআইয়ে জবাব থেকে দেখা যাচ্ছে, ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে মোট ৭ কোটি ১৯ লক্ষ ৮৭ হাজার প্রবীণ নাগরিক রেল যাত্রা করেছেন। ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৭ কোটি ২৯ লক্ষ ৯৯ হাজার। এই দু’বছরই ট্রেনের টিকিটে ছাড় পেয়েছেন প্রবীণ রেল যাত্রীরা। কিন্তু কনসেশন বন্ধ করার পর ২০২১-২২ আর্থিক বছরে প্রবীণ রেল যাত্রীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৫৫ লক্ষ ৪৩ হাজার জন। এই সংখ্যা ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষের তুলনায় ১ কোটি ৬৪ লক্ষ ৪৪ হাজার কম।
প্রবীণ নাগরিকদের টিকিট বিক্রি থেকে রেলের আয়ের পরিমাণ কত? ২০১৮-১৯ এবং ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে এই খাতে রেলের আয়ের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ২ হাজার ৯২০ কোটি এবং ৩ হাজার ১০ কোটি ৭৭ লক্ষ টাকা। অথচ ২০২১-২২ আর্থিক বছরে ওই আয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫৯৮ কোটি ৫৪ লক্ষ টাকা। অর্থাৎ, ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষের তুলনায় ৩২১ কোটি ৫২ লক্ষ টাকা কম। তবে রেল বোর্ড সূত্রে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে যে, ‘২০২০-২১ এবং ২০২১-২২ আর্থিক বছরে দেশ জুড়ে করোনা মহামারীর ব্যাপক প্রভাব পড়েছিল ট্রেন চলাচলের উপর। যার জেরে আয় এবং যাত্রী সংখ্যা কমেছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে দুটোই বৃদ্ধি পাচ্ছে।’