• জিএসটি আইনেই গলদ, হাজার হাজার কোটি রাজস্ব ক্ষতি রাজ্যে মোদি সরকারের ব্যর্থতায় বাংলাতেই ৮ হাজার কোটির প্রতারণা
    বর্তমান | ২৮ নভেম্বর ২০২২
  • বাপ্পাদিত্য রায়চৌধুরী, কলকাতা: এক দেশ, এক কর। এই ভাবনা থেকে দেশে চালু হয়েছে জিএসটি। কর ব্যবস্থা সরল করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সারা দেশে জিএসটি চালু করে নরেন্দ্র মোদির সরকার। কিন্তু বাস্তবে তেমনটা হল কই! জিএসটির নাম করে দেশের কয়েক কোটি ব্যবসায়ীকে বিপাকে ফেলা হয়েছে, এমন অভিযোগ আকছার উঠছে। শিল্পমহলের বক্তব্য, জিএসটি চালু হওয়ার পর থেকে ১ হাজার ২০০টিরও বেশি সংশোধনী আনা হয়েছে। তাদের অভিযোগ, জিএসটি ক্রমশ হয়ে উঠেছে অফিসারদের দুর্নীতির আখড়া। তড়িঘড়ি এই নতুন করকাঠামো চালু করার সুযোগ নিচ্ছে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। এ রাজ্যও তার বাইরে নয়। ২০১৭ সালে এই আইন চালু হওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত রাজ্যে জিএসটি প্রতারণা হয়েছে প্রায় আট হাজার কোটি টাকার। প্রতিবারই লাফিয়ে বেড়েছে প্রতারণার অঙ্ক। তিন হাজারের বেশি প্রতারণার ঘটনা সামনে এসেছে। তাতে রাজ্য সরকার যে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব হারিয়েছে, বলাই বাহুল্য। মূলত ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট বা আইটিসি সংক্রান্ত জালিয়াতিই সবচেয়ে বেশি। জিএসটি আইনে গলদ রয়েছে বলেই এই মাত্রাছাড়া প্রতারণা সম্ভব হচ্ছে এবং আনতে হচ্ছে ভূরি ভূরি সংশোধনী—এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। 

    মার্চেন্টস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল শুভাশিস রায়ের কথায়, আমাদের এখানে যেসব উদ্যোগপতি আছেন, তাঁদের থেকে প্রায়ই জিএসটি সংক্রান্ত নানা অভিযোগ পাই। এর থেকেই বোঝা যায়, গোটা ব্যবস্থা এখনও সম্পূর্ণভাবে শিল্পবান্ধব হতে পারেনি। আমাদের অভিজ্ঞতা বলছে, শিল্পক্ষেত্রের বেশিরভাগই ১৮ শতাংশ জিএসটির আওতায় পড়ে। তা কমানোর জন্য আর্জি জানান উদ্যোগপতিরা। সরকার আইনের গলদ মেরামত করে প্রতারণার রাস্তা বন্ধ করলেই জিএসটির হার কমিয়েও রাজস্ব বাড়ানো যায়।    

    জিএসটি সংক্রান্ত সমস্যায় সরব হয়েছে দেশের বৃহত্তম ব্যবসায়ী সংগঠন কনফেডারেশন অব অল ইন্ডিয়া ট্রেডার্স। তাদের কথায়, সম্প্রতি জিএসটি আইনে যে সংশোধনীগুলি আনা হয়েছে, তাতে করদাতাদের স্বাভাবিক নিয়মে বিচার পাওয়ার রাস্তাই নেই। কর্তৃপক্ষকে এমন ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে যে করদাতা বা ব্যবসায়ীকে কোনও নোটিস বা শুনানির সুযোগ না দিয়ে জিএসটি রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে দেওয়ার সুযোগ আছে। অফিসারদের হাতে অফুরন্ত ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তার যে চূড়ান্ত অপব্যবহার হতে পারে, সেদিকে নজরই দেওয়া হয়নি। 

    জিএসটি চালুর পক্ষে বরাবরই নিজের অবস্থান স্পষ্ট রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাড়াহুড়ো করে যেভাবে কেন্দ্রীয় সরকার জিএসটি চালু করেছে, তার ঘোর বিরোধিতা করেন তিনি। তাঁর সেই বিরোধিতা যে যথেষ্ট বাস্তবসম্মত, তা এখন পুরোপুরি স্পষ্ট। 
  • Link to this news (বর্তমান)