• FIFA World Cup 2022, ESP vs GER: ৬৩৭টি পাস খেলা স্পেনের তিকিতাকা-র বিরুদ্ধে লড়াই, ড্র করে কাপ যুদ্ধে টিকে থাকল জার্মানি
    ২৪ ঘন্টা | ২৮ নভেম্বর ২০২২
  • সব্যসাচী বাগচী 

    স্পেন: ১ ('৬২ আলভারো মোরাতা) 

    জার্মানি: ১ ('৮৩  নিকলাস ফুলক্রুগ) 

    ৯০ মিনিটের এমন যুদ্ধ দেখার জন্য অনেক রাত জাগা যায়। খোঁচা খাওয়া বাঘ জার্মানির (Germany) বারবার প্রত্যাবর্তন করার মরিয়া চেষ্টা। অন্যদিকে স্পেনের (Sapin) লড়াই ও তিকিতাকা। এবং সবাইকে ছাপিয়ে দুই 'সুপার সাব'-এর দারুণ গোল। স্পেনের আলভারো মোরাতা (Alvaro Morata) কিংবা জার্মানির নিকলাস ফুলক্রুগ (Niclas Fullkrug) দেখিয়ে দিলেন, হারার আগে হেরে যাওয়া তাঁদের অভিধানে নেই। ৬৩৭টি পাস খেলা স্পেনের তিকিতাকা-র বিরুদ্ধে লড়াই, ড্র করে চলতি বিশ্বকাপে (FIFA World Cup 2022)  টিকে থাকল জার্মানি। কারণ খেলার ফলাফল ১-১। মাত্র তিন ম্যাচের আন্তর্জাতিক কেরিয়ার। সেই স্বল্প অভিজ্ঞতা নিয়েই স্পেনের বিরুদ্ধে দ্বিতীয়ার্ধে বদলি নেমেছিলেন নিকলাস ফুলক্রুগ। সেই ফুলক্রুগই ত্রাতা হলেন জার্মানির। 

    পুরনো পরিসংখ্যান লেখার হরফেই ভালো লাগে। আদতে একেবারে শুকনো। এই যেমন ধরুন ৯০ মিনিটের যুদ্ধে স্পেন বনাম জার্মানির ইতিহাস। বিশ্বকাপ থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের অন্য প্রতিযোগিতা, সর্বত্র জার্মানির পাওয়ার ফুটবল দাপট দেখিয়েছে স্প্যানিশদের উপর। তবে আল বায়াত স্টেডিয়ামে এক অন্য স্পেনকে দেখা গেল। কোস্টারিকাকে সাত গোল দিয়ে এবারের বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করেছিল স্পেন। এবার নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ব্যাকফুটে থাকা জার্মানদের চোখে চোখ রেখে লড়াই করার সঙ্গে ভাগ্য দেবতাও দিল 'তিকিতাকা'-র আবিষ্কারকদের সঙ্গে। কিন্তু সেই ভাগ্য পুরো ম্যাচে স্থায়ী হল না। কারণ জার্মানরাও লড়াই ছাড়েনি। 

    লক্ষ্য তিন পয়েন্ট। সেইজন্য কাই হাভার্ৎজকে বসিয়ে স্ট্রাইকার হিসাবে টমাস মুলারকে খেলিয়েছিলেন জার্মান কোচ হ্যান্সি ফ্লিক (Hansi Flick)। স্পেনও থেমে থাকেনি। গত ম্যাচের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে শুরু থেকেই পাসের ফুলঝুরি দেখাতে লেগেছিল। তবে প্রথমার্ধের মাঝের দিকে দুই দলই স্লথ গতির ফুটবল খেলতে শুরু করে। দেখা যায় একাধিক মিস পাস! 

    এরইমধ্যে ২৫ মিনিটে সুযোগ পেয়েছিল জার্মানি। স্পেনের ভুল ডিফেন্সের সুযোগ নিয়ে শট মেরেছিলেন নাব্রি। গোলের বাইরে দিয়ে বেরিয়ে গেল। ম্যানুয়েল ন্যুয়েরের (Manuel Neuer) ভুল ক্লিয়ারেন্স থেকে সুযোগ পেয়েছিল স্পেনও। কিন্তু কাজে লাগাতে পারল না। ৩২ মিনিটে আবার সুযোগ পায় স্পেন। এবার ফেরান তোরেস (Ferran Torres)। তবে বল জালেও রাখতে পারেননি। পারলেও অফসাইড হতেন।  

    খেলার বয়স তখন ৪০ মিনিট। বেশি পাস ও বল পজেশনের দিক থেকে স্পেন এগিয়ে থাকলেও, জার্মানির কাছে ব্যবধান বাড়িয়ে নেওয়ার দারুণ সুযোগ চলে এসেছিল। জোশুয়া কিমিচের (Joshua Kimmich) ফ্রিকিক থেকে মাথা ছুঁইয়ে গোল করেছিলেন অ্যান্টনিও রুডিগার (Antonio Rudiger)। স্বভাবতই উচ্ছ্বাসও প্রকাশ করছিলেন। কিন্তু 'ভার'-এর (Video Assistant Referee) সাহায্য নিয়ে রেফারি জানিয়ে দিলেন, তিনি অফসাইড। এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ হাতছাড়া হল জার্মানির।

    আরও পড়ুন: 

    আরও পড়ুন: 

    প্রথমার্ধের পর দ্বিতীয়ার্ধেও সেই এক ছবি। বল দখলের লড়াই হচ্ছে। কিন্তু গোলের মুখ কোনও দলই খুলতে পারছে না। ঠিক এমন সময় ৫৪ মিনিটে একটা চাল দিলেন স্পেনের 'বস' লুইস এনরিকে। আক্রমণে ঝাঁঝ বাড়ানোর জন্য ফেরান তোরেসের পরিবর্তে আলভারো মোরাতাকে নামালেন। আর তাঁর সেই সিদ্ধান্ত বদলে দিল ম্যাচের চেহারা। ৬২ মিনিটে 'সুপার সাব' আলভারো মোরাতার ডান পায়ের টোকা থেকে এগিয়ে গেল স্পেন। বাঁ দিকে বল পেয়েছিলেন জর্দি আলবা। জার্মানির রক্ষণের ভুলের সুযোগ নিয়ে গোল করলেন বক্স স্ট্রাইকার আলভারো মোরাতা। 

    কিন্তু এটা কোন জার্মানি! মরিয়া হয়ে একের পর এক আক্রমণ করলেও, সেই সুযোগ হেলায় নষ্ট করছিল জার্মানরা। স্প্যানিশ গোলকিপার উনাই সিমোনকে একা পেয়েও অকারণে জোরে শট মারতে গিয়ে তাঁর গায়ে মারলেন জামাল মুসিয়ালা। সুবর্ণ সুযোগ হারাল জার্মানি। তবে হাল ছাড়েননি জার্মানদের হেড স্যর হ্যান্সি ফ্লিক। গোল হজম করতেই ৭০ মিনিটে বহু যুদ্ধের নায়ক থমাস মুলারকে তুলে মাঠে নামিয়ে দেন নিকলাস ফুলক্রুগকে। এবারও আর এক 'সুপার সাব' নিকলাস ফুলক্রুগ ৮৩ মিনিটে গোল করে সমতা ফেরালেন। একার কৃতিত্বে স্পেনের ডিফেন্সকে ঘোল খাইয়ে বক্সের ভিতরে ঢুকে পড়লেন মুসিয়ালা। তাঁর থেকে বল পেয়ে গোল করলেন নিকলাস ফুলক্রুগ।

    ইউরোপের দুই জায়ান্টের এই 'বড়' ম্যাচ ড্র হয়ে যাওয়ার জন্য জমে উঠল ‘ই’ গ্রুপের হিসাবনিকাশ। দুই ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে স্পেনই শীর্ষে। সমান ৩ পয়েন্ট নিয়ে গোল পার্থক্যে দুই ও তিনে জাপান এবং কোস্টারিকা। প্রথম পয়েন্ট পাওয়া জার্মানি তলানিতে থাকলেও সুযোগ আছে দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার। গ্রুপের শেষ ম্যাচে জার্মানি যদি কোস্টারিকাকে হারায় এবং স্পেনের কাছে জাপান হেরে গেলে, শেষ ষোলোতে চলে যাবে দুই প্রাক্তন বিশ্বকাপ জয়ী দল। আগামি ২ ডিসেম্বর ভারতীয় সময় রাত ১২:৩০ মিনিটে ৯০ মিনিটের যুদ্ধে নামবে চার দল। একই সময় স্পেন বনাম জাপান এবং জার্মানি বনাম কোস্টারিকা ম্যাচ আয়োজিত হবে। 

     
  • Link to this news (২৪ ঘন্টা)