• Bangalore : 'খিদেয় কাঁদছিল মেয়ে, টাকা নেই বলে মেরেই ফেললাম'
    এই সময় | ২৮ নভেম্বর ২০২২
  • বেঙ্গালুরু: খিদের জ্বালায় কাঁদছিল মেয়েটা। চকোলেট-বিস্কুট যা কেনা ছিল, আগেই শেষ। পিছনের সিটে বসে খানিক খেলেও চুপ করানো যায়নি বছর আড়াইয়ের মেয়েকে। এ দিকে পকেটও খালি। এবার? গলা পর্যন্ত দেনায় ডুবে থাকা বাবা আর মাথার ঠিক রাখতে পারেননি। মেয়েকে শক্ত করে বুকে জড়িয়েই ঝাঁপ দিয়েছিলেন হ্রদে। পরের দিন দেহ মেলে শিশুর। বাবা-মেয়ে একসঙ্গে নিখোঁজ হওয়ায় পুলিশ ধরে নিয়েছিল, দেউলিয়া বাবাও হয়তো আত্মঘাতী হয়েছেন। কিন্তু দেহ কই তাঁর? কয়েকদিন তন্নতন্ন করে খোঁজার পরে অবশেষে খোঁজ মিলল রাহুল পারমার নামে বছর পঁয়তাল্লিশের ওই ইঞ্জিনিয়ার বাবার। মেয়েকে খুনের কথা স্বীকার করেছেন তিনি। জানিয়েছেন, অভাব আর দেনার হাত থেকে রেহাই পেতে তিনিও মেয়ের সঙ্গে আত্মঘাতী হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পারেননি। সাহস করে রেললাইনে ঝাঁপ দিতে চেয়েও পারেননি। পাওনাদার আর পুলিশের ভয়ে তাই এত দিন পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। পুলিশের সন্দেহ, মেয়েকে বুকের মধ্যে জোরে চেপে শ্বাসরোধ করেই মেরে ফেলেছিল রাহুল। রাহুল আদৌ অভাবের তাড়নায় এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন কি না, খতিয়ে দেখছে পুলিশ। মেয়েকে খুন ও জলাশয়ে দেহ লোপাট করার অভিযোগ দায়ের হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।

    আদতে বাসিন্দা, কিন্তু কর্মসূত্রে সপরিবার বেঙ্গালুরুতে থাকতেন রাহুল। পুলিশের কাছে তিনি দাবি করেছেন, বেঙ্গালুরুর একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কাজ করতেন তিনি। কিন্তু সম্প্রতিই চাকরি যায় তাঁর। রাহুলের দাবি, বিটকয়েনে বিনিয়োগ করেও ডুবেছিলেন। ফলে বাজারে প্রচুর ধারদেনা করতে হয়েছিল তাঁকে। পাওনাদারদের ঠেকাতে বাড়ির গয়নাও বিক্রি করতে হয়েছিল বলে দাবি করেছেন তিনি। কিন্তু তাতেও হিল্লে না-হওয়ায় দিশেহারা হয়েই তিনি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন রাহুল। কিন্তু মেয়েকে মারলেন কেন? কেন তিনি আড়াই বছরের খুদেকে সঙ্গে নিয়ে আত্মহত্যা করতে গেলেন- সব জটই খোলার চেষ্টা করছে পুলিশ। ক্রিপ্টোতে বিনিয়োগ করতে পারেন, এমন প্রোফাইলের কেউ এতখানি ঋণগ্রস্ত হলেন কী ভাবে, তা-ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। একটি সূত্রের খবর, রাহুলের মাথার উপর ঝুলছে প্রতারণা ও চুরির মামলাও।

    সূত্রের খবর, গত ১৫ নভেম্বর মেয়ে জিয়াকে প্লে-স্কুলে দিতে যাওয়ার নাম করে বাড়ি থেকে গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছিলেন রাহুল। কিন্তু সারাদিন কেটে যাওয়ার পরেও স্বামী-মেয়ে না-ফেরায় বাগালুর থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন রাহুলের স্ত্রী ভব্যা। তল্লাশি শুরু করে। পরের দিনই বেঙ্গালুরু-কোলার হাইওয়ের ধারে একটি হ্রদে জিয়ার দেহ উদ্ধার হয়।

    পুলিশকে রাহুল জানিয়েছেন, আত্মহত্যার ছক কষেই ১৫ অক্টোবর মেয়েকে নিয়েআশপাশে ঘোরাঘুরি শুরু করেন তিনি। কী ভাবে আত্মহত্যা করবেন স্থির করতে পারছিলেন না। বিশেষত, মেয়ের সামনে কী ভাবে! রাহুলের দাবি, একটা সময়ে প্ল্যান বাতিল করে বাড়ি ফেরার কথাও ভেবেছিলেন। কিন্তু পাওনাদারদের গালিগালাজ আর হেনস্থার কথা মনে করে ফের বিভ্রান্ত হয়ে হ্রদের পাশে গাড়ি দাঁড় করান রাহুল। পুলিশকে জানান, খিদের জ্বালায় মেয়ে কাঁদছে দেখেই তাকে বুকের মধ্যে চেপে ধরে হ্রদে ঝাঁপ দেন তিনি। রাহুলের দাবি, মেয়ে কোলছাড়া হয়ে যেতেই ভয়ে হ্রদ থেকে উঠে এলাকা ছাড়েন তিনি। তবে পালাতে-পালাতে শেষমেশ ধরা পড়ে গেলেন।
  • Link to this news (এই সময়)