• সুরাপ্রেমীদের ভিড় বাড়ছে 'আজব' হাটে
    এই সময় | ২৮ নভেম্বর ২০২২
  • এই সময়, শিলিগুড়ি: হাট জুড়ে কেবলই মদের দোকান। বিলিতি থেকে বাংলা, মায় হাঁড়িয়াও মিলবে। সঙ্গে ঢালাও মাংস। পছন্দমতো মাংস কিনে রান্না করার জন্য হাঁড়ি-কড়াইও ভাড়ায় মেলে এই 'আজব' হাটে। আমবাড়ি থানার সরস্বতীপুর চা বাগান লাগোয়া এই হাটের জমির মালিক আসলে বন দপ্তর। এলাকাটিতে সারা বছর বুনো হাতি উৎপাত। রবিবারও সকালে একটি বুনো হাতি হাট সফরে এসেছিল। হাটের একমাত্র কুয়োর পাশে রাখা বালতি এক লাথি মেরে দশ ফুট দূরে ফেলে দিয়ে জঙ্গলে ফিরে গিয়েছে। কিন্তু অকুতোভয় মদ্যপায়ীদের ঠেকায় কে! লাইসেন্স ছাড়াই চলছে মদ বিক্রি। এমনকী, বিয়ার বিক্রির জন্য পিকআপ ভ্যানে চড়িয়ে আনা হয় ফ্রিজারও। এমন ঢালাও আয়োজনে ভিড় বাড়ছে সুরাপ্রেমীদের। শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, বেলাকোবা, ওদলাবাড়ি, কাঠামবাড়ি থেকে আসা অল্পবয়সের যুবকরাও এখন নিয়মিত খদ্দের। মদের দোকানে পাতা চেয়ার টেবিলে বসে খাওয়া দাওয়া করে টলতে টলতে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে অনেকে।

    লকডাউনের আগে এক বার পুলিশ এবং বন দপ্তর থেকে হাটটি তুলে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু লাভ হয়নি। কয়েকদিন সব কিছু চুপচাপ থাকার পরে ফের ব্যবসায়ী ও সুরাপ্রেমীরা আসর জমিয়ে বসেছেন হাটে। বৈকুণ্ঠপুর বন দপ্তরের এডিএফও জয়ন্ত মণ্ডলের বলেন, ' লাইসেন্স আছে কি না সেটা আবগারি আর পুলিশ দেখবে। আমাদের উদ্বেগ, বুনো হাতির হামলা নিয়ে। হাটের সময়ে বুনো হাতি ঢুকে পড়লে সামাল দেওয়াটা যে মুশকিল, সেটা কাউকেই বোঝাতে পারছি না।' শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারের এক আধিকারিকের বক্তব্য, 'অভিযোগ পেলে আইন মেনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

    জঙ্গল ও চা বাগানের কোল ঘেঁষে গ্রামের সাপ্তাহিক হাটে চাল, ডাল, তেল, নুন, তরিতরকারি মেলে। তবে হাটে আসা বেশিরভাগ ক্রেতাদের আসল আকর্ষণ সুরা। এদিন কাঠামবাড়ি থেকে ফুলকপি, বেগুন, মুলো বিক্রি করতে এসেছিলেন জহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, 'এই হাটে সব্জি খুব একটা বিক্রি হয় না। চা বাগানের শ্রমিকেরা সাপ্তাহিক কেনাকাটা করতে আসেন। বাকি যে সমস্ত খাবার বিক্রি হয় সেটা নিয়ে আমাদের কী বলার আছে?' কাঠামবাড়ি থেকে ফি রবিবার এই হাটে হাঁড়িয়া বিক্রি করতে আসেন পিটার মিনজ। তাঁর কথায়, 'এই এলাকার সমস্ত হাটে হাঁড়িয়া বিক্রি হয়। লোকে খায় বলেই তো প্রতি হাটে হাঁড়িয়া নিয়ে আসি।' বিক্রেতাদের লাইসেন্স নিয়ে কোনও মাথাব্যাথা নেই বেলাকোবার জয়ন্ত বর্মন কিংবা সালুগাড়ার ভূপেন রাইয়ের। তাঁদের বক্তব্য, 'হাটে বিক্রি হচ্ছে। আমরা কিনে খাচ্ছি। একসঙ্গে হাটে মদ ও মাংস কিনতে পারছি। তাই আসছি। বিক্রি না-হলে আসব না।' সরস্বতীপুর শ্রমিক পেত্রানুস লাকড়া বলেছেন, 'কবে থেকে এই হাট চালু হয়েছে সেটা আমিও জানি না। আমার বাবাও এই হাটে কেনাকাটা করেছেন। এখন বাইরের লোক বেশি ঢুকে যাচ্ছে।'

    সূত্রে জানা গিয়েছে, সরস্বতীপুরের কাছাকাছি হাট অন্তত পনেরো থেকে বিশ কিলোমিটার দূরে। এলাকাটিতে হাতির আনাগোনা রয়েছে বলে জঙ্গলের একপাশে হাট চালু করা হয়। আগে সকাল দশটা থেকে হাট বসত। বিকেল নামার আগেই সবাই বাড়িতে ফিরত। এখন হাট বসতে বসতেই বেলা বারোটা বেজে যায়। চলে সন্ধ্যা পাঁচটা পর্যন্ত। হাতি হাটের কাছাকাছি চলে এলে ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই মিলে হাতি তাড়াতে নেমে পড়েন।
  • Link to this news (এই সময়)