• Partha-Manik : কলেজের ছাড়পত্র দিতেও ট্যাঁক ভরেছেন পার্থ-মানিক
    এই সময় | ২৮ নভেম্বর ২০২২
  • এই সময়: প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি, বেসরকারি ডিএলএড কলেজে ছাত্র ভর্তি এবং কলেজের পরিকাঠামো গড়ে দেওয়ার নামে বিপুল অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগ আগেই উঠেছিল মানিক ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে তদন্ত চালাচ্ছে ইডি। এ বার ডিএলএডের পাশাপাশি বিএড কলেজের অনুমোদন পাইয়ে দেওয়া ও ছাড়পত্র জোগাড়ের নাম করে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিকের বিরুদ্ধে বিপুল টাকা তোলার অভিযোগ কেন্দ্রীয় ওই তদন্তকারী সংস্থার। বৃহস্পতিবার ব্যাঙ্কশাল কোর্টের বিশেষ সিবিআই আদালতে তোলা হয় মানিককে। সেখানেই ইডি লিখিত ভাবে দাবি করেছে - এখনও পর্যন্ত তদন্তে উঠে এসেছে, বিএড এবং ডিএলএড কলেজগুলির অনুমোদন ও ছাড়পত্রের জন্য মোটা টাকা নিয়েছিলেন মানিক। এই কারবারে শুধু তিনি নন, তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও জড়িত ছিলেন।

    বস্তুত পার্থ-মানিক জুটিই এ ভাবে টাকা কামানোর পথ তৈরি করেন। এ নিয়ে আরও বিস্তারিত তদন্ত চলছে। মানিক ও পার্থ দু'জনেই বর্তমানে জেল হেফাজতে। নিয়োগ-দুর্নীতির তদন্তে পার্থকে প্রথমে গ্রেপ্তার করে ইডি। পরে -র মাধ্যমে স্কুলে গ্রুপ-সি, গ্রুপ-ডি পদে এবং নবম-দশমে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির মামলায় তাঁকে নিজেদের হেফাজতে নেয় সিবিআই। তবে মানিকের বিরুদ্ধে এত সরাসরি বিএড কলেজের অনুমোদন দেওয়ার নামে টাকা নেওয়ার অভিযোগ কোনও তদন্তকারী সংস্থা আগে জানায়নি। পার্থর আইনজীবীরা আদালতে ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, এই বিষয়গুলি শিক্ষামন্ত্রীর এক্তিয়ারে পড়ে না। এগুলি সংশ্লিষ্ট স্বশাসিত সংস্থা দেখে। পার্থকে ইচ্ছাকৃত ভাবে এর সঙ্গে জড়ানো হচ্ছে। মানিকের আইনজীবী সঞ্জয় দাশগুপ্ত আবার বলেন, 'ইডির এই দাবিগুলি প্রমাণসাপেক্ষ। বিচারপ্রক্রিয়া শুরু না-হওয়া পর্যন্ত অর্থাৎ এই দাবির পক্ষে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না-দেখে কোনও মন্তব্য করব না।'

    তবে অভিযুক্তদের আইনজীবীদের একাংশের আশঙ্কা, পার্থ-ঘনিষ্ঠ বাড়ি থেকে যে বিপুল নগদ ও গয়না মিলেছিল, তার স্পষ্ট উৎস তদন্তকারীরা এখনও পাননি। সে কারণেই এ সব অভিযোগ তোলা হচ্ছে। এবং মানিককে পার্থর সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা চলছে। তদন্তে নেমে ডিএলএড কলেজগুলির একটি সংগঠনের কর্তা, মানিক-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত তাপস মণ্ডল, তাঁর তিন হিসাবরক্ষক, কয়েকটি ডিএলএড কলেজ কর্তৃপক্ষ-সহ অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ইডি। তদন্তকারীরা প্রথমে জানতে পারেন, অফলাইনে বেসরকারি ডিএলএড কলেজগুলিতে ভর্তির জন্য মাথাপিছু ৫ হাজার করে প্রায় ২১ কোটি টাকা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ডিএলএড কলেজগুলির পরিকাঠামোগত সহায়তার জন্য মানিক-পুত্র সৌভিক ভট্টাচার্যের সংস্থায় প্রায় ২ কোটি ৬৪ লক্ষ এবং ২০১৪-র টেটে ৩২৫ জন অযোগ্যকে চাকরি দেওয়ার নামে ৩ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা নেওয়া হয়েছে।

    বিএড এবং ডিএলএড কলেজগুলিকে অনুমোদন, এনওসি দেওয়ার দায়িত্ব ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার এডুকেশনের (এনসিটিই)। তদন্ত প্রক্রিয়ায় ইডি জানতে পারে, এনসিটিই-র পূর্বাঞ্চলীয় কমিটির সদস্য হিসাবে দীর্ঘদিন দায়িত্বে ছিলেন মানিক। নতুন কলেজের অনুমোদনের পাশাপাশি অনুমোদিত কলেজগুলিকে নির্দিষ্ট সময় অন্তর এনওসি নিতে হয় এনসিটিই-র থেকে। সে ক্ষেত্রে কলেজের পরিকাঠামো, ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত, সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থার ছাড়পত্র ইত্যাদি বিষয় দেখা হয়। গত ক'বছরে অনেকগুলি কলেজের অনুমোদন খারিজ করেছে এনসিটিই। এই কলেজগুলিকে এনওসি পাওয়ানো এবং নতুন কলেজের অনুমোদনের জন্যই টাকা নেওয়া হয়েছে বলে ইডির সন্দেহ।

    এনসিটিই এ রাজ্যের যে কলেজগুলির অনুমোদন বাতিল, শো-কজের মতো পদক্ষেপ করেছিল, সেগুলিকে পরে ফের ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছিল কি না, হলে কোন শর্তে, তার জন্য ওই বিএড এবং ডিএলএড কলেজগুলিকে কী কী পদক্ষেপ করতে হয়েছে - এ সব নিয়ে আরও নিশ্চিত হতে চাইছেন তদন্তকারীরা। তাপস ও ডিএলএড কলেজগুলির কাছ থেকে কিছু সূত্র মিলেছে বলেও এঁদের দাবি। এ ক্ষেত্রে তৎকালীন তাঁর ক্ষমতার জোরে মানিকের মাধ্যমে টাকার বিনিময়ে কলেজগুলিকে অনুমোদন পেতে সাহায্য করেছেন বলে দাবি ইডির। যদিও এ থেকে ঠিক কত টাকার লেনদেন হয়েছে, তা এখনও পরিষ্কার নয়।
  • Link to this news (এই সময়)