• সুপ্রিম কোর্টে জয় মমতার চলবে দুয়ারে রেশন
    বর্তমান | ২৯ নভেম্বর ২০২২
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: বেআইনি নয়, দুয়ারে রেশন প্রকল্প আপাতত চলবে। হাইকোর্টের নির্দেশে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করে সোমবার এই নির্দেশ দিল শীর্ষ আদালত। অর্থাৎ, মানুষের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়নে যে বাধা তৈরি হয়েছিল, তা কাটিয়ে জয় হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী গত বৃহস্পতিবারই প্রত্যয়ের সঙ্গে আশ্বাস দিয়েছিলেন, দুয়ারে রেশন তিনি বন্ধ হতে দেবেন না। তার জন্য আইনের পথে যতদূর যাওয়ার, তিনি যাবেন। সেই আত্মবিশ্বাসের মান্যতাই এদিন দিল সুপ্রিম কোর্ট। তবে এই মামলায় বিবাদী পক্ষের যদি আরও কিছু বলার থাকে, তার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পাল্টা হলফনামা দিয়ে তারা জানাতে পারবে বলে অনুমতি দিয়েছে আদালত। সর্বোচ্চ আদালত জানিয়েছে, ২০২৩ সালের মার্চ মাসে ফের এই মামলার শুনানি। কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশের পূর্ববর্তী অবস্থা ততদিন পর্যন্ত বজায় থাকবে। 

    গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর দুয়ারে রেশনের পাইলট প্রজেক্ট শুরু করেছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। নভেম্বরে হয় তার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন। এক বছর সফলভাবে এই প্রকল্প চলার পর চলতি বছর ২৮ সেপ্টেম্বর কলকাতা হাইকোর্ট এই প্রজেক্টকে ‘বেআইনি’ বা ‘অবৈধ’ তকমা দেয়। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করেই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল রাজ্য সরকার। সোমবারই ছিল তার প্রথম শুনানি। আর এদিনই রাজ্যের পক্ষে দাঁড়িয়ে গেলেন বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও বিচারপতি এম এম সুন্দরেশ। পর্যবেক্ষণে বিচারপতি খান্না বলেন, ‘জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইন মোতাবেক কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বাড়ি বাড়ি গিয়ে রেশন পৌঁছনোর কথা বলা নেই। দিল্লি হাইকোর্টেও এই সংক্রান্ত মামলা চলছে। পশ্চিমবঙ্গে এটা পাইলট প্রকল্প। এই প্রকল্প চলুক। তবে এটা আর বাড়াবেন না। ডোন্ট এক্সডেন্ট ইট। এক বছর ধরে চলার পর আচমকা দুয়ারে রেশন বন্ধ করে দিলে সমস্যা হতে পারে। তাছাড়া বাড়িতে বসে খাদ্যশস্য পেতে কে না চায়?’

    মামলায় রাজ্য সরকারের হয়ে সওয়াল করেন কপিল সিবাল। দুয়ারে রেশন প্রকল্প কতটা কার্যকরী, উপভোক্তারা কতটা লাভবান হচ্ছেন, তার ব্যাখা দেন তিনি। দাবি করেন, হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ গত ২৮ সেপ্টেম্বর যে রায় দিয়েছে, তার উপর স্থগিতাদেশ দেওয়া হোক। একই সুরে সওয়াল করেন ওয়েস্ট বেঙ্গল এমআর ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের আইনজীবী মুকুল রোহতগি। রেশন ডিলারদের এই অংশটি রাজ্য সরকারের প্রকল্পের সঙ্গে সহমত পোষণ করে। তারা মনে করে, বাড়ি বাড়ি রেশন পৌঁছে দিলে মানুষের সুবিধা হয়। এরপরও অবশ্য তীব্র বিরোধিতা চালিয়ে যাচ্ছে অল ইন্ডিয়া ফেয়ার প্রাইস শপ ডিলার্স ফেডারেশন। এই সংগঠন সরাসরি মামলায় যুক্ত হয়নি ঠিকই, তবে তাদের কয়েকজন সদস্য বিবাদী ভূমিকায় রয়েছেন। তাঁদের হয়ে এদিন সওয়াল করেছেন মনিন্দর সিং। তাঁদের দাবি, এই সুবিধা দেওয়ার কথা প্রথমত আইনে নেই, দ্বিতীয়ত উপভোক্তার বাড়ি গিয়ে রেশন পৌঁছনোর সমস্যা বিস্তর। তখনই সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ বিবাদীর বক্তব্য বিস্তারিত শোনার জন্য নোটিস ইস্যুর নির্দেশ দেয় । 

    দুয়ারে রেশন ইস্যুতে সুপ্রিম কোর্টে চারটি মামলা চলছে। তাই এর গতিবিধি কোনদিকে যাচ্ছে, তা দেখতে এদিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের খাদ্যসচিব অচিন্ত্যকুমার পতি। যদিও সুপ্রিম কোর্টের এদিনের এই নির্দেশ চূড়ান্ত নয়। অন্তবর্তী। তাই মার্চের শুনানিতে আদালত কী সিদ্ধান্ত নেয়, তার দিকে তাকিয়ে বাদী-বিবাদী উভয়পক্ষই। 
  • Link to this news (বর্তমান)