নয়াদিল্লি: কলেজিয়াম প্রথা নিয়ে কেন্দ্র ও সুপ্রিম কোর্টের সংঘাতে নয়া মাত্রা। দেশের আইনমন্ত্রী কিরেন রিজিজুর বক্তব্য সরাসরি নস্যাৎ করে দিল শীর্ষ আদালত। সোমবার বিচারপতি এস কে কাউল এবং এ এস ওকার বেঞ্চ জানাল, এমন হওয়া অনুচিত ছিল। এমনকী, আইনমন্ত্রীর মতো পদাধিকারী ব্যক্তির এমন মন্তব্য করা ঠিক নয় বলেও পরোক্ষে জানিয়েছে আদালত। শুধু তাই নয়, ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হলে সুপ্রিম কোর্ট চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পিছপা হবে না। একইসঙ্গে কলেজিয়ামের সুপারিশ মেনে বিচারপতি নিয়োগে বিলম্বের জন্য মোদি সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছে সর্বোচ্চ আদালত। অতি সম্প্রতি একটি প্রথম সারির ইংরেজি টেলিভিশন চ্যানেল আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কিরেন রিজিজু। সেখানে তিনি বিচারপতি নিয়োগের পদ্ধতি নিয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন। প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি কলেজিয়াম প্রথাকে ‘সংবিধান বহির্ভূত’ বলে মন্তব্য করেন। এখানেই থেমে থাকেননি অরুণাচল প্রদেশের এই সাংসদ। সংবিধানকে ‘পবিত্র পুথি’ আখ্যা দিয়ে রিজিজু বলেন, ‘সংবিধানের সঙ্গে যেটা সম্পর্কযুক্ত নয়, সেটা কী করে দেশবাসী সমর্থন করতে পারে! কেননা সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুষ্টিমেয় কয়েকজন বিচারপতি বা কয়েকটি আদালত।’ এছাড়া, সুপ্রিম কোর্ট রুল জারি করে কলেজিয়াম তৈরি করেছে বলেও মন্তব্য করেন আইনমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ১৯৯১ সালের আগে বিচারপতি নিয়োগ সরকারই করত।এদিন বিচারপতি নিয়োগে বিলম্ব সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানি ছিল। সেখানেই রিজিজুর বক্তব্যকে খণ্ডন করে সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি কাউলের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ জানায়, এমন একটা উচ্চপদে থাকা কারও পক্ষে এমন মন্তব্য করাটা অনুচিত। ওই মামলায় কেন্দ্রের হয়ে উপস্থিত ছিলেন সলিসিটার জেনারেল এবং অ্যাটর্নি জেনারেল। তখন সলিসিটার জেনারেল বলেন, সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট কখনও কখনও ভুল হয়। এরপরেই অ্যাটর্নি জেনারেল আর বেঙ্কটারামনিকে বিচারপতি কাউল বলেন, ‘আমি সংবাদমাধ্যমের যাবতীয় রিপোর্ট সরিয়ে রাখছি। কিন্তু, এক্ষেত্রে উচ্চপদে থাকা ব্যক্তি সাক্ষাৎকারে এমনটা বলেছেন। আমি এর থেকে বেশি কিছু বলতে চাইছি না। আমাদের যদি কিছু করতেই হয়, তাহলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।’ শুধু কলেজিয়ামের বিরোধিতা করে মন্তব্যের সমালোচনা নয়, বিচারপতি নিয়োগে বিলম্ব নিয়েও কেন্দ্রকে তুলোধোনা করে সুপ্রিম কোর্ট। কলেজিয়ামের সুপারিশ করা নাম সরকার দীর্ঘদিন আটকে রাখায় বিচার প্রক্রিয়া ব্যহত হচ্ছে বলেও জানিয়েছে তারা। সুপ্রিম কোর্টের হুঁশিয়ারি, দ্রুত সমস্যার সমাধান করুন, নাহলে আমরা বিচারবিভাগীয় সিদ্ধান্ত নেব। মামলার পরবর্তী শুনানি ৮ ডিসেম্বর।