জরিমানার ভিত্তিতে বেআইনি নির্মাণ ছাড় পেলেও টাকাই পায়নি পুরসভা
বর্তমান | ২৯ নভেম্বর ২০২২
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: কোনও বাড়িতে সানশেড আছে, কিন্তু সেটি তৈরির অনুমোদন নেওয়া হয়নি পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের কাছ থেকে। কেউ হয়তো পুর-অনুমোদনের তোয়াক্কা না করেই ছাদের সিঁড়িঘরের একপাশে ঠাকুরঘর করেছেন। বিল্ডিং রুলসের পরিভাষায় এগুলি ‘মাইনর ডেভিয়েশন’ বা ‘ছোটখাট বিচ্যুতি’। সংশ্লিষ্ট নির্মাণকারীকে ডেকে শুনানির পর নির্দিষ্ট জরিমানার বিনিময়ে এই ধরনের ‘বেনিয়ম’কে স্বীকৃতি দেওয়ার আইনি সংস্থান রয়েছে। সেই মতো পুরসভা বছরভর ‘কেস টু কেস’ বিবেচনা করে বহু নির্মাণের অবৈধ অংশকে ‘রেগুলারাইজেশন’ বা আইনি স্বীকৃতি দেয়। তার জন্য জরিমানা গুনতে হয় বাড়ি মালিক বা নির্মাণকারীকে। বহু ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, ‘রেগুলারাইজেশন’ নিয়মিত চললেও জরিমানার টাকা জমা পড়ছে না। সব টাকা এলে পুরসভার ভাঁড়ারে উল্লেখযোগ্য অর্থাগম হতো। বঞ্চিত হচ্ছে পুরসভা। এই পরিস্থিতিতে এমন সম্পত্তিগুলি চিহ্নিত করে মালিকপক্ষকে কড়া নোটিস পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করছে কলকাতা পুরসভা। তাদের হুঁশিয়ারি, টাকা না দিলে ‘বেআইনি’ অংশ ভেঙে দেওয়ার পথে হাঁটা হবে। শহরজুড়ে এমন প্রায় ২০০টি সম্পত্তির তালিকা তৈরি হয়েছে বলে পুর বিল্ডিং বিভাগ সূত্রের খবর।
কলকাতা শহরে বহু পুরনো বাড়ি রয়েছে, নিখুঁতভাবে বিল্ডিং আইন মেনে যেগুলির সংস্কার কার্যত সম্ভব নয়। দীর্ঘদিন আগে তৈরি ফ্ল্যাট বা বাড়ির বিভিন্ন অংশও অনেক সময় অবৈধ হিসেবে গণ্য হয়। সেগুলি পুরোপুরি ভেঙে ফেলাও সম্ভব হয় না। এই পরিস্থিতিতে কয়েক বছর আগে পুর আইনে ছাড় দিতে নিয়ম বদল করা হয়। তার ভিত্তিতে বহু ঘরবাড়ির বেআইনি অংশকে জরিমানার বিনিময়ে স্বীকৃতি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
বিল্ডিং বিভাগ সূত্রের খবর, গত ১২ বছর ধরে জরিমানা বকেয়া পড়ে রয়েছে, এমন নির্মাণের তালিকা তৈরি করা হয়। তাতে দেখা যাচ্ছে, প্রায় ২০০টি সম্পত্তি জরিমানার ভিত্তিতে ছাড় পেলেও টাকা দেয়নি পুরসভাকে। বকেয়া জরিমানার পরিমাণ প্রায় ৬০ কোটি টাকা। এক আধিকারিক বলেন, ‘অনেকেই আজ দেব, কাল দেব করে জরিমানার টাকা দেয়নি। এবার তাই আমরা কড়াকড়ি শুরু করছি। শুধু তাই নয়, ওই সময়ে ধার্য করা জরিমানা বর্তমান বাজারদরের মূল্যে মেটাতে হবে। অর্থাৎ, মোট জরিমানার পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারে। এই পরিপ্রেক্ষিতে প্রত্যেক বরো এগজিকিউটিভ অফিসারকে ওই তালিকা পাঠিয়ে বাড়ি বা সম্পত্তিগুলি চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে। যারা জরিমানা দেয়নি, তাদের কড়া চিঠি পাঠাবে কর্তৃপক্ষ। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টাকা না মেটালে আইনানুগ পদক্ষেপ করতে পিছপা হবে না পুরসভা।