• বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে প্রয়োজনে নির্দেশ: আদালত ২৯ নভেম্বর ২০২২ ০৭:২৩
    আনন্দবাজার | ২৯ নভেম্বর ২০২২
  • গত কয়েক দিন ধরেই মোদী সরকারের আইনমন্ত্রী কিরেন রিজিজু বিচারপতি নিয়োগের কলেজিয়াম ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলছিলেন। এ বার নাম না করে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রীর মন্তব্য নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করলেন। সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়াম কাউকে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের সুপারিশ করার পরে তা নিয়ে টালবাহানা করা নিয়েও বিচারপতিরা মোদী সরকারকে তোপ দেগেছেন।

    বিচারপতি নিয়োগে কলেজিয়াম ব্যবস্থা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে একাধিক বার প্রশ্ন তোলার পরে কিরেন রিজিজু শুক্রবার এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, কলেজিয়ামের সুপারিশের ফাইল নিয়ে দেরি করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে দোষারোপ করা চলবে না। বিচারপতিদের কলেজিয়াম যাঁর নাম সুপারিশ করবেন, তাতেই সরকার সিলমোহর দেবে, এটা আশা করা যায় না। কলেজিয়ামের তুলনায় আরও ভাল ব্যবস্থা দরকার বলেও মন্তব্য করেন তিনি। দরকার হলে বিচারপতিরা নিজেরাই বিচারপতি নিয়োগ করে নিন বলেও মন্তব্য করেছিলেন রিজিজু।

    আজ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জয় কিষেণ কউল ও বিচারপতি এ এস ওকা-র বেঞ্চ কেন্দ্রীয় সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, কলেজিয়ামের সুপারিশ যাতে ঠিক সময়ে কার্যকর হয়, তার জন্য প্রয়োজনে আদালত নির্দেশ জারি করবে। বিচারপতি কউল কেন্দ্রের অ্যাটর্নি জেনারেলকে বলেন, ‘‘আমি সংবাদমাধ্যমের সব রিপোর্টকে অবজ্ঞা করছিলাম। কিন্তু যথেষ্ট উচ্চপদস্থ এক জন সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। আমি আর কিছু বলছি না। যদি দরকার হয়, আমরা তা হলে সিদ্ধান্ত নেব।’’

    এখন সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণতম পাঁচ বিচারপতিকে নিয়ে তৈরি কলেজিয়াম হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি ও সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের নিয়োগের সুপারিশ করে। মোদী সরকার ক্ষমতায় এসে জাতীয় বিচারপতি নিয়োগ কমিশন (এনজেএসি) আইন এনেছিল। কিন্তু শীর্ষ আদালত তা অসাংবিধানিক বলে খারিজ করে দেয়। এত দিন বিষয়টি ধামাচাপা থাকলেও আইনমন্ত্রী নতুন করে কলেজিয়াম ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। আজ বিচারপতি কউল বলেন, ‘‘মনে হচ্ছে, এনজেএসি আইন সাংবিধানিক মাপকাঠিতে উতরোতে পারেনি বলে সরকার অখুশি।’’

    বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের জন্য কলেজিয়ামের সুপারিশের পরেও মোদী সরকার ৬৮ জনের নামে কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। এর মধ্যে ১১ জনের নাম পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, যার পরে সরকারের মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু সরকার ইচ্ছাকৃত ভাবে দেরি করছে বলে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়েছিল।

    আজ বিচারপতি কউল সরকারের আইনজীবীদের বলেন, ‘‘আপনারা কোনও কারণ না দেখিয়ে দেরি করতে পারেন না। অনেক সুপারিশ দেড় বছর ধরে ঝুলে রয়েছে। আপনারা নিয়োগের প্রক্রিয়াতে সমস্যা তৈরি করছেন। সময়সীমা বেঁধে দেওয়া রয়েছে। তা মানতে হবে। অনেক নামের ক্ষেত্রে চার মাসের সময়সীমা পেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু কোনও তথ্য জানানো হয়নি। এক বার সুপারিশ পুনরাবৃত্তি করা হলে তা আর ফেরানো যায় না।’’

    বিচারপতিরা আগেও বলেছিলেন, সরকারের এই মনোভাবের জন্য প্রবীণ আইনজীবীরা বিচারপতি হতে চাইছেন না। এ দিকে হাই কোর্টগুলিতে ৪০ শতাংশ পদ খালি পড়ে রয়েছে। বিচারপতি কউল বলেন, ‘‘যোগ্য লোকেদের বিচারপতি হওয়া জরুরি। সরকারের টালবাহানায় প্রবীণদের আগে নিয়োগ করার প্রচেষ্টা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’’

    তোপের মুখে অ্যাটর্নি জেনারেল ও সলিসিটর জেনারেল জানান, তাঁরা বিষয়টি দেখবেন। এ বিষয়ে ফের ৮ ডিসেম্বর শুনানি হবে জানিয়ে বিচারপতি কউল বলেন, ‘‘দয়া করে এর সমাধান করুন। এ বিষয়ে আদালতের নির্দেশ জারি করতে বাধ্য করবেন না।’’

  • Link to this news (আনন্দবাজার)