‘নিষিদ্ধ পদ্ধতিতে অন্তঃসত্ত্বা হাতিটিকে মারা হল’, বন দফতরের বিরুদ্ধে ক্ষোভপ্রকাশ তথাগতের
আনন্দবাজার | ১৮ আগস্ট ২০২৪
ঝাড়গ্রামে অন্তঃসত্ত্বা হাতির মৃত্যু নিয়ে সমাজমাধ্যম উত্তাল। এই ঘটনার নিন্দা করেছেন পরিচালক তথাগত মুখোপাধ্যায়ও। সমাজমাধ্যমে বদলে ফেলেছেন নিজের প্রোফাইল ছবি। পশুদের উপর অত্যাচার নিয়ে তিনি বরাবরই সরব। এ বার ঝাড়গ্রামের ঘটনায় মুখ খুললেন তিনি। প্রশ্ন তুললেন, কী ভাবে সুপ্রিম কোর্ট দ্বারা নিষিদ্ধ ‘হুলা পার্টি’-কে ব্যবহার করে অন্তঃসত্ত্বা হাতিকে হত্যা করা হল?
আনন্দবাজার অনলাইনে তথাগত বলেন, “হাতি করিডর নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই প্রযুক্তিগত সমস্যা হচ্ছিল। হাতির পালের দলমা পাহাড় থেকে আসার পথ বন্ধ করে দেওয়ায় তারা ঝাড়গ্রামে ঢুকে পড়ছে। কয়েক দিন আগে একদল হাতি ঝাড়গ্রামে ঢুকে পড়ে। তাদের মধ্যে একটি পুরুষ দাঁতাল হাতি ছিল। বাকি স্ত্রী-হাতিদের মধ্যে একটি হাতি অন্তঃসত্ত্বা ছিল। ওই দাঁতালের হামলায় এক বাসিন্দার মৃত্যু হয়। এটা ঘটে বনমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদার এলাকায়। ওই হাতিটিকে ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়ে অচৈতন্য করা হয়। বাকি হাতিগুলিকে তাড়ানোর জন্য হুলা পার্টি ডাকা হয়, অর্থাৎ যাঁরা বল্লম-তির, জ্বলন্ত আগুনের বল্লম ব্যবহার করে হাতি তাড়ান। এই হুলা পার্টিকে সুপ্রিম কোর্ট নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু ঝাড়গ্রামে এখনও ছোট ছোট হুলা পার্টি রয়ে গিয়েছে। এটা বেআইনি।”
বন দফতরকে কটাক্ষ করেছেন তথাগত। তাঁর কথায়, “এমন বেআইনি দলকে ভাড়া নেয় বন দফতর। কতটা অকর্মণ্য এই বন দফতর। তারা নিজেরা হাতি তাড়াতে পারেনি বলে ওদের ডেকেছে। ওই হুলা পার্টিরই একটি ছেলে জ্বলন্ত বল্লম ছুড়ে মারে অন্তঃসত্ত্বা হাতিটিকে। ২৪ ঘণ্টা ধরে পুড়তে পুড়তে ওই হাতিটি মারা যায়। বন দফতরের তো এই হুলা পার্টিকে আটকানোর কথা। কিন্তু তারাই ডাকছে। ”
এই ঘটনার প্রতিবাদে ঝাড়গ্রামের এক স্থানীয় বাসিন্দা লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন বলেও জানান তথাগত। ঝাড়গ্রামে হাতিদের উপরে অত্যাচার চলছে বেশ কিছু দিন ধরেই। পুরো ব্যাপারটাই সরকারের জানা বলে দাবি পরিচালকের। তথাগতর কথায়, “অতীতে কেরলে একটি নির্মম ঘটনা ঘটে। সেখানে গ্রামবাসীরা হাতিটিকে বিস্ফোরক ভর্তি আনারস খাইয়েছিলেন। কিন্তু এখানে বনকর্মীরাই হুলা পার্টিকে ডেকে এনে এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন। সবচেয়ে লজ্জার বিষয়, বনমন্ত্রীর এলাকায় এই ঘটনা ঘটছে।”
দাঁতাল হাতিটিকেও অতিরিক্ত মাত্রায় ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয়েছিল বলে দাবি করেন তথাগত। সেই হাতিটির জ্ঞান ফিরতে সময় লাগে দু’দিন। তার পর সে জঙ্গলে ফিরে যায়। পরিচালক ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেছেন, “বন দফতরের কর্মীদের কোনও যোগ্যতা নেই। কতটা ওষুধ দিয়ে অজ্ঞান করতে হয়,সেটাও তাঁরা জানেন না।”
তবে এই ঘটনার প্রতিবাদে এখনই সক্রিয় আন্দোলন করবেন না বলেও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তথাগত। পরিচালকের কথায়, “এই মুহূর্তে এই ঘটনা নিয়ে মিছিল বা প্রতিবাদ করতে পথে নামব না। কারণ, আমি চাই না মানুষের নজর আরজি কর-কাণ্ড থেকে ঘুরে যাক। আর হাতিদের নিয়ে এই সমস্যা মিছিল করে মেটানো যাবে না। হাতিদের করিডর বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে নিজস্ব স্বার্থে। তাই ওরা ভুল দিকে চলে আসছে। এটাও কিন্তু একটা রাজনৈতিক সমস্যা। এটার সমাধান চাই।”