• দাগ ফেলল না বন্‌ধ, প্রশ্ন গেরুয়া শিবিরেই
    আনন্দবাজার | ২৯ আগস্ট ২০২৪
  • লোকসভা ভোটের পরে এখনও ঘর গুছিয়ে উঠতে পারেনি বিজেপি। তারই কি প্রমাণ বিজেপির ডাকা বুধবারের ১২ ঘন্টার বন্‌ধ?

    কারণ, জেলা সদর সিউড়ি এবং দু-চারটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা বাদ দিলে বীরভূম জেলায় এ দিন সে-ভাবে দাগ কাটতে পারেনি গেরুয়া শিবির। প্রকাশ্যে বিজেপি নেতারা সে কথা মানতে চাননি। তবে, আড়ালে অনেকে স্বীকার করে নিয়েছেন, এ দিনের বন্‌ধে সাড়া না-পাওয়ার পিছনে সাংগঠনিক ‘দুর্বলতা’ অন্যতম কারণ। শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের বক্তব্য, সাধারণ মানুষ আর ‘কর্মনাশা’ দিন দেখতে চান না। তাই তাঁরাই পথে বেরিয়ে বনধ ‘ব্যর্থ’ করেছেন।

    ১২ ঘণ্টা বন্‌ধের ডাক দিয়ে বিজেপি নেতৃ্ত্বের দাবি ছিল, মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া মিলবে, বন্‌ধ সর্বাত্মক হবে। পাল্টা প্রস্তুতি নিয়েছিল তৃণমূলও। বাস্তবে জেলা জুড়ে বন‌্ধের বড় কোনও প্রভাব পড়েনি। বেসরকারি বাস কম চলেছে, কিছু এলাকায় আংশিক দোকানপাট বন্ধ ছিল। এর বাইরে কোনও প্রভাব লক্ষ্য করা যায়নি। সরকারি অফিস খোলা ছিল, খোলা ছিল স্কুল-কলেজ, দৈনন্দিন যাপনের ছবিও টোল খায়নি। দিনের শেষে বিজেপি কর্মীদের একাংশের প্রশ্ন, আচমকা এ ভাবে বন‌্ধ ডেকে আদৌ কোনও লাভ হল কি? জেলা বিজেপির এক নেতার খেদ, ‘‘আমাদের দলের অগোছাল অবস্থা আরও প্রকট হয়ে গেল!’’ যদিও বিজেপি কর্মীদের একটা অংশ এ-ও বলছেন, যা হয়েছে, তা মন্দের ভাল। লোকসভা ভোটে খারাপ ফলের পর থেকে পথে নেমে আন্দোলন করা প্রায় ভুলেই গিয়েছিল দল। এ দিন বন‌্‌ধের হাত ধরে অন্তত সেই কাজটা হয়েছে।

    দলীয় সূত্রেই জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল থেকে বন্‌ধের সমর্থনে জেলার বিভিন্ন জায়গায় যে মিছিলগুলি বের হয়েছিল বিজেপির পক্ষে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেই মিছিলে দলের নেতা-কর্মীর সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। ফলে। যে দুই-চারটি দোকানপাট বন্ধ রাখা হয়েছিল, মিছিল পেরিয়ে যাওয়ার পরে সেগুলিও খুলে গিয়েছে। খয়রাশোলের মতো এলাকা, যেখানে বিজেপি শক্তিশালী ছিল, সেখানে এ দিন বন্‌ধের সমর্থনে মিছিল পর্যন্ত হয়নি! মিছিল হয়নি বোলপুর, মুরারই-সহ জেলার নানা প্রান্তে।

    রামপুরহাট রেলস্টেশনে কিছুক্ষণ বন্‌ধ সমর্থকেরা ট্রেন আটকানোর চেষ্টা করলেও, শহরের বাকি অংশে বন্‌ধের তেমন প্রভাব পড়েনি। একই ছবি মহম্মদবাজারে, যে ব্লকে তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত বিজেপির দখলে। কিছুটা ব্যতিক্রম সিউড়ি। দলের বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ধ্রুব সাহার নেতৃত্বে সদরে বন্‌ধের সমর্থনে জোরাল কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। বেশ কিছু দোকানপাটও বন্ধ ছিল

    বিজেপি নেতা-কর্মীদের একাংশ বলছেন, ২০১৯ সালে বীরভূম লোকসভা আসন (যা এখন বীরভূম সাংগঠনিক জেলার অধীনে) ও বোলপুর লোকসভা আসনে যে ফল করেছিল দল, এ বার তার থেকে অনেক খারাপ ফল হয়েছে।জেলার দুই লোকসভা আসনে ৮ শতাংশেরও বেশি ভোট কমেছে। সাংগঠনিক দুর্বলতা, পুরনো কর্মীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ না-থাকা-সহ নানা কারণ উঠে এসেছিল। বন্‌ধে কাঙ্ক্ষিত সাড়া না-মেলার পিছনেও সংগঠনকেই দায়ী করছেন বিজেপির ওই অংশ। কর্মীদের একাংশের মতে, সংগঠনের জোর থাকলে এ দিন প্রতিটি মিছিলে দু-পাঁচশো লোক থাকত। সেটাই করা যায়নি।

    বিজেপির বোলপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সন্ন্যাসীচরণ মণ্ডলের দাবি, ‘‘বন্‌ধের বিরোধিতায় শাসকদল ও পুলিশ এককাট্টা ভাবে পথে নেমেছিল। ফলে অনেকেই দোকান বন্ধ রখার ঝঁকি নিতে পারেননি, ইচ্ছে থাকলেও। যেখানেই রাস্তা অবরোধ করা হয়েছে বা বন্‌ধের সমর্থনে রাস্তায় নামা হয়েছে, সেখানেই বলপ্রয়োগ করে তুলে দিয়েছে দলদাস পুলিশ।’’ সাংগঠনিক দুর্বলতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘খোঁজ নিতে হবে।’’

    দলের বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি বাবন দাসও সাংগঠনিক দুর্বলতার প্রসঙ্গ এড়িয়ে বলেন, ‘‘আসলে সঠিক ভাবে প্রচার করার সুযোগ হয়নি। জেলার যে-সব নেতা মঙ্গলবার কলকাতায় গিয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই ফিরতে পারেননি। তা না হলে ছবিটা অন্য হত।’’ জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘বিজেপির সাংগঠনিক দুর্বলতা বিষয় নয়। আসলে মানুষই বন্‌ধ চাননি। তাঁর চাননি, পুজোর মুখে এমন একটা কর্মনাশা দিন!’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)