একাদশ-দ্বাদশের পড়ুয়াদের ১০ হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে না, ট্যাব কিনতে অনুদানের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার নবান্নের
আনন্দবাজার | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
শুধু দ্বাদশ শ্রেণি নয়, এ বার রাজ্যের একাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদেরও ট্যাব কিনতে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছিল নবান্ন। প্রস্তুতিও ছিল। রাজ্যের সব ট্রেজারিতে টাকা পাঠানোর কাজও সেরে ফেলেছিল স্কুল শিক্ষা দফতর। ঠিক ছিল আগামী বৃহস্পতিবার শিক্ষক দিবসে পড়ুয়াদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো শুরু হবে। কিন্তু একেবারে শেষ মুহূর্তে সেই পরিকল্পনা বাতিল করেছে শিক্ষা দফতর। ইতিমধ্যেই সব ট্রেজারিকে সে ব্যাপারে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে কেন এই সিদ্ধান্ত বদল তা স্পষ্ট করা হয়নি সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে। শুধু জানানো হয়েছে, ‘প্রশাসনিক কারণে’ এই সিদ্ধান্ত। তবে আগামী দিনে সেই টাকা দেওয়া হবে কি না বা দিলে তা কবে সে ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত কিছু জানানো হয়নি। রাজ্যের উদ্ভূত পরিস্থিতির মধ্যে দুর্গা ভান্ডারের টাকা দেওয়া নিয়েও ধীরে চলো নীতি নিয়েছে নবান্ন। গত ২৩ জুলাই নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে পুজো অনুদান বৃদ্ধির ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিন দশেক আগেই ক্লাব-পুজো কমিটিগুলির জন্য দুর্গাপুজোর অনুদানের চূড়ান্ত প্রশাসনিক প্রস্তুতিতে ছাড়পত্র দিয়েছে নবান্ন। ৪৫ হাজারের কিছু বেশি ক্লাবের জন্য বরাদ্দও হয়েছে ৩৮৫ কোটি ৩৫ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। কিন্তু জেলা প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, অন্তত ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সেই টাকা না ছাড়ার ব্যাপারে প্রশাসনের সর্বোচ্চ মহলের নির্দেশ এসেছে। তার পরেও কবে ছাড়া হবে, তা এখনও নিশ্চিত নয়।
প্রসঙ্গত, করোনাকালের পরে ২০২১ সাল থেকে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই প্রকল্প শুরু করে। ‘তরুণের স্বপ্ন’ নামে এই প্রকল্পে সরকারি এবং সরকার পোষিত স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের এককালীন ১০ হাজার টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ফি বছরই এই টাকা দেওয়া হয়েছে। গত বাজেটে রাজ্য ঘোষণা করেছিল, চলতি বছর থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পাশাপাশি একাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদেরও ট্যাব বা স্মার্টফোন কিনতে টাকা দেওয়া হবে। এ জন্য অতিরিক্ত ৯০০ কোটি টাকা বরাদ্দও করেছিল অর্থ দফতর।
এর পরে গত জুলাই মাসেই রাজ্য সরকার এই প্রকল্পের টাকা যাতে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে দেওয়া যায় তার প্রস্তুতি শুরু করে। রাজ্যের সব জেলার ট্রেজ়ারির ৮৭টি অ্যাকাউন্টে মোট ১,৩৩৩ কোটি ৫৭ লাখ ৯০ হাজার টাকা খরচের নির্দেশ পাঠিয়ে দেওয়া হয়। প্রতিটি ট্রেজ়ারি থেকে সংশ্লিষ্ট এলাকার স্কুলের পড়ুয়াদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দেওয়ার কথা বলা হয়। এর আগে রাজ্যের সব স্কুল থেকেই একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য সংগ্রহ করতে বলে দিয়েছিল শিক্ষা দফতর। তবে সোমবার আচমকাই পড়ুয়াদের টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্তে বদল আসে। ‘অ্যালটমেন্ট অর্ডার’ বাতিল করে জানানো হয়, ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে এই টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্তও বাতিল।
দ্বাদশের সঙ্গে একাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদেরও ট্যাব কিনতে টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নবান্ন জানানোর পরেই রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় এটাকে পড়ুয়াদের ‘ঘুষ’ বলে দাবি করেছিলেন। এখন টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করার সিদ্ধান্ত জানার পরে জগন্নাথ বলেন, ‘‘আরজি কর-কাণ্ডের পরে স্কুল পডুয়ারাও আন্দোলনে। তাতে ভয় পেয়ে আন্দোলন ভাঙার জন্য ঘুষ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। আন্দোলনের আগুন নেভানো যাবে না, বুঝে গিয়েই মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধান্ত বদলেছেন। তরুণের স্বপ্ন আপাতত দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।’’ জগন্নাথের দাবি, এই টাকা দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকার সম্প্রতি বাজার থেকে ৩০০০ কোটি টাকা ঋণও নিয়েছে। তবে তৃণমূলের তরফে এর প্রতিবাদ করা হয়নি। দলের রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, ‘‘বিষয়টি আমার জানা নেই। বিস্তারিত খোঁজ না নিয়ে কিছু বলতে পারব না।’’