• India in UN: উইঘুরদের উপর ‘নিপীড়ন’, রাষ্ট্রসংঘে চিনের বিরুদ্ধে ভোট দিল না ভারত
    এই সময় | ০৮ অক্টোবর ২০২২
  • নয়াদিল্লি: কয়েকদিন আগেই রাষ্ট্রপুঞ্জে 'যুদ্ধবাজ' রাশিয়ার বিরুদ্ধে আনা নিন্দা প্রস্তাবে ভোট দেয়নি ভারত। সেই বিতর্কের রেশ কাটার আগেই আরও একবার 'নিরপেক্ষ' অবস্থান গ্রহণ ভারতের। এবার উইঘুর জনজাতির মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে চিন-বিরোধী খসড়া প্রস্তাবেও ভোটদানে বিরত থাকল নয়াদিল্লি। চিনের শিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুরদের পরিস্থিতি নিয়ে গত কয়েক বছর ধরেই একযোগে সুর চড়াচ্ছে বহু আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন। অভিযোগ শিক্ষা শিবির গড়ে তোলার নামে শিনজিয়াংয়ের প্রায় ১০ লক্ষ উইঘুরকে জোর করে বন্দি করে রেখেছে শি জিনপিং সরকার। রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার বিষয়ক প্রাক্তন হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচলেটের সাম্প্রতিক রিপোর্টেও উইঘুর-নির্যাতনের ছবি উঠে এসেছে। লাদাখে চিনা সেনার দফায় দফায় আগ্রাসন নিয়েও উদ্বিগ্ন নয়াদিল্লি। তাই আন্তর্জাতিক মঞ্চে সুযোগ পেয়েও ভারত কেন চিন-বিরোধী খসড়া প্রস্তাবে ভোটই দিল না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠল। বিরোধীরাও একযোগে চেপে ধরল নরেন্দ্র মোদী সরকারকে। কংগ্রেস নেতা মণীশ তিওয়ারির কটাক্ষ- 'চিনকে নিয়ে এত দ্বিধা কীসের? এত আত্মবিশ্বাসের অভাব যে, অন্য্যায়ের বিরুদ্ধেও মুখ খোলা যাবে না?' একসুরে সরব তৃণমূল মুখপাত্র সাকেত গোখলে, শিবসেনার প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী, এমআইএম-প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়াইসিরাও। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে শ্রীলঙ্কায় তামিল নির্যাতন নিয়েও রাষ্ট্রপুঞ্জে 'চুপ' থাকার অভিযোগ উঠেছে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার জেনিভায় রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার পরিষদে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে আনা প্রস্তাবে ভোটাভুটি থেকে বিরত থেকেছে ভারত। কূটনীতি বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, আঞ্চলিক ভারসাম্য রক্ষার খাতিরেই মৌখিক ভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও সরাসরি কলম্বোর বিরোধিতা করতে পারেনি নয়াদিল্লি। সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থনের ভিত্তিতে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে আনা প্রস্তাবটি গৃহীতও হয়।

    ভারত অবশ্য শুধু একা নয়, রাষ্ট্রপুঞ্জে চিন-বিরোধী খসড়া আলোচনা প্রস্তাবে ভোট দেয়নি ব্রাজিল, মেক্সিকো, ইউক্রেনের মতো মোট ১১টি দেশ। খসড়া প্রস্তাবটি উপস্থাপন করে কানাডা, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড, নরওয়ে, সুইডেন, ব্রিটেন ও আমেরিকা। সহ-প্রস্তাবক ছিল তুরস্ক-সহ আরও কয়েকটি দেশ। প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দেয় ১৭ টি দেশ। বিপক্ষে ভোট দেয় চিন-সহ ১৯টি দেশ। অর্থাৎ শেষমেশ প্রস্তাবটি গৃহীত হয়নি। একাংশ একে বেজিংয়ের স্বস্তি বললেও, আশাবাদী শোনাল 'হিউম্যান রাইটস ওয়াচ চায়না'র ডিরেক্টর সোফি রিচার্ডসনকে। তাঁর কথায়, 'উইঘুরদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হচ্ছে। এথনিক ক্লিনজ়িং চালাচ্ছে চিন। শেষমেশ আলোচনার প্রস্তাবটি রাষ্ট্রপুঞ্জে গৃহীত না হলেও, এই ভোটাভুটি থেকে স্পষ্ট চিনের ব্যাপক অধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে ইচ্ছুক রাষ্ট্রের সংখ্যা ক্রমে বাড়ছে।'

    কিন্তু ভারত কেন ভোট দিল না? এই প্রশ্ন তুলেই ওয়াইসির কটাক্ষ- 'চিনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ১৮ বার দেখা করেও মোদীজির মুখ খুলতে এত ভয় কীসের, কে জানে!' মণীশের টুইট, 'ভালোই তো। চিনা আগ্রাসন নিয়ে সংসদে আলোচনাও করতে দেবে না কেন্দ্র। আবার রাষ্ট্রপুঞ্জে চিনের বিরুদ্ধে ভোটও দেবে না ভারত।' কূটনীতিক মহলের একাংশের দাবি, রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবধিকার কাউন্সিলে এই বিষয়ে ভারতের ভোট না-দেওয়াটা তার পুরানো অবস্থানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণই। যখনই কোনও দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যার কথা আসে এবং 'দেশ-ভিত্তিক প্রস্তাব' আনা হয়, ভারত নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখতেই ভোট দেয় না। তবে ভারত যে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের ওপর জোর দেয় এবং শিনজিয়াং প্রদেশেক মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে ভারত উদ্বিগ্ন, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী। সাংবাদিক বৈঠকে তাঁকে ভারত-চিন সম্পর্ক নিয়েও প্রশ্ন করা হয়। যার উত্তরে অরিন্দম বলেন, 'এখনও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। তবে দুই দেশের তরফ থেকেই সমস্যা মিটিয়ে ফেলার জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনও অনেক কিছু করা বাকি রয়েছে।' অনেকের মতে, উইঘুর ইস্যুতে ভারতের ভোট না-দেওয়ার এটাও একটা কারণ। শিনজিয়াং নিয়ে সরব হলে, চিনও ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে সুর চড়াতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে একাংশের মধ্যে।
  • Link to this news (এই সময়)