• ‘দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে প্রভাব পড়বে’, ইউনূসের দাবি, ভারতে বসে হাসিনার বিবৃতি বন্ধ করতে হবে
    আনন্দবাজার | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ভারতের মাটিতে বসে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নিয়ে মন্তব্য করায় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ করলেন মুহাম্মদ ইউনূস। সেই সঙ্গে পিটিআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার মন্তব্য, ‘‘হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের সমস্তটাই ইসলামি রাজনৈতিক শক্তি, এমন ভাবনা ছাড়তে হবে ভারতকে।’’

    এর পরেই দ্বিপাক্ষিক সুসম্পর্ক বজায় রাখার জন্য নয়াদিল্লি এবং হাসিনার ‘করণীয়’ সম্পর্কেও বার্তা দিয়েছেন ইউনূস। তিনি বলেন, ‘‘যদি বাংলাদেশে প্রত্যর্পণ না করা পর্যন্ত ভারত তাঁকে (হাসিনা) রাখতে চায়, তবে প্রথম শর্ত হল তাঁকে চুপ থাকতে হবে।’’ এর পরেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘বাংলাদেশ যখন ভারতের সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্ককে মূল্য দেয়, তখন নয়াদিল্লিকে অবশ্যই চিরাচরিত ধারণার বাইরে বেরোতে হবে। আওয়ামী লীগ ছাড়া বাকি সকলে ইসলামপন্থী এবং শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশ আফগানিস্তানে পরিণত হবে, এমন ভাবনা ছাড়তে হবে।’’

    জনবিক্ষোভের জেরে গত ৫ অগস্ট প্রধানমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিয়ে বোন রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে বিমানে ঢাকা থেকে উত্তরপ্রদেশের হিন্দন বায়ুসেনা ঘাঁটিতে চলে এসেছিলেন হাসিনা। সেই থেকে তিনি ভারতে রয়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের তরফেও সরকারি ভাবে তাঁকে প্রত্যর্পণের দাবি জানানো হয়নি নয়াদিল্লির কাছে। বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানের হত্যার বর্ষপূর্তির আগে গত ১৩ অগস্ট প্রথম বিবৃতিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে বাংলাদেশে অস্থিরতা এবং ক্ষমতার পালাবদলের ঘটনার প্রসঙ্গ তুলেছিলেন হাসিনা। সাম্প্রতিক হিংসাকাণ্ডে জড়িতদের শাস্তির দাবিও তুলেছিলেন তিনি।

    ওই বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘‘গত জুলাই মাস থেকে আন্দোলনের নামে নাশকতা, অগ্নি, সন্ত্রাস ও সহিংসতার কারণে অনেকগুলি তাজা প্রাণ ঝরে যাচ্ছে। ছাত্র, শিক্ষক, পুলিশ, এমনকি অন্তঃসত্ত্বা, নারী পুলিশ, সাংবাদিক, সংস্কৃতিসেবী, কর্মজীবী মানুষ, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা কর্মী, পথচারী এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত যাঁরা সন্ত্রাসী আগ্রাসনের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন তাঁদের প্রতি শোকজ্ঞাপন করছি এবং তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।’’ ইউনূসের অভিযোগ, ভারতের মাটি থেকে ক্ষমতাচ্যুত হাসিনার এমন বিবৃতি নয়াদিল্লি-ঢাকা সম্পর্কের অবনতি ঘটাতে পারে। ইউনূসের মন্তব্য, ‘‘সে কারণেই আমরা হাসিনার বাংলাদেশে প্রত্যর্পণ চাইছি।’’

    প্রধানমন্ত্রী হিসাবে হাসিনার কূটনৈতিক পাসপোর্ট ছিল। ভারত-বাংলাদেশ সমঝোতা অনুযায়ী কূটনৈতিক (ডিপ্লোম্যাটিক) বা সরকারি (অফিশিয়াল) পাসপোর্ট থাকলে বাংলাদেশের কোনও নাগরিক অন্তত ৪৫ দিন কোনও ভিসা ছাড়াই ভারতে অবস্থান করতে পারেন। কিন্তু ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার হাসিনার কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করায় তাঁর ভারতে থাকা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। ঠিক কোন ‘ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাসে’ হাসিনা ভারতে রয়েছেন, সে বিষয়ে এখনও পর্যন্ত নরেন্দ্র মোদী সরকার কিছু জানায়নি। এর মধ্যে হাসিনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বিভিন্ন আদালতে কয়েকশো খুনের মামলা করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার তাঁর কূটনৈতিক পাসপোর্টও বাতিল করেছে।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)