সম্প্রতি রাতে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসার দায়িত্বে ছিলেন এক মহিলা চিকিৎসক। এক রোগীকে নিয়ে সেখানে হাজির পরিজনেরা। অভিযোগ, পরিজনদের মধ্যে কেউ কেউ ছিলেন মত্ত। তাঁরা দ্রুত রোগীকে ভর্তি করানোর জন্য চাপ দিতে থাকেন। একটু দেরি হওয়ায় শুরু হয় গালিগালাজ। মহিলা চিকিৎসক ভয় পেয়ে যান।
ঘটনাটি হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালের। এখানে রোগীর চাপ যথেষ্ট বেশি। উত্তর ২৪ পরগনা ছাড়াও নদিয়া জেলা থেকেও এখানে বহু রোগী নিয়মিত ভর্তি হন। অথচ, পর্যাপ্ত নিরাপত্তাকর্মীর অভাব রয়েছে বলে অভিযোগ। হাসপাতাল সূত্রের খবর, বর্তমানে এজেন্সি দ্বারা যুক্ত মাত্র ১৫ জন নিরাপত্তা কর্মী রয়েছেন এখানে। সিসি ক্যামেরাও অপর্যাপ্ত বলে অভিযোগ।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, রাতে জরুরি বিভাগে অনেক সময়ই রোগীর সঙ্গে অনেকে চলে আসেন। তখন পরিস্থিতি সামাল দিতে বেগ পেতে হয় চিকিৎসক স্বাস্থ্যকর্মীদের। এক মহিলা চিকিৎসকের কথায়, ‘‘জরুরি বিভাগের মূল গেটের সামনে কোনও নিরাপত্তাকর্মী থাকেন না। এ দিকে, রাতে কোনও দুর্ঘটনায় জখম রোগী হাসপাতালে আসলে তাঁর সঙ্গে প্রচুর লোকজন থাকেন। চিৎকার-চেঁচামেচি চলে। তখন জরুরি বিভাগে লোকজনের সংখ্যা কম থাকে। ফলে তাঁদের শান্ত করা যায় না। কাজ করতে রীতিমতো ভয় লাগে। একাধিক বার এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছি।’’ এক মহিলার মৃত্যুর ঘটনায় কর্তব্যরত মহিলা চিকিৎসককে রীতিমতো হুমকি দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। পুরুষ চিকিৎসকেরাও হেনস্থার সম্মুখীন হয়েছেন বলে অভিযোগ। একটি শিশুকে অন্যত্র রেফার করায় শিশুর পরিজনেরা এক পুরুষ চিকিৎসককে ধাক্কাধাক্কি, মারধর করেছিলেন। ঘটনার পরে তিনি বেশ কিছু দিন আতঙ্কে ছিলেন।
অভিযোগ রয়েছে হাসপাতালের পরিকাঠামো নিয়েও। মহিলা চিকিৎসকেরা জানান, তাঁদের আলাদা কোনও বিশ্রামকক্ষ নেই। হাসপাতালে নার্সদের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। ফলে তাঁদের একটানা ডিউটি করতে হয়। তাঁদেরও বিশ্রামের আলাদা ব্যবস্থা নেই। শুধু তাই নয়, মহিলা চিকিৎসক ও নার্সদের জন্য আলাদা শৌচাগার নেই বলেও অভিযোগ।
সম্প্রতি হাসপাতালের মধ্যেই জুয়ার আসর চলার একটি ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে (আনন্দবাজার ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি)। দশ সেকেন্ডের ওই ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে ৫০০ টাকার কয়েকটি নোট সামনে রেখে জুয়া খেলছে জনা ছয়েক যুবক। অভিযোগ, হাসপাতালের অক্সিজেন সিলিন্ডার রাখার ঘরে ওই আসর বসিয়েছিল অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের কয়েক জন। ঘটনার পরে পুলিশ তিন জনকে গ্রেফতার করে।
হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, পুলিশ শিবির রয়েছে। সেখানে অফিসার সহ পুলিশকর্মীরা থাকেন। তা ছাড়া, সিভিক ভলান্টিয়ার হাসপাতাল চত্বরে থাকেন। আর জি করের ঘটনার পরে পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। যদিও অভিযোগ, বেশি রাতে হাসপাতাল চত্বরে পুলিশের দেখা মেলে না। তা ছাড়া, পুলিশ ক্যাম্পটি হাসপাতাল চত্বরে হলেও তা মূল ভবন থেকে প্রায় ১০০ মিটার দূরে!
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, নিরাপত্তারক্ষী বাড়ানো, আরও সিসি ক্যামেরা লাগানো সহ নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্ত বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।