অচলাবস্থা কাটল না বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পড়ুয়াদের হস্টেল ছাড়তে বললেও বেশ কিছু পড়ুয়া কর্তৃপক্ষের নির্দেশকে কার্যত চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এখনও থেকে গিয়েছেন। শুধু তাই নয়, স্থানীয় তৃণমূলের এক প্রাক্তন ছাত্রনেতার মদতেই হস্টেলের কর্মীদের কার্যত হুমকি দিয়ে জোর করে রান্না ও অন্যান্য কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। এমনকী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গোটা বিষয়টি পুলিশ সুপারকে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন। কারণ এভাবে চলতে থাকলে ছাত্রাবাসে অশান্তির পরিবেশ তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কর্তাদের অনেকেই।
বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জগদীশ ও রমণ ছাত্রাবাসের ছাত্রদের মধ্যে বিবাদ নতুন নয়। এবছর প্রথম বর্ষের ছাত্ররা এই দুটির মধ্যে কোন হস্টেলে থাকবে তা নিয়ে দুই তরফে ফের বিবাদ বাধে। তার জেরে রমণে ঢুকে ভাঙচুর থেকে মারধরের ঘটনাও ঘটে। আর এর মধ্যে ঘোলাজলে মাছ ধরতে ময়দানে নেমে পড়েছেন হরিণঘাটা পুরসভার এক পুরপ্রতিনিধি তথা প্রাক্তন ছাত্রনেতা। অভিযোগ, তাঁর হস্তক্ষেপেই জগদীশ ছাত্রাবাসের পক্ষ নিয়ে আন্দোলনে নামে টিএমসিপি। একাধিক দিন গেট বন্ধ করে বিক্ষোভ দেখায় তারা। কর্তৃপক্ষ, প্রশাসন এমনকি স্থানীয় পুরপ্রতিনিধিরা চেষ্টা করেও সমস্যার সমাধান করতে পারেননি। প্রায় ৩৬ ঘণ্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাদের আটকে রাখে টিএমসিপি। তার জেরে উপাচার্য অসুস্থ হয়ে পড়ায় হাসপাতালে পর্যন্ত ভর্তি করতে হয়।
দুই ছাত্রাবাসের ছাত্ররাই নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে কার্যত অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। ক্লাস বন্ধের পাশাপাশি বাতিল হয়েছে একাধিক পরীক্ষা। দিন পাঁচেক আগে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীকে হস্টেল ছাড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই নির্দেশ নিয়ে টিএমসিপি আপত্তি জানায়। বেশিরভাগ পড়ুয়া হস্টেল ছাড়লেও এখনও অনেকে রয়ে গিয়েছেন। যাঁরা কোনও ভাবেই হস্টেল ছাড়তে নারাজ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, বাইরে থেকে একটি রাজনৈতিক দলের এক নেতা গোটা বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করে পরিস্থিতি জটিল করে তুলেছে। মূলত ওই নেতাই কর্মীদের হুমকি দিয়ে হস্টেল চালু রাখতে বাধ্য করেছে। এমনকি কর্তাদেরকেও হুমকি দিচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, সমস্ত দিক বিচার করে পড়ুয়াদের নিরাপত্তার স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। এমনকি নোটিস জারি করে হস্টেলও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তার পরেও কোনও পড়ুয়া যদি হস্টেলে থাকে এবং তার জন্য যদি কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে তবে তার দায় কর্তৃপক্ষ নেবে না। ওই নেতাকেই সেই দায় নিতে হবে।
পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হচ্ছে বুঝতে পেরে রবিবার উপাচার্য গৌতম সাহা রানাঘাট পুলিশ জেলার সুপারকে মেল করে গোটা বিষয়টি জানিয়েছেন বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি। উপাচার্য বলেন, “এক প্রকার জোর করে হস্টেলের ভিতর কিছু পড়ুয়াকে রেখে দেওয়া হয়েছে। কর্মীদেরও রীতিমত হুমকি দিয়ে হস্টেল খুলে রাখা হয়েছে। বাইরের এক নেতার হস্তক্ষেপে ও ইন্ধনে এমনটা ঘটছে। আমি পুলিশ সুপারকে সব জানিয়েছি।”
রানাঘাট পুলিশ জেলার সুপার কুমার সানি রাজ বলেন, “এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সেখানে কোনও আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়নি যে আমরা হস্তক্ষেপ করব। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেই তা সামাল দিতে হবে। তবে বাইরে পুলিশ রয়েছে। প্রয়োজনে পদক্ষেপ করা হবে।”
কার্যত তাদের দিকে অভিযোদের আঙুল ওঠায় তৃণমূলের রানাঘাট সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের দল কখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না। কেউ যদি সেটা করে থাকে তাহলে ঠিক করছে না। এই বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে পদক্ষেপ করা হবে।”