রাজ্য শ্রম দফতরের ডাকা দার্জিলিং পাহাড়ের চা বাগানের দ্বিতীয় বোনাস বৈঠকও ভেস্তে গেল। মঙ্গলবার টানা পাঁচ ঘণ্টার বৈঠকে মালিকপক্ষ সর্বোচ্চ ১২ শতাংশ বোনাস দিতে রাজি হলেও শ্রমিক প্রতিনিধিরা ২০ শতাংশে হারের দাবিতেই অনড় থাকেন। তাতে দু’পক্ষের টানাপড়েনে আর বৈঠক এগোয়নি। আবার নতুন করে বৈঠক ডাকা হতে পারে বলে খবর।
শ্রম দফতর সূত্রের খবর, চলতি সপ্তাহেই শিলিগুড়ি আসার কথা রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটকের। তিনি নবগঠিত রাজ্যের চা উপদেষ্টা কমিটির মাথায় আছেন। এই কমিটির বৈঠকের আগে, পাহাড়ে নিয়ে কোনও ঘোষণা হয় কি না, সেটাই এখন দেখার।
এ দিন বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার পরে, পাহাড়ের চা শ্রমিক সংগঠনগুলি জানিয়ে দিয়েছে, রোজ বাগানে বাগানে ‘গেট মিটিং’ চলবে। সেই সঙ্গে কোনও বাগান থেকে তৈরি চা বাইরে যাবে না। ২৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে চুক্তি না হলে দার্জিলিং শহরে মিছিল, সমাবেশ করে আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।
এর মধ্যে গত বৈঠকের মতোই শিলিগুড়ির শ্রম দফতরের শ্রমিক ভবনের বাইরে পাহাড়ের শ্রমিকদের বড় অংশ ধর্না, বিক্ষোভ চালিয়ে যান, যাঁর নেতৃত্বে ছিলেন পাহাড়ের শাসক দল প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার নেতৃত্ব। দলের দার্জিলিং মহকুমার সভাপতি তথা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অলককান্তমণি থুলুংও উপস্থিত ছিলেন। জিটিএ প্রধান অনীত থাপাও বলেছেন, ‘‘চা বাগানের শ্রমিকদের ২০ শতাংশ বোনাসের দাবি যুক্তিযোগ্য। মালিক পক্ষের বিষয়টি ভাবা দরকার।’’
দার্জিলিং পাহাড়ের চা বাগানগুলিতে ২০২৩ সালে ১৯ শতাংশ হারে বোনাস হয়েছিল। যদি আলোচনায় জট না কাটায় শ্রম দফতরের তরফে তা ঘোষণা করা হয়। এ বার মালিক পক্ষ প্রথমে ৮.৩৩ শতাংশে আটকে যান। শ্রম দফতরের প্রথম বৈঠকে মালিক পক্ষ ৯.৫ শতাংশ অবধি রাজি হন। এ দিন তা বেড়ে ১২ শতাংশ হয়েছে। তার বেশি মালিক পক্ষ উঠতে চাইছেন না। যদিও সমতলের তরাই এবং ডুয়ার্সে এবার ১৬ শতাংশ হারে বোনাস হয়েছে। সে চাপও মালিক পক্ষ তো বটেই, ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের মধ্যস্থতাকারী শ্রম দফতরের উপরে তৈরি হয়েছে। চা শ্রমিক সংগঠনের যৌথ মঞ্চের নেতা তথা প্রাক্তন সাংসদ সমন পাঠক বলেন, ‘‘আগামীতে মালিকেরা কী চান, তা তাঁদের ঠিক করতে হবে।’’
পাহাড়ের আটটি শ্রমিক সংগঠন ইতিমধ্যে পার্বত্য শ্রমিক সংগঠন সমন্বয় মঞ্চ তৈরি করেছে। তাতে সিপিএম, প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা, জিএনএলএফ, তৃণমূলের মতো সব সংগঠন রয়েছে। শ্রমিকদের প্রশ্নে সকলে এক মঞ্চে এসে লড়াই শুরু করেছে। রাতেই শ্রমিক ভবনের সামনে বিক্ষোভ চলে। প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার চা শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি জেভি লেপচা বলেন, ‘‘২০ শতাংশ হারে বোনাসের দাবি থেকে আমরা সরছি না। শ্রম দফতরের বাইরে আন্দোলন চলবে।’’