২০২৩ সালের অগস্ট। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলের বারান্দার নীচ থেকে উদ্ধার করা হয় বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রকে। পরে হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। সেই মৃত্যু ঘিরে তোলপাড় পড়ে গিয়েছিল রাজ্যে। অভিযোগ, ওই ছাত্র হস্টেলের মধ্যে র্যাগিংয়ের শিকার হয়েছিলেন। যার ফলশ্রুতিতেই ওই মৃত্যু। যাদবপুরের সেই ঘটনা নিয়ে তোলপাড়ের মধ্যে উঠে এসেছিল একটি নাম— ‘আলু’, ওরফে অরিত্র মজুমদার। র্যাগিং-কাণ্ডের বিতর্কে জড়িয়েছিলেন তিনিও। তাঁকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। তবে অভিযুক্ত করা হয়নি তাঁকে। সেই ‘আলু’কে বুধবার দেখা গেল জুনিয়র ডাক্তারদের মিছিলে। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পা মিলিয়ে কলেজ স্কোয়্যার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত হাঁটলেন তিনি।
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে এক মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের প্রতিবাদে বুধবারের এই মিছিল থেকে আওয়াজ উঠেছে বিভিন্ন হাসপাতালে প্রচলিত ‘থ্রেট কালচারের’ বিরুদ্ধেও। যাদবপুরের অরিত্রও বিতর্কে জড়িয়েছিলেন সেই অভিযোগেই। বিভিন্ন মহলে তাঁর বিরুদ্ধে ভয় দেখানোর অভিযোগ উঠেছিল। মূল ঘটনার পর তিনি কলকাতা ছেড়েছিলেন। ফলে ছাত্রমৃত্যুর ঘটনার সঙ্গে তাঁর জড়িত থাকার জল্পনা আরও জোরদার হয়। যাদবপুরের ‘থ্রেট কালচারের’ সেই ‘বিতর্কিত’ অরিত্র কেন এলেন ‘থ্রেট কালচারের’ বিরুদ্ধে ডাক্তারদের মিছিলে?
এ প্রসঙ্গে অবশ্য সে ভাবে মুখ খুলতে চাননি অরিত্র। বলেন, ‘‘যাদবপুরের ঘটনার পর আমি অনেক মিছিলেই হেঁটেছি। এখানেও এসেছি। এই মিছিল নিয়ে আপাতত কিছু বলতে চাই না।’’
অরিত্র যে মিছিলে যোগ দিয়েছেন, তা জানেন না আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের অনেকেই। সে খবর শুনে এক জন অবাক হয়ে বলে উঠলেন, ‘‘কে? কোথায় হাঁটছেন? এ বিষয়ে কিছু জানি না তো!’’ তার পর তিনি বলেন, ‘‘বহু সাধারণ মানুষ আমাদের এই মিছিলে যোগ দিয়েছেন। সকলের পরিচয় জানা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।’’
প্রসঙ্গত, আলু ‘বিতর্কিত’ হলেও কিন্তু ‘অভিযুক্ত’ নন। পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ আনেনি। অরিত্রের ঘনিষ্ঠদের দাবি, ওই ঘটনায় তাঁকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ ভাবে জড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। ঘটনার সময় তাঁর নাম সমাজমাধ্যমে উল্লেখও করা হয়েছিল তাঁকে হেনস্থা করার জন্যই। ওই সময়ে তাঁকে ‘নিখোঁজ’ বলে দাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অরিত্র তখন ছিলেন কাশ্মীরে। তিনি সকলকে বলেই বেড়াতে গিয়েছিলেন। কাশ্মীরে নেটওয়ার্ক সমস্যার জন্য তাঁর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না। ফলে তাঁর ‘নিখোঁজ’ হওয়ার তত্ত্বও কোনও কোনও মহল থেকে জোরের সঙ্গে রটিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কলকাতায় ফেরার পরে তিনি পুলিশি তদন্তের মুখোমুখি হন। কিন্তু ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় তাঁকে অভিযুক্ত করা হয়নি।
যাদবপুরের ঘটনার পর বছর ঘুরে গিয়েছে। শোক এখনও গ্রাস করে আছে নদিয়ার সেই পরিবারকে। ডাক্তারদের মিছিলে অরিত্রের হাঁটা প্রসঙ্গে মৃত ছাত্রের বাবা বলেন, ‘‘সে সময় আমি বিভিন্ন জায়গা থেকে এই ছেলেটির নাম শুনেছিলাম। তবে ব্যক্তিগত ভাবে ওঁকে আমি চিনি না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও অভ্যন্তরীণ তদন্ত করেছেন। কেউ আমাকে কিছু জানাননি। কত লোক যে এমন মুখোশ পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে!’’
যাদবপুরের ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি গড়েছিল। সেই কমিটিও অরিত্রকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। পুলিশও তাঁকে কয়েক বার ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে।