রাজনৈতিক মহলের মতে, ট্রাম্পের জয়ে আমেরিকার ভিতরে তো বটেই, আমেরিকার মিত্র দেশগুলির উদারতান্ত্রিক অংশ ধাক্কা খেয়েছে। রাহুল গান্ধী দ্রুত ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু কংগ্রেস, জেডিইউ, সমাজবাদী পার্টির সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটরা কিছুটা থমকে গিয়েছেন। মানবাধিকার, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা, ধর্মীয় সহিষ্ণুতার মতো বিষয়ে জো বাইডেন সরকারের সমর্থন পেয়েছিল ভারতের রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনগুলির বড় অংশ। বাইডেন সরকার তাদের আমন্ত্রণ জানাত নানা সম্মেলনে, মত বিনিময় হত। সে সব বন্ধ হবে, কারণ, এই নিয়ে ট্রাম্পের মাথাব্যথাই নেই।
আমেরিকান কংগ্রেসের মানবাধিকার সংক্রান্ত রিপোর্টে তুলোধোনা করা হয়েছে সংখ্যালঘু নিপীড়ন, জাতিবৈষম্য, মণিপুরের হিংসার মতো ঘটনাকে। সংসদের ভিতরে এবং বাইরে যাকে বারবার অস্ত্র করেছে কংগ্রেস এবং বিরোধী দলগুলি। প্রতি মাসে হোয়াইট হাউসে বাইডেন সরকারের বিদেশ দফতরের মুখপাত্র মোদী সরকারের সমালোচনা করতেন উপরোক্ত বিষয়গুলি নিয়ে। বিজেপি শীর্ষ শিবিরের অভিযোগ, এমন ভাবে প্রশ্ন সাজানো হত, যাতে মোদী সরকারের মানবাধিকার রক্ষা, বাক্-স্বাধীনতা সংক্রান্ত ভূমিকার সমালোচনা করা যায়। ট্রাম্প আসার পর এই অভিযোগমালা পুরোপুরি বন্ধ না হলেও অনেকটাই কমবে বলে মনে করছে মোদী শিবির। মোদীর ‘বিশ্বগুরু’ ভাবমূর্তি তৈরির চেষ্টাকে বারবার ধাক্কা দিত আমেরিকার ওই খোঁচা। আপাতত এ ক্ষেত্রে হাঁফ ছাড়তে পারবেন মোদী।
দীপাবলির দিনই বাংলাদেশের নাম করে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর অত্যাচারের নিন্দা করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর এই অবস্থান হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি ও তার নেতা মোদীর হাতকে শক্ত করেছে বলেই মনে করা হচ্ছে। অগস্ট মাসে হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই সে দেশে হিন্দুরা নিপীড়িত হচ্ছেন বলে স্বর চড়াচ্ছে ভারত। ট্রাম্প ফেরায় ভারতের নিজস্ব বাংলাদেশ নীতি বলিষ্ঠ হবে, আবার প্রতিবেশী রাষ্ট্রের হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য তৈরি হওয়া আবেগ এবং আন্তর্জাতিক জনমতকে নিজের দেশে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণেও কাজে লাগাবে বিজেপি সরকার। সাম্প্রতিক লোকসভা ভোটে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় হতাশ দেখাচ্ছিল মোদীর দলকে। কিন্তু হরিয়ানা নির্বাচনে অপ্রত্যাশিত জয়ের পর তাদের উৎসাহ তুঙ্গে। মহারাষ্ট্র এবং ঝাড়খণ্ডেও তাদের ভাল ফল হবে বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে অভ্যন্তরীণ সমীক্ষায়। তার মধ্যে আমেরিকার মতো দেশের প্রেসিডেন্টের তরফ থেকে যদি ধারাবাহিক প্রশংসার বন্যা বয়, তা হলে দৃশ্যায়নের রাজনীতিতে বিশ্বাসী মোদীর জন্য তা সুবিধাজনক।
চিনের সঙ্গে দরকষাকষির প্রশ্নে আপাতত সাফল্য পেয়েছে নয়াদিল্লি। দীর্ঘ সাড়ে চার বছরের দৌত্যের পর পূর্ব লাদাখ থেকে হঠানো গিয়েছে চিনা সেনা। নিজের ভূখণ্ডে টহলদারির অধিকার ফিরে পেয়েছে ভারত। সংসদের আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনে বিষয়টি নিয়ে বড় মুখ করে বলতে দেখা যাবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের। আর সেই সময়ে চিন-বিরোধী শক্তি হোয়াইট হাউসে এলে, বেজিংয়ের সঙ্গে দরকষাকষি করতে আরও সুবিধা হবে। কূটনৈতিক মহলের আশা, আমেরিকাকে নিয়ে শি জিনপিংকে এত ব্যস্ত থাকতে হবে ভারতের সঙ্গে ফের সংঘাতের দরজা খোলার অবসর কিছুটা কম হতে পারে।